অনেক মানুষই নতুন দল এনসিপি নিয়ে আশাজাগানিয়া স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই জনগণের একটা বড় অংশ দলটির প্রতি সেই আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। পদে পদে অনভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছে তারা, বিভিন্ন ফোরামে এমনভাবে নিজেদের প্রকাশ করেছে, যাতে মনে হয়েছে অপরিপক্বতা কাটিয়ে না উঠলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা দাঁড়াতে পারবে না।
জাহীদ রেজা নূর
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না, সে প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এরই মধ্যে নব্য রাজনীতিবিদদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারপ্রধানের মদদপুষ্ট রাজনৈতিক দলের এক নারী সতীর্থকে এমনভাবে অপমান করেছেন সেই দলেরই তুখোড় এক নেতা, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, ফলে তা নিয়ে কথা বলা নিরর্থক।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফর নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। সামগ্রিকভাবে লন্ডন সফর ব্যর্থ বলা হলেও অনেকেই অধ্যাপক ইউনূসকে রাজনীতির মাঠের পাকা খেলোয়াড় বলছেন, অনেকে বলছেন, লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে তারেক রহমান বিএনপিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। যে শর্তগুলো দেখা গেছে যৌথ বিবৃতিতে, সেগুলোর যেকোনো একটি পূরণ না হলেই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব। অনেকেই জুলাই সনদে দেশের বড় ধরনের পরিবর্তনের আশা বা আশঙ্কা করছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্যে সংবিধান বিষয়েও মারাত্মক প্রশ্ন রয়েছে। বাতিল বা বিশাল পরিবর্তন করা হতে পারে সংবিধান। কিন্তু মার্কিন নাগরিক আলী রীয়াজের সংবিধানবিষয়ক ভাবনা দেশের আপামর জনতা মেনে নেবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনীতি এখনো কোনো নিয়মতান্ত্রিক পথ মেনে চলছে না। রাজনীতি যদি কোনো ষড়যন্ত্র বা ধূর্ততার মধ্যে চলে যায়, তাহলে কোনো ধরনের সংস্কারেও দেশ কোনো সুন্দর ভবিষ্যতের ঠিকানা দেখতে পাবে না। যে তিমিরে ছিল দেশ, সে তিমিরেই থেকে যাবে।
আগের যুগে বিজ্ঞজনেরা রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ করে বলতেন, ‘দেয়াললিখন পড়ুন।’ সে সময় সত্যিই দেয়ালেই ভেসে উঠত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণী। এখন সে জায়গা নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ডিজিটাল যুগে প্রতিটি মানুষই তার মনের কথা লিখে ফেলতে পারে এই মাধ্যমে। ফলে সেখানে চোখ বুলালেই মানুষ কী ভাবছে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। ইউটিউবও এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকজন ইউটিউবারের সাহসী উচ্চারণ নিয়েও সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। সরকারসহ নানা দলের করা অন্যায়ের সমালোচনা করছেন তাঁরা দেশে বসেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হৃৎস্পন্দন ঠিকভাবে না শুনলে রাজনীতির মাঠে যে কেউ পা হড়কে পড়তে পারেন।
২. আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। রাতের অন্ধকারে ভোট হয়েছে। বেছে নেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ ছিল না। বর্তমানকালেও যাঁরা নির্বাচনের মাঠে অবতীর্ণ হচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কেও এমন কোনো আশার বাণী শোনা যায়নি যে, স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ মুহূর্তে বড় দল হিসেবে বিএনপিকেই আসন্ন নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগী বলে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিএনপির বিভিন্ন নেতা-কর্মী যেভাবে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, তাতে তাঁরা নির্বাচিত হলে তাঁদের মাধ্যমেই স্বৈরাচার ফিরে আসবে কি না, সে শঙ্কাও অমূলক নয়। এমনও শোনা যাচ্ছে, বিএনপির আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের সঙ্গে আপস করে নিয়েছেন। কথাটায় সত্যতা আছে কি না, তা নিয়েও ভাবছে অনেকে।
জামায়াতে ইসলামী দলটিকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাদের ঘোলাটে অবস্থানের কারণে সাধারণ জনগণ কখনোই তাদের সমর্থন করেনি। আলাদাভাবে দল হিসেবে নির্বাচন করলে তাদের প্রাপ্ত ভোট খুবই হাস্যকর একটি সংখ্যা। বিএনপির সঙ্গে জোট করেই তারা সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। এবার জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টির মধ্যে সে রকম জোট হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাতে কি তাদের ভোট বাড়বে? আওয়ামী লীগকে যদি নির্বাচন করতে দেওয়া না হয়, তাহলে এই তিন দলের জোট কি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভোট পাবে? এ নিয়েও আড্ডায় আলোচনা হচ্ছে।
অনেক মানুষই নতুন দল এনসিপি নিয়ে আশাজাগানিয়া স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই জনগণের একটা বড় অংশ দলটির প্রতি সেই আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। পদে পদে অনভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছে তারা, বিভিন্ন ফোরামে এমনভাবে নিজেদের প্রকাশ করেছে, যাতে মনে হয়েছে অপরিপক্বতা কাটিয়ে না উঠলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা দাঁড়াতে পারবে না। এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে। অন্তত দুজন এনসিপি নেতা মোটর শোভাযাত্রা করে সমালোচিত হয়েছেন। এদের একজন নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে যা বলেছেন, তা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। তাঁর কথায় মনে হয়েছে, রাজনীতির মাঠটা আসলে যেই লাউ, সেই কদু। এরই মধ্যে তরুণদের এই দলটিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে যে লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সামগ্রিক কার্যাবলির বিবেচনায় এরা কত দূর এগোতে পারবে, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাদের শাসনক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য এমন সব কাণ্ড ঘটিয়েছিল, যার কারণে কোটাবিরোধী আন্দোলন এক দফা দাবিতে রূপান্তরিত হয়েছিল অনায়াসে। ফলে আওয়ামী লীগকে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া গেছে। অথচ অনেকেই এরই মধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন, যে সম্ভাবনা নিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী একটি আবহ তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তার সলিল সমাধি ঘটেছে। যাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছিল মানুষ, তারাই বিভিন্ন গর্তে পা হড়কে পড়ছে। এ অবস্থায় সংস্কার, নির্বাচন কোনো কিছুতেই ভরসা রাখা যাচ্ছে না। যাঁদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা কতটা দক্ষ কিংবা সৎ, তা নিয়েও কথা উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ সত্য হলো, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কিছু বললে যত মানুষ তা দেখে, তার চেয়ে বেশি দেখে সরকার বা এনসিপির সমালোচনা হলে। সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে তাই সংশয় কাটে না জনগণের।
৩. গুরুগম্ভীর কথা বাদ দিয়ে এ রকম এক পরিস্থিতিতে কেমন নির্বাচন হবে, কাকে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে কিছু নির্দোষ রসিকতা করা যেতেই পারে। এই রসিকতাগুলোর কোনোটাই বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নয়। কিন্তু রসিকতা যদি ধ্রুপদি হয়ে ওঠে, তখন তা পৃথিবীর যেকোনো পরিস্থিতিতেই কাজে লাগানো যায়।
আগেও বলেছি, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বদ্ধ পরিবেশে একের পর এক রসিকতার জন্ম হয়েছে। নিজেদের এ রকমভাবে ব্যঙ্গ করা জাতি বিরল। তাদেরই কিছু কৌতুক এখানে তুলে ধরছি। যিনি পড়বেন, তিনি সেগুলো আমাদের দেশের আঙ্গিকে মিলিয়ে নিতে পারেন। আর যদি মেলাতে না পারেন, তাহলে বিদেশি কৌতুক হিসেবেই উপভোগ করুন।
নির্বাচনকে খাবার টেবিল হিসেবে গ্রহণ করুন। আপনাকে যে মেনু দেওয়া হয়েছে, তার খাবারগুলো খুব খারাপ হলে আপনি তা প্রত্যাখ্যান করে নিজের মতো করে নতুন মেনু পছন্দ করুন।
একই কথা একটু অন্যভাবে বলা হোক। আপনাকে দুটি বিকল্প থেকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। দুই জোড়া মোজা রাখা হয়েছে সামনে। এক জোড়া মোজার একটিতে রয়েছে ফুটো, অন্য জোড়াটির একটি মোজা লাল, একটি নীল। এর মধ্যে থেকে কোনটা বেছে নিলে ভালো হয়?
নির্বাচন ঘোড়দৌড়ের মতো। কিছু ঘোড়া আছে, যেগুলোর পক্ষে বাজি ধরার চেয়ে সেটাকে চোখে দেখা বেশি আকর্ষণীয়।—এই ঘটনা কি আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? যদি প্রযোজ্য হয়, তাহলে কেন প্রযোজ্য, সে কথা ভেবে মাথা ঘামাতে থাকুন।
এর পরের কৌতুকটা কেন কৌতুক, তা প্রথমে ধরতে পারিনি। কিন্তু পরে বুঝতে পারায় হাসি আর থামে না আমার: ‘গণতন্ত্র হলো একটি সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং “গণতন্ত্রী”রা নির্বাচনে জয়লাভ করে।’
নির্বাচনের আগে সবাই প্রতিশ্রুতি দেন: ‘আমি শেষ করে দেব দুর্নীতি, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করব, বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি করব।’ নির্বাচন হয়ে গেলে ‘আমি শেষ করে দেব’ অর্থাৎ কেবল প্রথম চারটি শব্দই সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
ভোটারকে অবিবাহিত মানুষের সঙ্গে তুলনা করা যাক। অবিবাহিত মানুষের জন্য পোশাক নির্বাচন করা খুব কঠিন। কোন জামাটা গায়ে দেবে সে? যেটা ধোয়া হয়নি নাকি যেটা আয়রন করা হয়নি?
শেষ করি একটি মর্মান্তিক রসিকতা দিয়ে। যারা রাজনীতিতে আগ্রহী নয়, তারা মুরগির মতো। তারা তাদের মালিকের জন্য ডিম পাড়ে, আর বিনিময়ে মালিক তাদের খাওয়ায়। যারা রাজনীতিতে আগ্রহী, তারা নির্বাচনে তাদের নিজস্ব মালিককে বেছে নেয়, যে মালিক নির্বাচিত হয়ে তাদেরকেই খেয়ে ফেলে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না, সে প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এরই মধ্যে নব্য রাজনীতিবিদদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারপ্রধানের মদদপুষ্ট রাজনৈতিক দলের এক নারী সতীর্থকে এমনভাবে অপমান করেছেন সেই দলেরই তুখোড় এক নেতা, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, ফলে তা নিয়ে কথা বলা নিরর্থক।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফর নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। সামগ্রিকভাবে লন্ডন সফর ব্যর্থ বলা হলেও অনেকেই অধ্যাপক ইউনূসকে রাজনীতির মাঠের পাকা খেলোয়াড় বলছেন, অনেকে বলছেন, লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে তারেক রহমান বিএনপিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। যে শর্তগুলো দেখা গেছে যৌথ বিবৃতিতে, সেগুলোর যেকোনো একটি পূরণ না হলেই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব। অনেকেই জুলাই সনদে দেশের বড় ধরনের পরিবর্তনের আশা বা আশঙ্কা করছেন। সেই পরিবর্তনের মধ্যে সংবিধান বিষয়েও মারাত্মক প্রশ্ন রয়েছে। বাতিল বা বিশাল পরিবর্তন করা হতে পারে সংবিধান। কিন্তু মার্কিন নাগরিক আলী রীয়াজের সংবিধানবিষয়ক ভাবনা দেশের আপামর জনতা মেনে নেবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনীতি এখনো কোনো নিয়মতান্ত্রিক পথ মেনে চলছে না। রাজনীতি যদি কোনো ষড়যন্ত্র বা ধূর্ততার মধ্যে চলে যায়, তাহলে কোনো ধরনের সংস্কারেও দেশ কোনো সুন্দর ভবিষ্যতের ঠিকানা দেখতে পাবে না। যে তিমিরে ছিল দেশ, সে তিমিরেই থেকে যাবে।
আগের যুগে বিজ্ঞজনেরা রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ করে বলতেন, ‘দেয়াললিখন পড়ুন।’ সে সময় সত্যিই দেয়ালেই ভেসে উঠত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণী। এখন সে জায়গা নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ডিজিটাল যুগে প্রতিটি মানুষই তার মনের কথা লিখে ফেলতে পারে এই মাধ্যমে। ফলে সেখানে চোখ বুলালেই মানুষ কী ভাবছে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। ইউটিউবও এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকজন ইউটিউবারের সাহসী উচ্চারণ নিয়েও সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। সরকারসহ নানা দলের করা অন্যায়ের সমালোচনা করছেন তাঁরা দেশে বসেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হৃৎস্পন্দন ঠিকভাবে না শুনলে রাজনীতির মাঠে যে কেউ পা হড়কে পড়তে পারেন।
২. আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। রাতের অন্ধকারে ভোট হয়েছে। বেছে নেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ ছিল না। বর্তমানকালেও যাঁরা নির্বাচনের মাঠে অবতীর্ণ হচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কেও এমন কোনো আশার বাণী শোনা যায়নি যে, স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ মুহূর্তে বড় দল হিসেবে বিএনপিকেই আসন্ন নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগী বলে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিএনপির বিভিন্ন নেতা-কর্মী যেভাবে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, তাতে তাঁরা নির্বাচিত হলে তাঁদের মাধ্যমেই স্বৈরাচার ফিরে আসবে কি না, সে শঙ্কাও অমূলক নয়। এমনও শোনা যাচ্ছে, বিএনপির আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের সঙ্গে আপস করে নিয়েছেন। কথাটায় সত্যতা আছে কি না, তা নিয়েও ভাবছে অনেকে।
জামায়াতে ইসলামী দলটিকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাদের ঘোলাটে অবস্থানের কারণে সাধারণ জনগণ কখনোই তাদের সমর্থন করেনি। আলাদাভাবে দল হিসেবে নির্বাচন করলে তাদের প্রাপ্ত ভোট খুবই হাস্যকর একটি সংখ্যা। বিএনপির সঙ্গে জোট করেই তারা সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। এবার জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টির মধ্যে সে রকম জোট হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। তাতে কি তাদের ভোট বাড়বে? আওয়ামী লীগকে যদি নির্বাচন করতে দেওয়া না হয়, তাহলে এই তিন দলের জোট কি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভোট পাবে? এ নিয়েও আড্ডায় আলোচনা হচ্ছে।
অনেক মানুষই নতুন দল এনসিপি নিয়ে আশাজাগানিয়া স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই জনগণের একটা বড় অংশ দলটির প্রতি সেই আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। পদে পদে অনভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছে তারা, বিভিন্ন ফোরামে এমনভাবে নিজেদের প্রকাশ করেছে, যাতে মনে হয়েছে অপরিপক্বতা কাটিয়ে না উঠলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা দাঁড়াতে পারবে না। এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে। অন্তত দুজন এনসিপি নেতা মোটর শোভাযাত্রা করে সমালোচিত হয়েছেন। এদের একজন নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে যা বলেছেন, তা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। তাঁর কথায় মনে হয়েছে, রাজনীতির মাঠটা আসলে যেই লাউ, সেই কদু। এরই মধ্যে তরুণদের এই দলটিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে যে লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সামগ্রিক কার্যাবলির বিবেচনায় এরা কত দূর এগোতে পারবে, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাদের শাসনক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য এমন সব কাণ্ড ঘটিয়েছিল, যার কারণে কোটাবিরোধী আন্দোলন এক দফা দাবিতে রূপান্তরিত হয়েছিল অনায়াসে। ফলে আওয়ামী লীগকে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া গেছে। অথচ অনেকেই এরই মধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন, যে সম্ভাবনা নিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী একটি আবহ তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তার সলিল সমাধি ঘটেছে। যাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছিল মানুষ, তারাই বিভিন্ন গর্তে পা হড়কে পড়ছে। এ অবস্থায় সংস্কার, নির্বাচন কোনো কিছুতেই ভরসা রাখা যাচ্ছে না। যাঁদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা কতটা দক্ষ কিংবা সৎ, তা নিয়েও কথা উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ সত্য হলো, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কিছু বললে যত মানুষ তা দেখে, তার চেয়ে বেশি দেখে সরকার বা এনসিপির সমালোচনা হলে। সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে তাই সংশয় কাটে না জনগণের।
৩. গুরুগম্ভীর কথা বাদ দিয়ে এ রকম এক পরিস্থিতিতে কেমন নির্বাচন হবে, কাকে বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে কিছু নির্দোষ রসিকতা করা যেতেই পারে। এই রসিকতাগুলোর কোনোটাই বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নয়। কিন্তু রসিকতা যদি ধ্রুপদি হয়ে ওঠে, তখন তা পৃথিবীর যেকোনো পরিস্থিতিতেই কাজে লাগানো যায়।
আগেও বলেছি, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বদ্ধ পরিবেশে একের পর এক রসিকতার জন্ম হয়েছে। নিজেদের এ রকমভাবে ব্যঙ্গ করা জাতি বিরল। তাদেরই কিছু কৌতুক এখানে তুলে ধরছি। যিনি পড়বেন, তিনি সেগুলো আমাদের দেশের আঙ্গিকে মিলিয়ে নিতে পারেন। আর যদি মেলাতে না পারেন, তাহলে বিদেশি কৌতুক হিসেবেই উপভোগ করুন।
নির্বাচনকে খাবার টেবিল হিসেবে গ্রহণ করুন। আপনাকে যে মেনু দেওয়া হয়েছে, তার খাবারগুলো খুব খারাপ হলে আপনি তা প্রত্যাখ্যান করে নিজের মতো করে নতুন মেনু পছন্দ করুন।
একই কথা একটু অন্যভাবে বলা হোক। আপনাকে দুটি বিকল্প থেকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। দুই জোড়া মোজা রাখা হয়েছে সামনে। এক জোড়া মোজার একটিতে রয়েছে ফুটো, অন্য জোড়াটির একটি মোজা লাল, একটি নীল। এর মধ্যে থেকে কোনটা বেছে নিলে ভালো হয়?
নির্বাচন ঘোড়দৌড়ের মতো। কিছু ঘোড়া আছে, যেগুলোর পক্ষে বাজি ধরার চেয়ে সেটাকে চোখে দেখা বেশি আকর্ষণীয়।—এই ঘটনা কি আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? যদি প্রযোজ্য হয়, তাহলে কেন প্রযোজ্য, সে কথা ভেবে মাথা ঘামাতে থাকুন।
এর পরের কৌতুকটা কেন কৌতুক, তা প্রথমে ধরতে পারিনি। কিন্তু পরে বুঝতে পারায় হাসি আর থামে না আমার: ‘গণতন্ত্র হলো একটি সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং “গণতন্ত্রী”রা নির্বাচনে জয়লাভ করে।’
নির্বাচনের আগে সবাই প্রতিশ্রুতি দেন: ‘আমি শেষ করে দেব দুর্নীতি, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করব, বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি করব।’ নির্বাচন হয়ে গেলে ‘আমি শেষ করে দেব’ অর্থাৎ কেবল প্রথম চারটি শব্দই সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
ভোটারকে অবিবাহিত মানুষের সঙ্গে তুলনা করা যাক। অবিবাহিত মানুষের জন্য পোশাক নির্বাচন করা খুব কঠিন। কোন জামাটা গায়ে দেবে সে? যেটা ধোয়া হয়নি নাকি যেটা আয়রন করা হয়নি?
শেষ করি একটি মর্মান্তিক রসিকতা দিয়ে। যারা রাজনীতিতে আগ্রহী নয়, তারা মুরগির মতো। তারা তাদের মালিকের জন্য ডিম পাড়ে, আর বিনিময়ে মালিক তাদের খাওয়ায়। যারা রাজনীতিতে আগ্রহী, তারা নির্বাচনে তাদের নিজস্ব মালিককে বেছে নেয়, যে মালিক নির্বাচিত হয়ে তাদেরকেই খেয়ে ফেলে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
৫ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
১ দিন আগেসম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়—শুধু গবেষণায় নয়, মানবিক দায়বদ্ধতায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখিয়ে দিয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল জ্ঞানচর্চার স্থান নয়; বরং তা ন্যায়, স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীল...
১ দিন আগে