মাসুদ কামাল
‘আপনি আবুল হলে, আপনার আবুলত্ব দূর করার দায়িত্ব অথরিটির না’—এ রকম একটা মন্তব্য নাকি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি করেছেন তাঁর ফেসবুকে। বিষয়টা পড়লাম বিডিনিউজ ২৪ ডটকমে। নিশ্চিত হতে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। দু-এক মিনিট ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। কিন্তু পেলাম না। ভদ্রলোক প্রচুর পোস্ট দেন, গুনে দেখলাম গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩টি পোস্ট দিয়েছেন! এরপর আর স্ক্রল করে নিচের দিকে নামতে ইচ্ছা হলো না। তবে বিডিনিউজ সম্পর্কে যতটুকু জানি, তারা নিশ্চিত না হয়ে লিখবে না।
প্রেস সেক্রেটারির পোস্ট কিংবা ভাষা কিন্তু আমার আজকের আলোচনার বিষয় নয়। কেন তাঁর মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে এমন ‘উত্তেজিত’ বাক্য লিখতে হলো, সেটা নিয়েই বরং শুরুতে কিছু বলি।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটা ছবি প্রকাশিত হয়েছে ওনারই ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ছবি। ছবিতে আরও দুজন আছেন, ট্রাম্পের পাশে তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং ড. ইউনূসের পাশে তাঁর কন্যা দিনা ইউনূস। ঘটনা ২৩ সেপ্টেম্বরের। ২২ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে। এর পরদিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটা রিসেপশনের আয়োজন করেন বিশ্বনেতাদের জন্য। অনেক দিন ধরেই এটা একটা প্রথার মতো। সেখানে অনেক নেতাই হোস্টের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে থাকেন। আবার ইচ্ছা হলেই বিয়েবাড়ির মতো যে কেউ গিয়ে ছবি তুলতে পারেন, বিষয়টা সে রকমও নয়। যাঁদের ওরা চান, তাঁরাই তুলতে পারেন ছবি।
এই ছবিটা নিয়েই বিতর্ক। ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ ছবিটি তোলা হয়েছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর। আর ছবিটি ড. ইউনূসের ফেসবুক পেজে আপ করা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার, অর্থাৎ পুরো তিন দিন পর। এই বিলম্বই যে বিতর্কের একমাত্র কারণ, তা নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই দিন ধরে এই ছবির মৌলিকত্ব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রশ্নের উৎস হিসেবে তাঁরা আরও একটা ছবি পাশাপাশি বসিয়ে দিয়েছেন। একই ভঙ্গিতে তোলা অন্য ছবিটিতে ট্রাম্প দম্পতির পাশে রয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো এবং তাঁর স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা এই ছবিগুলো দিয়েছেন, তাঁদের সন্দেহ, ড. ইউনূসের ছবিটি মৌলিক নয়।
এ ধরনের প্রশ্ন বা সন্দেহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে প্রেস সেক্রেটারি হয়তো বিরক্ত হয়েই ওই মন্তব্যটি করেছেন। সন্দেহ নেই প্রেস সেক্রেটারির লেখায় বিরক্তি ও উত্তেজনা—দুটোই আছে। আমি কেবল ভদ্রলোককে একটা কথাই বলব, ভাই, আপনি যে পদ বা দায়িত্বে আছেন, সেখানে বসে এতটা মাথা গরম করা ঠিক নয়। আর একটু ‘কুল’ হতে পারলে ভালো। দেখুন, যাঁরা সন্দেহটা ছড়িয়েছেন, তাঁদের আপনি হয়তো মন্দ লোক বলবেন। বলবেন, এরা ফ্যাসিবাদের দোসর। কিন্তু তারপরও এটা তো অস্বীকার করা যাবে না, তাঁরা তাঁদের দাবির পেছনে কিছু যুক্তি দিয়েছেন, কিছু প্রযুক্তিগত তথ্যও দিয়েছেন। কাজেই এর বিপরীতে কথা বলতে হলে ওই যুক্তিগুলো খণ্ডন করতে হবে, প্রযুক্তিগত তথ্যগুলো যে সঠিক নয়, তা বলতে হবে। প্রমাণও দিতে হবে। কেবল রাগ করলেই হবে না। উত্তেজনা মানুষ দুই কারণে প্রকাশ করতে পারে—এক. নিজের কাছে পর্যাপ্ত যুক্তি না থাকলে, দুই. প্রশ্নগুলো একেবারে আজগুবি মনে হলে। কারণ যেটাই হোক, তারপরও বলব এই পদে বসে উত্তেজনা মানায় না।
কারণটা বলি। যে-ই না আপনি ‘আবুল’ বা ‘আবুলত্ব’ বললেন, অমনিই যত লোক ছবিটা দেখে সন্দেহ করেছিলেন, তাঁরা সবাই ভাবলেন—আপনি বুঝি তাঁকে বা তাঁর বুদ্ধিমত্তাকে অবহেলা করছেন। কে নিজেকে আবুল ভাবতে চায় বলুন? দায়িত্বশীল পদে যাঁরা থাকেন, তাঁদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হওয়া দরকার মাথা ঠান্ডা রাখা। যদি কেউ মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে থাকে, তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সেগুলোকে খণ্ডন করা উচিত—গালমন্দ করা নয়।
