অরুণ কর্মকার
আপাতদৃষ্টিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যহীন। অর্থাৎ অভ্যুত্থান সফল হলে কী করা হবে, দেশে বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ইত্যাদি। কিন্তু অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর প্রধান দাবি ও করণীয় নির্ধারণ করা হয় রাষ্ট্র সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক রাজনৈতিক বিষয়। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন প্রভৃতিসহ সেই বিষয়গুলোকেই অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যবস্তুর নামকরণ করা হয় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এ রকম একটি নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়া একটি সরকারের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভবও। এ জন্য দরকার ছিল একটি বিপ্লবী সরকার। নিদেনপক্ষে একটি জাতীয় সরকার। কিন্তু অভ্যুত্থানের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য না থাকায় তেমন কোনো সরকার গঠন করার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কারও মনেই হয়নি। ফলে যে সরকারটি গঠিত হলো তার কর্মকাণ্ড বিদ্যমান সংবিধানের আওতাধীন হয়ে পড়ে। এই সংবিধানকে যতই ফ্যাসিবাদী বলা হোক না কেন, যতই নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলা হোক না কেন, এই বিষয়গুলো একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অধীন হয়ে পড়েছে। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এগুলো করার জন্য এখন যে জাতীয় রাজনৈতিক-সামাজিক ঐকমত্য দরকার, তা সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না।
হচ্ছে না যে তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কঠোর মতবিরোধেই প্রমাণিত। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে যে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৮৪টি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া সবগুলো রাজনৈতিক দল ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ৮৪টির মধ্যে সংবিধান সংস্কারের মৌলিক বিষয় নেই এবং সংবিধান সংস্কারের গৃহীত প্রস্তাব কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে দলগুলো সুস্পষ্ট দুটি বিপরীত মেরুতে নীতিগত অবস্থান নিয়েছে। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই পক্ষকেই তাদের নীতিগত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে দাঁড়াতে হবে। না হলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। সে অবস্থায় দেশে এক-এগারোর মতো কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে—যে আশঙ্কা কোনো কোনো রাজনীতিক কিছুদিন আগে থেকেই করে আসছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দলের মূল প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমদ খসড়া জুলাই সনদ সম্পর্কে বলেন, কিছু কিছু বিষয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় আলোচিত না হলেও তা জুলাই সনদে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। আগামী সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংবিধান-সংক্রান্ত সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস করার কথা কমিশনের সভায় বলা হলেও চূড়ান্ত খসড়ায় তা নেই। এসব বিষয় উল্লেখ করে ও সংশোধনী দিয়ে বিএনপি তাদের মতামত কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। তাতে দুটি বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। এক. তারা জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দিতে চায় না। বিএনপির সমমনা এবং বাম দলগুলোও একই মত পোষণ করে। দুই. বিএনপি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত নয়। তারা চায় আগামী জাতীয় সংসদে পাস করার মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পাক। জুলাই সনদ সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এই প্রস্তাবের সঙ্গেও বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো একমত নয়।
অপর দিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি চায় জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দিতে। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়াও তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বলে জানা যায়। জামায়াত ও এনসিপির এই অবস্থানের সঙ্গে আরও কয়েকটি ইসলামি দল সহমত পোষণ করে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালেও জামায়াতের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। আর তাঁদের অন্যান্য দাবির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেই নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবির মধ্যে প্রধান হলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। কিন্তু অধিকাংশ দল যে এই দাবির সঙ্গে একমত নয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সবাই সবকিছু না-ও চাইতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও তো অনেকে চায়নি। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচন জাতির জন্য কল্যাণকর। তাই এই দাবিতে জামায়াত মাঠে থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আগেই বলে রেখেছেন, তাঁরা নির্বাচন চান। কিন্তু সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জুলাই ঘোষণার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও জুলাই সনদের ক্ষেত্রে একবিন্দুও ছাড় তাঁরা দেবেন না। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন দিতে হবে। দলটির আরেকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাও বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। তার মানে তাঁরা আগে সংস্কার পরে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের যে দাবি তুলেছেন, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবেন।
এই অবস্থায় সবগুলো রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি না এবং শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত একধরনের সমঝোতা কিংবা বলা যায় আপসের ভিত্তিতে ঐকমত্য হতে পারে। তাতে দুই মেরুর রাজনৈতিক দলগুলোই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসবে। কারণ, তারা জানে যে তারা যদি এটা করতে না পারে তাহলে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে এবং তার পরিণতি হবে এক-এগারোর মতো কোনো ব্যবস্থা।
অবশ্য এ ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার পরও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু সংশয় থেকেই যায়। কারণ, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে পুলিশ বাহিনী এখনো পরিপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারছে না। এর একটা বড় কারণ অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীর মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। তাদেরকে এখনো নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদের দোসর ট্যাগ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মব নামক জোরজবরদস্তির প্রাধান্যও অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যহীন। অর্থাৎ অভ্যুত্থান সফল হলে কী করা হবে, দেশে বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ইত্যাদি। কিন্তু অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর প্রধান দাবি ও করণীয় নির্ধারণ করা হয় রাষ্ট্র সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক রাজনৈতিক বিষয়। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন প্রভৃতিসহ সেই বিষয়গুলোকেই অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যবস্তুর নামকরণ করা হয় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এ রকম একটি নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়া একটি সরকারের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভবও। এ জন্য দরকার ছিল একটি বিপ্লবী সরকার। নিদেনপক্ষে একটি জাতীয় সরকার। কিন্তু অভ্যুত্থানের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য না থাকায় তেমন কোনো সরকার গঠন করার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কারও মনেই হয়নি। ফলে যে সরকারটি গঠিত হলো তার কর্মকাণ্ড বিদ্যমান সংবিধানের আওতাধীন হয়ে পড়ে। এই সংবিধানকে যতই ফ্যাসিবাদী বলা হোক না কেন, যতই নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলা হোক না কেন, এই বিষয়গুলো একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অধীন হয়ে পড়েছে। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এগুলো করার জন্য এখন যে জাতীয় রাজনৈতিক-সামাজিক ঐকমত্য দরকার, তা সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না।
হচ্ছে না যে তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কঠোর মতবিরোধেই প্রমাণিত। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে যে, সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৮৪টি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া সবগুলো রাজনৈতিক দল ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ৮৪টির মধ্যে সংবিধান সংস্কারের মৌলিক বিষয় নেই এবং সংবিধান সংস্কারের গৃহীত প্রস্তাব কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে দলগুলো সুস্পষ্ট দুটি বিপরীত মেরুতে নীতিগত অবস্থান নিয়েছে। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই পক্ষকেই তাদের নীতিগত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে দাঁড়াতে হবে। না হলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। সে অবস্থায় দেশে এক-এগারোর মতো কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে—যে আশঙ্কা কোনো কোনো রাজনীতিক কিছুদিন আগে থেকেই করে আসছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দলের মূল প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমদ খসড়া জুলাই সনদ সম্পর্কে বলেন, কিছু কিছু বিষয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় আলোচিত না হলেও তা জুলাই সনদে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। আগামী সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংবিধান-সংক্রান্ত সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস করার কথা কমিশনের সভায় বলা হলেও চূড়ান্ত খসড়ায় তা নেই। এসব বিষয় উল্লেখ করে ও সংশোধনী দিয়ে বিএনপি তাদের মতামত কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। তাতে দুটি বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। এক. তারা জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দিতে চায় না। বিএনপির সমমনা এবং বাম দলগুলোও একই মত পোষণ করে। দুই. বিএনপি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত নয়। তারা চায় আগামী জাতীয় সংসদে পাস করার মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পাক। জুলাই সনদ সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এই প্রস্তাবের সঙ্গেও বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো একমত নয়।
অপর দিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি চায় জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দিতে। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়াও তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বলে জানা যায়। জামায়াত ও এনসিপির এই অবস্থানের সঙ্গে আরও কয়েকটি ইসলামি দল সহমত পোষণ করে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালেও জামায়াতের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। আর তাঁদের অন্যান্য দাবির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেই নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবির মধ্যে প্রধান হলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। কিন্তু অধিকাংশ দল যে এই দাবির সঙ্গে একমত নয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সবাই সবকিছু না-ও চাইতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও তো অনেকে চায়নি। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচন জাতির জন্য কল্যাণকর। তাই এই দাবিতে জামায়াত মাঠে থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আগেই বলে রেখেছেন, তাঁরা নির্বাচন চান। কিন্তু সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জুলাই ঘোষণার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও জুলাই সনদের ক্ষেত্রে একবিন্দুও ছাড় তাঁরা দেবেন না। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন দিতে হবে। দলটির আরেকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাও বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। তার মানে তাঁরা আগে সংস্কার পরে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের যে দাবি তুলেছেন, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবেন।
এই অবস্থায় সবগুলো রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি না এবং শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত একধরনের সমঝোতা কিংবা বলা যায় আপসের ভিত্তিতে ঐকমত্য হতে পারে। তাতে দুই মেরুর রাজনৈতিক দলগুলোই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসবে। কারণ, তারা জানে যে তারা যদি এটা করতে না পারে তাহলে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে এবং তার পরিণতি হবে এক-এগারোর মতো কোনো ব্যবস্থা।
অবশ্য এ ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার পরও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু সংশয় থেকেই যায়। কারণ, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে পুলিশ বাহিনী এখনো পরিপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারছে না। এর একটা বড় কারণ অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ বাহিনীর মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। তাদেরকে এখনো নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদের দোসর ট্যাগ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মব নামক জোরজবরদস্তির প্রাধান্যও অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হতে পারে।
যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে গত বুধবারের আজকের পত্রিকার শেষের পাতায়, তা বেদনা দিয়ে ঘেরা। রাজশাহীর নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে ঋণের ফাঁদে আটকে দিশেহারা হয়ে উঠছেন, তারই বিশদ বর্ণনা রয়েছে এই প্রতিবেদনে। সম্প্রতি ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে সপরিবারে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।
৩ ঘণ্টা আগেএকবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বেসরকারি উদ্যোগ এক অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় সরকারি হাসপাতালের সংকট এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পুরোনো দুর্নীতির একটি ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। আজকের পত্রিকায় ১৯ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রায় ৪৫০ টন জুয়েলারি (গয়না) আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু অসাধু আমদানিকারকেরা ‘কৃত্রিম মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ আমদানির ভুয়া ঘোষণা...
১ দিন আগেএই উপমহাদেশে সমবেত জনতার কণ্ঠে প্রতিবাদের যে ভাষা আমরা দেখি, অন্ত্যমিলসহ বা ছাড়া, তা আদতে, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘কাপলেট’, বাংলায় ‘দ্বিপদী’ সেটাই। স্বরবৃত্ত ছন্দে অন্ত্যমিলে স্লোগান রচনা করলে, সমবেত কণ্ঠে তার আবেদন বেশ জোরালো হয়। আর সে ক্ষেত্রে শব্দচয়ন যদি মিছরির ছুরির মতো হয়, তবে তো কথাই নেই।
১ দিন আগে