হেনা শিকদার
একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি উদ্যোগ এক অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় সরকারি হাসপাতালের সংকট এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতটি সেবার পরিবর্তে মুনাফামুখী ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। লাগামহীন বিল, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বাণিজ্যিক স্বার্থে রোগীদের জিম্মি করা এবং চিকিৎসায় অবহেলার মতো গুরুতর সব অভিযোগে জর্জরিত আজকের বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য কি তার সেবার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে নিছকই এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হলো?
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। সেখানে শুধু টাকাওয়ালারাই চিকিৎসা গ্রহণের সামর্থ্য রাখেন। বেসরকারি হাসপাতালের নানা স্তরভেদ আছে। সেখানেও ধনী থেকে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে। একই রোগের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বিলের তারতম্য এতটাই যে এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকারি হাসপাতালে যেখানে সিজারের খরচ তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ কয়েক গুণ বেশি। একটি অ্যাপেনডেক্টমি অপারেশনের খরচ সরকারির চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক গুণ বেশি। বাংলাদেশ হেলথ অ্যালায়েন্সের তথ্যমতে, বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেনডেক্টমির খরচ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
শুধু অপারেশনেই নয়, বেড ভাড়া, কনসালট্যান্সি ফি, নার্সিং চার্জ এবং বিভিন্ন পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা গুরুতর না হলেও আইসিইউ বা সিসিইউতে রাখা হয়, শুধু বিল বাড়ানোর উদ্দেশ্য থেকে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার জন্য নানা ধরনের ছলচাতুরীর আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। চিকিৎসকদের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কমিশন-বাণিজ্য সম্পর্ক এই অনৈতিক চর্চাকে আরও উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনেও স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি থেকে শুরু করে চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে, যা এই বাণিজ্যিকীকরণেরই প্রতিফলন।
বাণিজ্যিকীকরণের এই দৌরাত্ম্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অধ্যায় হলো চিকিৎসা অবহেলা। ভুল চিকিৎসা বা অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে। অনভিজ্ঞ চিকিৎসক বা নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো, জরুরি মুহূর্তে সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতি এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থতার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক মাস আগে ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এমন ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও দেখা যায়। এতে একদিকে যেমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, অন্যদিকে রোগীরা অসহায় বোধ করছেন।
রোগীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। হাসপাতালের নিজস্ব ‘দালাল চক্রের’ দৌরাত্ম্যে রোগীরা সঠিক তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। ভালো চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক। এই চক্রের সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগও পুরোনো।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণে সরকারের সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ‘মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’ এবং পরবর্তীকালে প্রণীত বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিপুলসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। জনবলের সংকট এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে নিয়মিত ও কার্যকর পরিদর্শন অভিযান পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই ন্যূনতম মান বজায় না রেখে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স বা টেকনিশিয়ান ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি।
তবে এ কথাও অনস্বীকার্য যে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি বড় শূন্যস্থান পূরণ করছে। সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ কমানো, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ব্যবহার এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহজলভ্যতা এই খাতের ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলো এই খাতের মান উন্নয়নে কাজ করার কথা বলে। কিন্তু তাদের ঘোষিত লক্ষ্যের সঙ্গে মাঠের বাস্তবতার বিস্তর ফারাক সাধারণ মানুষকে হতাশ করে।
এই অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন ও মানহীন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। চিকিৎসার খরচ নিয়ন্ত্রণে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন জরুরি। প্রতিটি সেবার জন্য একটি যৌক্তিক মূল্যতালিকা নির্ধারণ করে তা সব হাসপাতালে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রোগীদের অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের নৈতিকতার মানদণ্ড সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) আরও সক্রিয় হতে হবে।
চিকিৎসা একটি মৌলিক অধিকার, কোনো বিলাসী পণ্য নয়। বেসরকারি খাত স্বাস্থ্যসেবার পরিপূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে, বাণিজ্যিক দানবে পরিণত হবে না—এটাই সবার প্রত্যাশা। সরকারের কঠোর নজরদারি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং হাসপাতাল মালিকদের সদিচ্ছাই পারে এই খাতকে তার মূল আদর্শে ফিরিয়ে আনতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য মানসম্মত ও সুলভ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে।
একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি উদ্যোগ এক অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় সরকারি হাসপাতালের সংকট এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতটি সেবার পরিবর্তে মুনাফামুখী ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। লাগামহীন বিল, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বাণিজ্যিক স্বার্থে রোগীদের জিম্মি করা এবং চিকিৎসায় অবহেলার মতো গুরুতর সব অভিযোগে জর্জরিত আজকের বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য কি তার সেবার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে নিছকই এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হলো?
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। সেখানে শুধু টাকাওয়ালারাই চিকিৎসা গ্রহণের সামর্থ্য রাখেন। বেসরকারি হাসপাতালের নানা স্তরভেদ আছে। সেখানেও ধনী থেকে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে। একই রোগের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বিলের তারতম্য এতটাই যে এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকারি হাসপাতালে যেখানে সিজারের খরচ তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ কয়েক গুণ বেশি। একটি অ্যাপেনডেক্টমি অপারেশনের খরচ সরকারির চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক গুণ বেশি। বাংলাদেশ হেলথ অ্যালায়েন্সের তথ্যমতে, বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেনডেক্টমির খরচ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
শুধু অপারেশনেই নয়, বেড ভাড়া, কনসালট্যান্সি ফি, নার্সিং চার্জ এবং বিভিন্ন পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা গুরুতর না হলেও আইসিইউ বা সিসিইউতে রাখা হয়, শুধু বিল বাড়ানোর উদ্দেশ্য থেকে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার জন্য নানা ধরনের ছলচাতুরীর আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। চিকিৎসকদের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কমিশন-বাণিজ্য সম্পর্ক এই অনৈতিক চর্চাকে আরও উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনেও স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি থেকে শুরু করে চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে, যা এই বাণিজ্যিকীকরণেরই প্রতিফলন।
বাণিজ্যিকীকরণের এই দৌরাত্ম্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অধ্যায় হলো চিকিৎসা অবহেলা। ভুল চিকিৎসা বা অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে। অনভিজ্ঞ চিকিৎসক বা নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো, জরুরি মুহূর্তে সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতি এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থতার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক মাস আগে ঢাকার একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এমন ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও দেখা যায়। এতে একদিকে যেমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, অন্যদিকে রোগীরা অসহায় বোধ করছেন।
রোগীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। হাসপাতালের নিজস্ব ‘দালাল চক্রের’ দৌরাত্ম্যে রোগীরা সঠিক তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। ভালো চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক। এই চক্রের সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগও পুরোনো।
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণে সরকারের সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ‘মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’ এবং পরবর্তীকালে প্রণীত বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও এর সঠিক প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিপুলসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। জনবলের সংকট এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে নিয়মিত ও কার্যকর পরিদর্শন অভিযান পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই ন্যূনতম মান বজায় না রেখে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স বা টেকনিশিয়ান ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি।
তবে এ কথাও অনস্বীকার্য যে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি বড় শূন্যস্থান পূরণ করছে। সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ কমানো, আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ব্যবহার এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহজলভ্যতা এই খাতের ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলো এই খাতের মান উন্নয়নে কাজ করার কথা বলে। কিন্তু তাদের ঘোষিত লক্ষ্যের সঙ্গে মাঠের বাস্তবতার বিস্তর ফারাক সাধারণ মানুষকে হতাশ করে।
এই অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন ও মানহীন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। চিকিৎসার খরচ নিয়ন্ত্রণে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন জরুরি। প্রতিটি সেবার জন্য একটি যৌক্তিক মূল্যতালিকা নির্ধারণ করে তা সব হাসপাতালে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রোগীদের অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের নৈতিকতার মানদণ্ড সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) আরও সক্রিয় হতে হবে।
চিকিৎসা একটি মৌলিক অধিকার, কোনো বিলাসী পণ্য নয়। বেসরকারি খাত স্বাস্থ্যসেবার পরিপূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে, বাণিজ্যিক দানবে পরিণত হবে না—এটাই সবার প্রত্যাশা। সরকারের কঠোর নজরদারি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং হাসপাতাল মালিকদের সদিচ্ছাই পারে এই খাতকে তার মূল আদর্শে ফিরিয়ে আনতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য মানসম্মত ও সুলভ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে।
যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে গত বুধবারের আজকের পত্রিকার শেষের পাতায়, তা বেদনা দিয়ে ঘেরা। রাজশাহীর নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে ঋণের ফাঁদে আটকে দিশেহারা হয়ে উঠছেন, তারই বিশদ বর্ণনা রয়েছে এই প্রতিবেদনে। সম্প্রতি ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে সপরিবারে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।
৩ ঘণ্টা আগেআপাতদৃষ্টিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যহীন। অর্থাৎ অভ্যুত্থান সফল হলে কী করা হবে, দেশে বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ইত্যাদি। কিন্তু অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর প্রধান দাবি ও করণীয় নির্ধারণ...
৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পুরোনো দুর্নীতির একটি ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। আজকের পত্রিকায় ১৯ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রায় ৪৫০ টন জুয়েলারি (গয়না) আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু অসাধু আমদানিকারকেরা ‘কৃত্রিম মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ আমদানির ভুয়া ঘোষণা...
১ দিন আগেএই উপমহাদেশে সমবেত জনতার কণ্ঠে প্রতিবাদের যে ভাষা আমরা দেখি, অন্ত্যমিলসহ বা ছাড়া, তা আদতে, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘কাপলেট’, বাংলায় ‘দ্বিপদী’ সেটাই। স্বরবৃত্ত ছন্দে অন্ত্যমিলে স্লোগান রচনা করলে, সমবেত কণ্ঠে তার আবেদন বেশ জোরালো হয়। আর সে ক্ষেত্রে শব্দচয়ন যদি মিছরির ছুরির মতো হয়, তবে তো কথাই নেই।
১ দিন আগে