এবার একটু অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে বিষয়টা দেখি। ধরা যাক, প্রেস সেক্রেটারি সাহেবই ঠিক। ছবিটা জেনুইন। তাতে হলোটা কী? এটা খুবই একটা আনুষ্ঠানিক ছবি। এই ছবির মাধ্যমে কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার কমবেশি প্রমাণ হয়? কূটনীতি বিষয়ে যাঁদের খুবই অল্প জ্ঞান রয়েছে তাঁরাও জানেন, ছবিতে কিছু হয় না। আনুষ্ঠানিক ছবি তো দূরের কথা, একেবারে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার ছবিও কূটনীতির ক্ষেত্রে তেমন কিছু কাজে লাগে না। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সম্পর্ক তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময়, এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও সবাই মনে করতেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে খুবই ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সে সময় ট্রাম্প তাঁর একাধিক ব্যক্তিগত পোস্টে মোদিকে ‘মাই ফ্রেন্ড’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখা গেল ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরূপ আচরণ। বিশ্বব্যাপী পাল্টা শুল্কের যে যুদ্ধ ট্রাম্প শুরু করলেন, সেখানে সবচেয়ে কঠোর আচরণ করলেন তিনি ভারত ও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। শুল্কের পর অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়েও এমন কিছু আচরণ করলেন, যা ভারতীয়দের জন্য রীতিমতো অপমানজনক। অথচ হিসাব করলে দেখবেন, মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ের যত ছবি ট্রাম্পের আছে, তত বেশি অন্য কোনো সরকারপ্রধানের সঙ্গে নেই। কাজেই ছবিতে কিছু যায় আসে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে ড. ইউনূসের ছবি নয়, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়বহুল এই সফর থেকে আমাদের অর্জন কতটুকু হলো, সেটা। ছবি যদি চরম সত্যও হয়ে থাকে, তারপরও কিন্তু যে কেউ-ই স্বীকার করবেন গতবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে যতটুকু গুরুত্ব ড. ইউনূস পেয়েছিলেন, তার কিছুই হয়নি এবার। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তখন যে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ড. ইউনূসকে, তাতে জাতি হিসেবে আমরা বেশ ভালোই সম্মানিত বোধ করেছিলাম। আমরা তুলনা করেছিলাম পূর্ববর্তী শাসকের সঙ্গে। ভেবেছিলাম, আমরা সরকারপ্রধান হিসেবে এমন একজনকে পেয়েছি, যিনি সারা দুনিয়ার কাছে আমাদের দেশকে উচ্চ আসনে বসাতে পারবেন। এখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, অর্থনীতির হু হু করে উন্নতি হবে, সাধারণ মানুষের গরিবি কমবে। সে রকম কিছু কি হয়েছে? হয়নি। তাই এক বছর পরে এসে আর সে রকম কিছু প্রত্যাশার সাহসও অনেকে পাচ্ছেন না। আশাভঙ্গের অনুভূতি ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মানুষ এরই মধ্যে হিসাব করতে বসেছে—এই বহরের পেছনে ব্যয় কত হলো? বিনিময়ে পেলামটা কী? নিজেকে আসলেই একটু আবুল আবুল লাগছে!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
‘আপনি আবুল হলে, আপনার আবুলত্ব দূর করার দায়িত্ব অথরিটির না’—এ রকম একটা মন্তব্য নাকি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি করেছেন তাঁর ফেসবুকে। বিষয়টা পড়লাম বিডিনিউজ ২৪ ডটকমে। নিশ্চিত হতে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। দু-এক মিনিট ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। কিন্তু পেলাম না। ভদ্রলোক প্রচুর পোস্ট দেন, গুনে দেখলাম গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩টি পোস্ট দিয়েছেন! এরপর আর স্ক্রল করে নিচের দিকে নামতে ইচ্ছা হলো না। তবে বিডিনিউজ সম্পর্কে যতটুকু জানি, তারা নিশ্চিত না হয়ে লিখবে না।
প্রেস সেক্রেটারির পোস্ট কিংবা ভাষা কিন্তু আমার আজকের আলোচনার বিষয় নয়। কেন তাঁর মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে এমন ‘উত্তেজিত’ বাক্য লিখতে হলো, সেটা নিয়েই বরং শুরুতে কিছু বলি।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটা ছবি প্রকাশিত হয়েছে ওনারই ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ছবি। ছবিতে আরও দুজন আছেন, ট্রাম্পের পাশে তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং ড. ইউনূসের পাশে তাঁর কন্যা দিনা ইউনূস। ঘটনা ২৩ সেপ্টেম্বরের। ২২ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে। এর পরদিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটা রিসেপশনের আয়োজন করেন বিশ্বনেতাদের জন্য। অনেক দিন ধরেই এটা একটা প্রথার মতো। সেখানে অনেক নেতাই হোস্টের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে থাকেন। আবার ইচ্ছা হলেই বিয়েবাড়ির মতো যে কেউ গিয়ে ছবি তুলতে পারেন, বিষয়টা সে রকমও নয়। যাঁদের ওরা চান, তাঁরাই তুলতে পারেন ছবি।
এই ছবিটা নিয়েই বিতর্ক। ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ ছবিটি তোলা হয়েছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর। আর ছবিটি ড. ইউনূসের ফেসবুক পেজে আপ করা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার, অর্থাৎ পুরো তিন দিন পর। এই বিলম্বই যে বিতর্কের একমাত্র কারণ, তা নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই দিন ধরে এই ছবির মৌলিকত্ব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রশ্নের উৎস হিসেবে তাঁরা আরও একটা ছবি পাশাপাশি বসিয়ে দিয়েছেন। একই ভঙ্গিতে তোলা অন্য ছবিটিতে ট্রাম্প দম্পতির পাশে রয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো এবং তাঁর স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা এই ছবিগুলো দিয়েছেন, তাঁদের সন্দেহ, ড. ইউনূসের ছবিটি মৌলিক নয়।
এ ধরনের প্রশ্ন বা সন্দেহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে প্রেস সেক্রেটারি হয়তো বিরক্ত হয়েই ওই মন্তব্যটি করেছেন। সন্দেহ নেই প্রেস সেক্রেটারির লেখায় বিরক্তি ও উত্তেজনা—দুটোই আছে। আমি কেবল ভদ্রলোককে একটা কথাই বলব, ভাই, আপনি যে পদ বা দায়িত্বে আছেন, সেখানে বসে এতটা মাথা গরম করা ঠিক নয়। আর একটু ‘কুল’ হতে পারলে ভালো। দেখুন, যাঁরা সন্দেহটা ছড়িয়েছেন, তাঁদের আপনি হয়তো মন্দ লোক বলবেন। বলবেন, এরা ফ্যাসিবাদের দোসর। কিন্তু তারপরও এটা তো অস্বীকার করা যাবে না, তাঁরা তাঁদের দাবির পেছনে কিছু যুক্তি দিয়েছেন, কিছু প্রযুক্তিগত তথ্যও দিয়েছেন। কাজেই এর বিপরীতে কথা বলতে হলে ওই যুক্তিগুলো খণ্ডন করতে হবে, প্রযুক্তিগত তথ্যগুলো যে সঠিক নয়, তা বলতে হবে। প্রমাণও দিতে হবে। কেবল রাগ করলেই হবে না। উত্তেজনা মানুষ দুই কারণে প্রকাশ করতে পারে—এক. নিজের কাছে পর্যাপ্ত যুক্তি না থাকলে, দুই. প্রশ্নগুলো একেবারে আজগুবি মনে হলে। কারণ যেটাই হোক, তারপরও বলব এই পদে বসে উত্তেজনা মানায় না।
কারণটা বলি। যে-ই না আপনি ‘আবুল’ বা ‘আবুলত্ব’ বললেন, অমনিই যত লোক ছবিটা দেখে সন্দেহ করেছিলেন, তাঁরা সবাই ভাবলেন—আপনি বুঝি তাঁকে বা তাঁর বুদ্ধিমত্তাকে অবহেলা করছেন। কে নিজেকে আবুল ভাবতে চায় বলুন? দায়িত্বশীল পদে যাঁরা থাকেন, তাঁদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হওয়া দরকার মাথা ঠান্ডা রাখা। যদি কেউ মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে থাকে, তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সেগুলোকে খণ্ডন করা উচিত—গালমন্দ করা নয়।
এবার একটু অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে বিষয়টা দেখি। ধরা যাক, প্রেস সেক্রেটারি সাহেবই ঠিক। ছবিটা জেনুইন। তাতে হলোটা কী? এটা খুবই একটা আনুষ্ঠানিক ছবি। এই ছবির মাধ্যমে কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার কমবেশি প্রমাণ হয়? কূটনীতি বিষয়ে যাঁদের খুবই অল্প জ্ঞান রয়েছে তাঁরাও জানেন, ছবিতে কিছু হয় না। আনুষ্ঠানিক ছবি তো দূরের কথা, একেবারে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার ছবিও কূটনীতির ক্ষেত্রে তেমন কিছু কাজে লাগে না। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সম্পর্ক তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময়, এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও সবাই মনে করতেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে খুবই ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সে সময় ট্রাম্প তাঁর একাধিক ব্যক্তিগত পোস্টে মোদিকে ‘মাই ফ্রেন্ড’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখা গেল ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরূপ আচরণ। বিশ্বব্যাপী পাল্টা শুল্কের যে যুদ্ধ ট্রাম্প শুরু করলেন, সেখানে সবচেয়ে কঠোর আচরণ করলেন তিনি ভারত ও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। শুল্কের পর অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়েও এমন কিছু আচরণ করলেন, যা ভারতীয়দের জন্য রীতিমতো অপমানজনক। অথচ হিসাব করলে দেখবেন, মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ের যত ছবি ট্রাম্পের আছে, তত বেশি অন্য কোনো সরকারপ্রধানের সঙ্গে নেই। কাজেই ছবিতে কিছু যায় আসে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে ড. ইউনূসের ছবি নয়, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়বহুল এই সফর থেকে আমাদের অর্জন কতটুকু হলো, সেটা। ছবি যদি চরম সত্যও হয়ে থাকে, তারপরও কিন্তু যে কেউ-ই স্বীকার করবেন গতবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে যতটুকু গুরুত্ব ড. ইউনূস পেয়েছিলেন, তার কিছুই হয়নি এবার। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তখন যে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ড. ইউনূসকে, তাতে জাতি হিসেবে আমরা বেশ ভালোই সম্মানিত বোধ করেছিলাম। আমরা তুলনা করেছিলাম পূর্ববর্তী শাসকের সঙ্গে। ভেবেছিলাম, আমরা সরকারপ্রধান হিসেবে এমন একজনকে পেয়েছি, যিনি সারা দুনিয়ার কাছে আমাদের দেশকে উচ্চ আসনে বসাতে পারবেন। এখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, অর্থনীতির হু হু করে উন্নতি হবে, সাধারণ মানুষের গরিবি কমবে। সে রকম কিছু কি হয়েছে? হয়নি। তাই এক বছর পরে এসে আর সে রকম কিছু প্রত্যাশার সাহসও অনেকে পাচ্ছেন না। আশাভঙ্গের অনুভূতি ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মানুষ এরই মধ্যে হিসাব করতে বসেছে—এই বহরের পেছনে ব্যয় কত হলো? বিনিময়ে পেলামটা কী? নিজেকে আসলেই একটু আবুল আবুল লাগছে!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় আচার নয়, এটি আনন্দ, মিলন আর প্রাণের উৎসবও বটে। উৎসব মানেই নতুন প্রাণের সঞ্চার—শিশুর চোখে নতুন জামার স্বপ্ন, মায়ের মুখে সিঁদুরের লাল আভা, আর পরিবারের সবাই মিলে জমে ওঠে কেনাকাটার উৎসব। তখন ঘরে ঘরে বাজে আনন্দের ঢোল, চারপাশ ভরে ওঠে উৎসবের আমেজে।
৫ ঘণ্টা আগেবিশ্ব পর্যটন দিবসেই আজকের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে এক মন খারাপ করা খবর। দখল হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি। দখল করে অবৈধ স্থাপনা বসানো হচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগেমাত্র ২০০ বছর আগেও পৃথিবীটা ভালো ছিল, ছিল স্বাস্থ্যকর, পরিবেশ ছিল সবুজ-শ্যামলিমায় শান্ত-স্নিগ্ধ আরামদায়ক। বনে বনে ছিল বন্য প্রাণীদের আনন্দময় বিচরণ, গাছে গাছে ছিল পাখিদের কূজন, নদীতে-সাগরে সাঁতরে বেড়াত ডানকানা মাছ-ডলফিন ও দৈত্যাকার তিমিরা। মানুষও ছিল হাসিখুশি, বায়ুমণ্ডল থেকে মানুষও বুকভরে নিতে পারত
১ দিন আগে‘আচ্ছা, আমরা গেলাম, তোমরা ভালো থেকো’—ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত সপ্তাহের ইউক্রেন-সম্পর্কিত বক্তব্যকে এভাবেই সংক্ষেপে বলা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হঠাৎ ঘোষণা করলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছ থেকে তার সব হারানো ভূখণ্ড ফিরে পেতে পারে, তবে সেটা কেবল ইউরোপের সমর্থনে।
১ দিন আগে