Ajker Patrika

ঋণের ফাঁদ

সম্পাদকীয়
ঋণের ফাঁদ

যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে গত বুধবারের আজকের পত্রিকার শেষের পাতায়, তা বেদনা দিয়ে ঘেরা। রাজশাহীর নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে ঋণের ফাঁদে আটকে দিশেহারা হয়ে উঠছেন, তারই বিশদ বর্ণনা রয়েছে এই প্রতিবেদনে। সম্প্রতি ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে সপরিবারে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। একটি গ্রামের ২৫০টি বাড়ির মধ্যে দু-চারটি বাড়ি ছাড়া সবারই কোথাও না কোথাও ঋণ রয়েছে, এ রকম কথা শুনলে বুঝতে পারা যায় সেই গ্রামে বসবাসকারী মানুষের আর্থিক সামর্থ্যের অবস্থা। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার পর ঋণ ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি থাকতে পারে, কিন্তু আরও যে সমস্যাগুলো আছে, তা নিয়েও কথা বলা দরকার।

দরিদ্র মানুষ জামানত দিতে পারে না বলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে না। অভাব এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে টাকা প্রাপ্তিই জরুরি হয়ে পড়ে। কীভাবে এনজিও থেকে নেওয়া টাকা পরিশোধ করা হবে, সে চিন্তা হয়তো মাথায় আসে না। তাই কিস্তিগুলো বাদ পড়তে থাকলে দেখা যায় অশনিসংকেত। অন্য কোনো এনজিওর শরণাপন্ন হয়ে আগের এনজিওর ঋণ শোধ করেন কেউ কেউ। এভাবে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকে। কিস্তি দেওয়ার সময় হলে এনজিওর কর্মীরা টাকার জন্য চাপ দেন। তাতেও দিশেহারা হয়ে পড়েন কিস্তি দেওয়ার ক্ষমতাহীন মানুষ।

ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয় মূলত দারিদ্র্যবিমোচন ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা গড়ে তোলার জন্য। কোনো সন্দেহ নেই উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু তাতে আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের কতটা দারিদ্র্যবিমোচন হচ্ছে, তাঁরা কতটা স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন, তা নিয়ে ভাবা দরকার। যিনি এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছেন, আদতে সে টাকা কোথায় বিনিয়োগ করেন, কীভাবে সে ঋণ পরিশোধ করবেন—এ ব্যাপারে অনেক সময় পরিষ্কার ধারণা থাকে না তাঁর। দরিদ্র মানুষের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা, নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখা, সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়গুলো যুক্ত আছে ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাবে সে ঋণ ইতিবাচক কোনো কাজে লাগে না। ঋণ নিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করে ফেললে তা পরিশোধ করার আর কোনো পথ পাওয়া যায় না।

দরিদ্র মানুষকে ঋণ দেওয়ার সময় তাঁকে বিস্তারিতভাবে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি এনজিওর তরফ থেকেও ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি ঋণ নিচ্ছেন, সে লক্ষ্য পূরণ করার ভিত্তি আছে কি না, তা নিয়েও পর্যালোচনা করে তারপর ঋণ দেওয়া উচিত। এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অন্য এনজিওর বকেয়া ঋণ পরিশোধের প্রবণতা যেন না হয়, সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। ঋণ দেওয়ার ব্যাপারটি যেন শুধু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সত্যিই দরিদ্র মানুষের উপকারে আসে, তা নিশ্চিত করা দরকার। নইলে ‘বাঁচতে গিয়ে মরছে মানুষ’ শিরোনামে আজকের পত্রিকায় যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে, সে ধরনের দুঃখজনক সংবাদ ছাপা বন্ধ হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত