Ajker Patrika

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ পরিত্যাগ করে বাস করা মানুষের জন্য দুরূহ ব্যাপার। তাইতো মানুষ সৃষ্টি থেকে অদ্যাবধি সমাজ নামক সংগঠনটি মানবের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে আসছে। মূলত হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) জান্নাতে থাকতেই পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং পৃথিবীতে তাঁদের আগমনের পর সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আজও সে সমাজব্যবস্থা আমাদের মাঝে বিদ্যমান। সমাজের কথা বলতে গেলে যাঁদের কথা সর্বপ্রথম আসে, তাঁরা হলেন আমাদের প্রতিবেশী। কোরআন মজিদে যাকে ‘আল-জার যিল-কুরবা’ বলা হয়েছে। প্রতিবেশীদের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে আমাদের সমাজ।

সাধারণত যাঁরা পাশাপাশি বসবাস করেন, তাঁদের প্রতিবেশী বলা হয়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে স্বীয় গৃহের চতুর্দিক থেকে কমপক্ষে ৪০টি ঘরের বাসিন্দাকে প্রতিবেশী বলে আখ্যায়িত করা হয়। হাদিসেও ৪০ ঘরের কথাই বলা হয়েছে। ইমাম জুহরি (র.) বলেন, ‘নিজ গৃহের সম্মুখ দিকে ৪০, পেছনে ৪০, ডানে ৪০ ও বামে ৪০ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশী বলে ধর্তব্য হবে।’ প্রতিবেশীকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এক. আত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশী–যাঁরা আত্মীয়, মুসলিম ও প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে তিন গুণ হকের অধিকারী। দুই. মুসলিম প্রতিবেশী–যাঁরা মুসলিম ও প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে দুই গুণ হকের অধিকারী। তিন. অমুসলিম প্রতিবেশী–যাঁরা শুধু প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে এক গুণ হকের অধিকারী হয়। এ ছাড়াও স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে যাঁরা পাশাপাশি বাস করেন অথবা একত্রে চলাফেরা করেন, তাঁরাও প্রতিবেশীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন, একত্রে লেখাপড়া করা, চাকরি করা অথবা কোনো যানবাহনে ভ্রমণসাথি হওয়া ইত্যাদি।

ইসলাম প্রতিবেশীর অধিকার ও কর্তব্যের প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করেছে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘প্রতিবেশীর ব্যাপারে আমাকে জিবরাইল (আ.) এমনভাবে উপদেশ দিলেন যে, মনে হয়, তিনি তাঁদেরকে আমার উত্তরাধিকার নিযুক্ত করবেন।’ তাই প্রতিবেশীর অধিকার ও কর্তব্যসমূহ জানা ও তা বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

প্রতিবেশীর প্রথম অধিকার হলো, তাঁদের নিরাপত্তা দান করা। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ দ্বিতীয় অধিকার ও কর্তব্য হলো, অভাব-অনটনে সাহায্য করা। যদি প্রতিবেশী অভাবগ্রস্ত হয়, সাধ্যানুযায়ী তাঁর অভাবমোচন করা, ক্ষুধিত হলে খাদ্য প্রদান করা একান্ত কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘সে প্রকৃত মুমিন নয়, যে পেট ভরে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে।’ তৃতীয় অধিকার ও কর্তব্য হলো, প্রতিবেশীর ইজ্জতের অধিকার দেওয়া। প্রতিবেশী হিসেবে ইজ্জত রক্ষার্থে তাঁর দোষসমূহ গোপন রাখা এবং ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করা একান্ত কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অপরের দোষত্রুটি গোপন করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর দোষত্রুটি গোপন করবেন।’ চতুর্থ অধিকার ও কর্তব্য হলো, সদ্ব্যবহার ও সদাচরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথি, অসহায় পথিক ও দাসদাসীদের সঙ্গে সদাচরণ কর।’ (সুরা নিসা–৩৬)। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন: ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি নিজে ভালো নাকি মন্দ, তা কীভাবে জানব?’ সে ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে তিনি এরশাদ করেন, ‘তোমার প্রতিবেশী যদি তোমাকে ভালো বলে সাক্ষ্য দেয়, তবে তুমি অবশ্যই ভালো, আর যদি প্রতিবেশী খারাপ বলে সাক্ষ্য দেয়, তবে তুমি অবশ্যই খারাপ।’ পারস্পরিক সহানুভূতি প্রকাশ করাও প্রতিবেশীর অন্যতম অধিকার। পরস্পর সালাম বিনিময় করা, অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেওয়া, সুখের সংবাদে আনন্দিত হওয়া, দুঃখের সংবাদে দুঃখ লাঘবের নিমিত্তে এগিয়ে আসা, কেউ মৃত্যুবরণ করলে দ্রুত দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা এবং তার পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা প্রদান করা, প্রতিবেশীর যাতায়াতের পথ সংকীর্ণ না করা, ঘরের ছাদ প্রতিবেশীর ঘর থেকে উঁচু না করা, অনর্থক আলাপ দীর্ঘায়িত না করা, গোপন বিষয় সম্পর্কে জানতে না চাওয়াও প্রতিবেশীর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেশীর অন্যতম অধিকার ও কর্তব্য হলো বিশেষ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া ও উপহার প্রদান করা। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো বিশেষ খাদ্য তোমার বাড়িতে তৈরি করা হয়, তখন এর কিছু অংশ প্রতিবেশীকে দাও।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা পরস্পর উপঢৌকন দাও এবং পরস্পরকে ভালোবাস।’

সব শ্রেণির মানুষের সমন্বয়েই সমাজ গঠিত। আর সমাজের অন্যতম উপাদান প্রতিবেশী। ইসলামের সুমহান আদর্শ বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রতিবেশীদের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ জীবনে বাস্তবায়ন করি এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হই।
 
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘমল্লারের জবাবের পর ডাকসু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যা লিখলেন শশী থারুর

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন ফখরুল

শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না জাবি শিক্ষক মৌমিতার

অনিয়মের অভিযোগ এনে জাকসু নির্বাচন কমিশন সদস্যের পদত্যাগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত