মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনমন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাসহ বিচারব্যবস্থা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আমার প্রশ্ন হলো, বৃদ্ধি হবে না কেন? খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। আইনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে সাজা দেওয়া, যাতে অপরাধীরা অপরাধগুলো না করতে পারে। আইনের প্রয়োগ হলে অপকর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, আইন প্রয়োগের যে পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে সরকারের যে দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে অপরাধীরা তো ফিল করছে না যে কেউ অপরাধ করলে তাদের সাজা হবে। তাদের মনে কোনো ভয়ভীতি নেই। ১১ মাস ধরে তারা দেখছে, সংবিধান ও আইনকে বাইরে রেখে কাজ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম, শিল্পকারখানা জোর করে দখল করা হচ্ছে। এভাবে সবকিছু হচ্ছে বলে একটা সামাজিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে যে, কোনো অপরাধ করলে তেমন কিছু হবে না। সে কারণে এই অপরাধগুলো বাড়ছে।
এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আসলে এখন আর নেই। যদি তাদের সক্ষমতা থাকত, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগটা অব্যাহত রাখত। কিন্তু গত সরকারের সময় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই বাহিনীর একটা বড় অংশ, বিশেষ করে ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি, ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এরপর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তখন সেই সুবিধাপ্রাপ্ত শত শত পুলিশ কর্মকর্তা এই সরকারের টার্গেটে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং দেশের অধিকাংশ থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রমা থেকে তারা বের হতে পারেনি।
৫ আগস্টের আগে একধরনের ঘটনা ঘটেছে, আবার এর পরে আরেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এই সরকার সেই বিচার করেনি। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। সেই ইনডেমনিটির কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমরা যে আজকে দাঁড়িয়ে কাজ করব, আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাব? জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা যদি আবার আমাদের মারে বা আওয়ামী লীগের দোসর বলে। তাহলে আমাদের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সে কারণে তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকার দরকার ছিল, সেটার দুর্বলতার কারণে সরকার বারবার বললেও সেইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর দাঁড়াতে পারেনি।
সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকারের পলিসির কারণে ব্যর্থ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কতগুলো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন যাত্রাবাড়ীর একটা কলেজে আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাজী নজরুল কলেজের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লুটপাট করেছিল। পুলিশ কিন্তু সেখানে যায়নি। সরকার সে সময় ব্যাখ্যা দিয়েছিল—পুলিশ গেলে আরও বেশি সমস্যা হতো। সেই ঘটনা ধরে বলা যায়, যাদের গায়ে শক্তি আছে, তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরে আরও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
লালবাগ থানায় তখন একটা মামলা হয়েছিল। সে সময় ওসি বলেছিলেন, ৪০০ জনকে আসামি করেছেন। আমি তদন্ত করে দেখি, ব্যাপার কী? তখন সেই সময়কার ছাত্রদের নেতা এবং এখনকার এনসিপির নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কয়েক হাজার লোকের সমাগম করে থানা ঘেরাও করে ওই থানার ওসিকে চাপ দিয়ে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় বোঝা গেছে, আমাদের কোনো কাজ করতে বাধা নেই। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা হলো, সেখানেও তো পুলিশ বাহিনী যায়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হলো।
সব কটি ঘটনায় তো প্রমাণিত হয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করেছে, তাদের বুকে অনেক সাহস। এসব ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ থেকে বলা যায়, পুলিশের সক্ষমতার চেয়ে সরকারের সক্ষমতায় বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা দেখেছি, সরকার অনেক ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, বিগত সরকারের পুলিশ পিটুনি খাবে এবং নির্যাতিত হবে, সরকার সেটা চেয়েছে। সরকার অনেক ঘটনায় চুপ ছিল।
কিন্তু আইনের কথা হলো, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা পেতে হবে। কিন্তু অনেক ঘটনায় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। এটা তো কোনো আইনগত প্রক্রিয়া হতে পারে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকার অনেক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল এবং অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর সেভাবে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যাপার কি পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটার জন্য দায়ী?
প্রতিটি ঘটনার একটা ইনিশিয়াল ব্যাপার থাকে। আপনি যখন মাটির হাঁড়ি তৈরি করবেন, তখন আপনাকে প্রথমে হাতে মাটি নিতে হবে। তারপর মেকানিজম করে করে হাঁড়িটা তৈরি করতে হবে। একই কথা বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও। ৫ আগস্টের পরে যত ঘটনা ঘটেছে, সে সময় শক্তভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা কমে যেত। সে সময় অভ্যুত্থানকারী নেতারাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল। সরকারপ্রধান তো বলেছেন, অভ্যুত্থানকারীরাই তাঁকে নিয়োগ করেছে। যারা নিয়োগ দেয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো করার কিছু থাকে না। সেই সময় থেকে দুর্বলতা শুরু হয়েছে। অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বলাবলি হলেও কাজ হবে না। কারণ, ট্রেন অলরেডি লাইনের বাইরে চলে গেছে। কাজেই লাইনে ট্রেন ওঠানোর জন্য বিকল্প কোনো ভাবনা আমার জানা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। আর একটা হলো, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে নতুন আশার সৃষ্টি হতে পারে।
সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না?
একদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলো, অন্যদিকে সেনাপ্রধানের অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হলো, ভারতে পাঠানোরও থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। এ রকমভাবে সেনাপ্রধানকে থ্রেট দিলে কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তো একটাই দেওয়া হয়—যদি কন্ট্রোল করতে না পারো, তাহলে সরাসরি গুলি করো। গুলি করলে তো মানুষ মারা যাবে। ওই ধরনের রিস্ক তারা নিতে চাইছে না। তবে তারা ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়।
এখন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেভাবে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
আসলে মানবাধিকারের শিকড়ে যেতে হবে। মানবাধিকার ধারণাটা এসেছে সমাজতন্ত্রকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য। আমেরিকা সেই ফর্মুলাটা আবিষ্কার করেছিল। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবাধিকার নেই। সেখানে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যায় না। আমরা বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিশ্চিত করব। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ধ্বংসের পর সেটার আর কার্যকারিতা নেই। ১০ বছর আগেও সেটার কার্যকারিতা ছিল।
কিন্তু আমেরিকা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালায়, সেখানে তো মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সেখানে কি কোনো মানবাধিকার রক্ষার সুযোগ আছে? মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই আলোচনাটা আর নেই।
আমাদের দেশে আশির দশকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এনজিওগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সত্যিকারভাবে গুম-খুন, রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা বলার কারণে কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই সময়কার অনেক এনজিও-প্রধান এখন ক্ষমতার পার্ট হয়ে গেছেন। শুধু পার্ট না, কয়েকজন তো সরাসরি উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন যাঁরা ক্ষমতা পরিবর্তন করে এনাদের ক্ষমতায় বসালেন, এখন যদি তাঁরাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন, সেটা তো লজ্জার বিষয় হবে তাঁদের জন্যও।
এখন তাঁরা বলছেন না, কিন্তু একসময় তো কথা বলতেই হবে। তাঁদের বিবেকের কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তবে একদম যে কেউ বলছেন না, তা কিন্তু নয়। সারা হোসেন, শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না বলছেন। একটা অংশ বলছেন, কিন্তু বড় অংশটা তো এই পরিবর্তনের ফলভোগী। আর ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর কি বিচারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
৫ আগস্টের পরেই আমরা বলা শুরু করেছিলাম, বিচার বিভাগে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, সেগুলো দূর করা দরকার। একটা উদাহরণ দিই—আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন মামলায় জামিন পান নিম্ন আদালত থেকে, তখন জামিনের কপি পেতে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হতো, যাতে তারা আড়াই মাস পরে আপিল করতে পারে। নিয়ম হলো দুই দিনের মধ্যে সেটা পাওয়া। এসব মেকানিজম করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার খর্ব করার জন্য। আমরা কিন্তু চেয়েছিলাম সেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন।
কিন্তু আমরা এখন অন্য আলোকে কিছু বিষয় দেখতে পাচ্ছি। শুধু বোতলটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগের বোতল নেই। এখনকার বাস্তবতা হলো, বহু আইনজীবী কোর্টে যেতে পারেন না। ৬০-৭০ জন আইনজীবী ঢাকা বারের একটা চেম্বার ভাঙচুর করেছেন একটা মামলার জন্য। সেই মামলার সত্যতা কতটুকু আছে, সেটা আমি জানি না। সেটা থাকলেও চেম্বার ভাঙচুরের জন্য আইনজীবীদের জেলে যাওয়ার কথা নয়। ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলে ছিলেন।
এরপর শত শত আইনজীবীকে কোর্টে গেলে মারধর করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে জোর করে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে। একটা মামলায় বাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসামিকে আপনি চেনেন? নাম কী? বলতে পারেননি। কারণ, ৪০০ আসামিকে কীভাবে চিনবে? তখন বিচারক অর্ডার দিতে রাজি হননি। সঙ্গে সঙ্গে বিচারককে ঘেরাও করা হয়েছিল। যখন দেশে রুল অব ল থাকে না, তখন তো ন্যায়বিচারও থাকে না। জজকে নিরাপত্তা কে দেবে? এখন জজ তো নিরাপত্তার জন্য যা চাইবেন, তা-ই করবেন। এটা তো পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য না। এসব নিম্ন আদালতের ব্যাপার।
উচ্চ আদালতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আগের রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলল, ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ হচ্ছে। কিন্তু তাদের জ্ঞানও নেই যে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ কী? বিচারকদের একটা সভা ডাকা হয়েছিল, সেখানে কোনো মামলার রায় হওয়ার কথা নয়। সেখানে তারা হাজার হাজার তরুণকে ডেকে আনল, যেহেতু তারা পরিবর্তন করেছে। তারা সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করল। এরপরও তো অনেককে দোসর ট্যাগ দিয়েছে। তাহলে বিচারকেরা কীভাবে কাজ করবেন? স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। আগে ছিল একটা প্যাটার্ন (ধরন), এখন চলছে আরেক প্যাটার্ন। আমি বলি, আগের তুলনায় অবস্থা আরও খারাপ।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ছিনতাই ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
আমার প্রশ্ন হলো, বৃদ্ধি হবে না কেন? খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন আছে। আইনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে সাজা দেওয়া, যাতে অপরাধীরা অপরাধগুলো না করতে পারে। আইনের প্রয়োগ হলে অপকর্মগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, আইন প্রয়োগের যে পরিস্থিতি এবং সার্বিকভাবে সরকারের যে দুর্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে অপরাধীরা তো ফিল করছে না যে কেউ অপরাধ করলে তাদের সাজা হবে। তাদের মনে কোনো ভয়ভীতি নেই। ১১ মাস ধরে তারা দেখছে, সংবিধান ও আইনকে বাইরে রেখে কাজ হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম, শিল্পকারখানা জোর করে দখল করা হচ্ছে। এভাবে সবকিছু হচ্ছে বলে একটা সামাজিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশে যে, কোনো অপরাধ করলে তেমন কিছু হবে না। সে কারণে এই অপরাধগুলো বাড়ছে।
এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আসলে এখন আর নেই। যদি তাদের সক্ষমতা থাকত, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগটা অব্যাহত রাখত। কিন্তু গত সরকারের সময় এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই বাহিনীর একটা বড় অংশ, বিশেষ করে ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তারা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি, ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। এরপর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তখন সেই সুবিধাপ্রাপ্ত শত শত পুলিশ কর্মকর্তা এই সরকারের টার্গেটে পড়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং দেশের অধিকাংশ থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ট্রমা থেকে তারা বের হতে পারেনি।
৫ আগস্টের আগে একধরনের ঘটনা ঘটেছে, আবার এর পরে আরেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এই সরকার সেই বিচার করেনি। ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। সেই ইনডেমনিটির কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। আমরা যে আজকে দাঁড়িয়ে কাজ করব, আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাব? জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা যদি আবার আমাদের মারে বা আওয়ামী লীগের দোসর বলে। তাহলে আমাদের কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? সে কারণে তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।
স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকার দরকার ছিল, সেটার দুর্বলতার কারণে সরকার বারবার বললেও সেইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর দাঁড়াতে পারেনি।
সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
সরকারের পলিসির কারণে ব্যর্থ হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর কতগুলো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন যাত্রাবাড়ীর একটা কলেজে আগের দিন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাজী নজরুল কলেজের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুর, আগুন দিয়ে লুটপাট করেছিল। পুলিশ কিন্তু সেখানে যায়নি। সরকার সে সময় ব্যাখ্যা দিয়েছিল—পুলিশ গেলে আরও বেশি সমস্যা হতো। সেই ঘটনা ধরে বলা যায়, যাদের গায়ে শক্তি আছে, তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরে আরও অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
লালবাগ থানায় তখন একটা মামলা হয়েছিল। সে সময় ওসি বলেছিলেন, ৪০০ জনকে আসামি করেছেন। আমি তদন্ত করে দেখি, ব্যাপার কী? তখন সেই সময়কার ছাত্রদের নেতা এবং এখনকার এনসিপির নেতারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কয়েক হাজার লোকের সমাগম করে থানা ঘেরাও করে ওই থানার ওসিকে চাপ দিয়ে মামলা নিতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনায় বোঝা গেছে, আমাদের কোনো কাজ করতে বাধা নেই। এরপর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা হলো, সেখানেও তো পুলিশ বাহিনী যায়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জুতার মালা পরানো হলো।
সব কটি ঘটনায় তো প্রমাণিত হয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করেছে, তাদের বুকে অনেক সাহস। এসব ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ থেকে বলা যায়, পুলিশের সক্ষমতার চেয়ে সরকারের সক্ষমতায় বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। আমরা দেখেছি, সরকার অনেক ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, বিগত সরকারের পুলিশ পিটুনি খাবে এবং নির্যাতিত হবে, সরকার সেটা চেয়েছে। সরকার অনেক ঘটনায় চুপ ছিল।
কিন্তু আইনের কথা হলো, অপরাধী যে দলেরই হোক, তাকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা পেতে হবে। কিন্তু অনেক ঘটনায় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। এটা তো কোনো আইনগত প্রক্রিয়া হতে পারে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকার অনেক দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল এবং অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর সেভাবে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যাপার কি পরবর্তী ঘটনাগুলো ঘটার জন্য দায়ী?
প্রতিটি ঘটনার একটা ইনিশিয়াল ব্যাপার থাকে। আপনি যখন মাটির হাঁড়ি তৈরি করবেন, তখন আপনাকে প্রথমে হাতে মাটি নিতে হবে। তারপর মেকানিজম করে করে হাঁড়িটা তৈরি করতে হবে। একই কথা বিল্ডিং নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও। ৫ আগস্টের পরে যত ঘটনা ঘটেছে, সে সময় শক্তভাবে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা কমে যেত। সে সময় অভ্যুত্থানকারী নেতারাই নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল। সরকারপ্রধান তো বলেছেন, অভ্যুত্থানকারীরাই তাঁকে নিয়োগ করেছে। যারা নিয়োগ দেয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তো করার কিছু থাকে না। সেই সময় থেকে দুর্বলতা শুরু হয়েছে। অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বলাবলি হলেও কাজ হবে না। কারণ, ট্রেন অলরেডি লাইনের বাইরে চলে গেছে। কাজেই লাইনে ট্রেন ওঠানোর জন্য বিকল্প কোনো ভাবনা আমার জানা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে যদি সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। আর একটা হলো, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে নতুন আশার সৃষ্টি হতে পারে।
সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না?
একদিকে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলো, অন্যদিকে সেনাপ্রধানের অপসারণের প্রসঙ্গ তোলা হলো, ভারতে পাঠানোরও থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। এ রকমভাবে সেনাপ্রধানকে থ্রেট দিলে কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং তো একটাই দেওয়া হয়—যদি কন্ট্রোল করতে না পারো, তাহলে সরাসরি গুলি করো। গুলি করলে তো মানুষ মারা যাবে। ওই ধরনের রিস্ক তারা নিতে চাইছে না। তবে তারা ১৬ জুলাইয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়।
এখন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেভাবে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
আসলে মানবাধিকারের শিকড়ে যেতে হবে। মানবাধিকার ধারণাটা এসেছে সমাজতন্ত্রকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য। আমেরিকা সেই ফর্মুলাটা আবিষ্কার করেছিল। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানবাধিকার নেই। সেখানে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যায় না। আমরা বিশ্ববাসীর মানবাধিকার নিশ্চিত করব। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ধ্বংসের পর সেটার আর কার্যকারিতা নেই। ১০ বছর আগেও সেটার কার্যকারিতা ছিল।
কিন্তু আমেরিকা যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চালায়, সেখানে তো মানবাধিকার রক্ষিত হয় না। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সেখানে কি কোনো মানবাধিকার রক্ষার সুযোগ আছে? মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই আলোচনাটা আর নেই।
আমাদের দেশে আশির দশকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনজিওগুলো। এনজিওগুলোর ফান্ড দেশের বাইরে থেকে আসে। এনজিওগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সত্যিকারভাবে গুম-খুন, রাজনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা বলার কারণে কিছুটা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই সময়কার অনেক এনজিও-প্রধান এখন ক্ষমতার পার্ট হয়ে গেছেন। শুধু পার্ট না, কয়েকজন তো সরাসরি উপদেষ্টা হয়েছেন। এখন যাঁরা ক্ষমতা পরিবর্তন করে এনাদের ক্ষমতায় বসালেন, এখন যদি তাঁরাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন, সেটা তো লজ্জার বিষয় হবে তাঁদের জন্যও।
এখন তাঁরা বলছেন না, কিন্তু একসময় তো কথা বলতেই হবে। তাঁদের বিবেকের কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তবে একদম যে কেউ বলছেন না, তা কিন্তু নয়। সারা হোসেন, শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না বলছেন। একটা অংশ বলছেন, কিন্তু বড় অংশটা তো এই পরিবর্তনের ফলভোগী। আর ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর কি বিচারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
৫ আগস্টের পরেই আমরা বলা শুরু করেছিলাম, বিচার বিভাগে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল, সেগুলো দূর করা দরকার। একটা উদাহরণ দিই—আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন মামলায় জামিন পান নিম্ন আদালত থেকে, তখন জামিনের কপি পেতে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হতো, যাতে তারা আড়াই মাস পরে আপিল করতে পারে। নিয়ম হলো দুই দিনের মধ্যে সেটা পাওয়া। এসব মেকানিজম করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার খর্ব করার জন্য। আমরা কিন্তু চেয়েছিলাম সেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন।
কিন্তু আমরা এখন অন্য আলোকে কিছু বিষয় দেখতে পাচ্ছি। শুধু বোতলটা পরিবর্তিত হয়েছে। আগের বোতল নেই। এখনকার বাস্তবতা হলো, বহু আইনজীবী কোর্টে যেতে পারেন না। ৬০-৭০ জন আইনজীবী ঢাকা বারের একটা চেম্বার ভাঙচুর করেছেন একটা মামলার জন্য। সেই মামলার সত্যতা কতটুকু আছে, সেটা আমি জানি না। সেটা থাকলেও চেম্বার ভাঙচুরের জন্য আইনজীবীদের জেলে যাওয়ার কথা নয়। ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের নির্দেশে জেলে ছিলেন।
এরপর শত শত আইনজীবীকে কোর্টে গেলে মারধর করা হচ্ছে। বিচারকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পরে জোর করে জামিন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে। একটা মামলায় বাদীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আসামিকে আপনি চেনেন? নাম কী? বলতে পারেননি। কারণ, ৪০০ আসামিকে কীভাবে চিনবে? তখন বিচারক অর্ডার দিতে রাজি হননি। সঙ্গে সঙ্গে বিচারককে ঘেরাও করা হয়েছিল। যখন দেশে রুল অব ল থাকে না, তখন তো ন্যায়বিচারও থাকে না। জজকে নিরাপত্তা কে দেবে? এখন জজ তো নিরাপত্তার জন্য যা চাইবেন, তা-ই করবেন। এটা তো পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য না। এসব নিম্ন আদালতের ব্যাপার।
উচ্চ আদালতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আগের রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলল, ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ হচ্ছে। কিন্তু তাদের জ্ঞানও নেই যে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ কী? বিচারকদের একটা সভা ডাকা হয়েছিল, সেখানে কোনো মামলার রায় হওয়ার কথা নয়। সেখানে তারা হাজার হাজার তরুণকে ডেকে আনল, যেহেতু তারা পরিবর্তন করেছে। তারা সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করল। এরপরও তো অনেককে দোসর ট্যাগ দিয়েছে। তাহলে বিচারকেরা কীভাবে কাজ করবেন? স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। আগে ছিল একটা প্যাটার্ন (ধরন), এখন চলছে আরেক প্যাটার্ন। আমি বলি, আগের তুলনায় অবস্থা আরও খারাপ।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
২১ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
২১ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
২১ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
২ দিন আগে