Ajker Patrika

দখল

সম্পাদকীয়
দখল

বিশ্ব পর্যটন দিবসেই আজকের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে এক মন খারাপ করা খবর। দখল হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি। দখল করে অবৈধ স্থাপনা বসানো হচ্ছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চলে বটে; কিন্তু স্থাপনাগুলো বারবার ফিরে ফিরে আসে। বলা হচ্ছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক শৈথিল্যের কারণে এসব ঘটছে। প্রশ্ন জাগে মনে, তাহলে কোন পরিবর্তনটা হলো এত দিনে? ‘যেই লাউ, সেই কদু’ই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কি চোর সরিয়ে বাটপারের জায়গা হলো সমুদ্রসৈকতে?

আসলে সবকিছু হয় পেশির জোরে, আর রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে। যখন এ দুটি অস্ত্র থাকে কারও হাতে, তখন সে কাউকে আর পরোয়া করে না। দখল করে নিতে থাকে সরকারি জমি। মজার ব্যাপার কি দেখুন! সপ্তাহখানেক আগে কক্সবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসককে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব পদে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করার আদেশ আসার সঙ্গে সঙ্গেই দখলবাজেরা সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে শতাধিক টংঘর বসানোর চেষ্টা করে। আর ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো তাদের চাকা দাবিয়ে দিচ্ছে বালুতে। বালুতে যখন ঢেকে যাবে চাকা, তখন তা স্থায়ী দোকান হয়ে যাবে। কে আর তাদের ঘাটাতে যাবে? পেছনে কারও আশীর্বাদ না থাকলে কি এ ধরনের দুঃসাহস দেখানো যায়?

এই দখলদারত্ব নিয়ে সম্প্রতি পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়; কিন্তু তাতে কি কাজ হবে? কিছুকাল আগের একটা ব্যাপার তো সবারই স্মরণে থাকার কথা। জানুয়ারি মাসেই তো তোড়জোড় করে ভেঙে ফেলা হলো দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হলো? কিছুদিনের মধ্যেই আবার ধীরে ধীরে গড়ে উঠল স্থাপনা। তাই এবারকার অভিযানের পর কিছুদিন অতিক্রান্ত হলে আবারও তারা ফিরে আসবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?

প্রকৃতিকে আমরা ইচ্ছামতো নষ্ট করছি। প্রকৃতি এর প্রতিশোধ নেবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম বড় একটি কারণ হলো, প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করা, পরিবেশ নষ্ট করা। আইনি পথে এর প্রতিকার আছে। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। কেন বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। এবং এ-ও বোঝা যাচ্ছে, এই দখলদারির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে দোষ দেওয়া যাবে না। যারাই আসবে ক্ষমতায়, তাদেরই নাম ভাঙিয়ে পুলিশে, জেলা প্রশাসন অফিসে, ভূমি অফিসে, ইউএনও অফিসে পৌঁছে যাবে একদল লোক। এই লোকদের শক্তি হলো সরকারি ক্ষমতা। এই লোকদের ভয় পাবে সাধারণ মানুষ। তারা চাইলেই যেকোনো প্রতিবাদকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে পেশিশক্তি ব্যবহার করে। নির্দিষ্ট কোনো ফোন এলে আইনও নির্বিকারভাবে বসে থাকে।

কিন্তু তারপরও প্রতিবাদ করে যায় সচেতন মানুষ। ভয়কে জয় করে এগিয়ে যেতে চায়। প্রশাসন যদি প্রতিবাদকারীদের পাশে এসে দাঁড়াত, তাহলে সহজেই এই দখলদারির সমাপ্তি ঘটত। কিন্তু ঘটে না। ঘটবে কবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত