Ajker Patrika

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবে কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবে কমিশন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে ‘সংবিধান আদেশ’, গণভোট ও সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে লিখিত মতামত জানাবেন বিশেষজ্ঞরা। পরে তাঁদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবে কমিশন।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশনের মনে হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবের বিষয়ে আরও পরিষ্কার হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সেটি বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আরেকটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। তাঁরা বিষয়গুলো আরও পর্যালোচনা করবেন, যা নিয়ে আরেকটি বৈঠক হতে পারে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ ধারা অনুযায়ী সংবিধান আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের সাংবিধানিক প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নেওয়ার প্রস্তাব দলগুলোর সামনে উত্থাপন করা হয়।

বিএনপিসহ একাধিক দল দাবি করেছে, জুলাই সনদের ২৫ ও ২৭ ধারার বিপরীত বক্তব্য বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন, যেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদ সংবিধান সংস্কারের কথা আছে। একই সঙ্গে দলগুলো সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে সমাধান করার প্রস্তাব দেয়।

ওই বৈঠকের বিষয়গুলো নিয়েই আজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন।

বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধানসম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ের সমাধান সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে করার চেষ্টা হলে সংকট কমার বদলে বাড়ার আশঙ্কা করেন তাঁরা। সেসব বিবেচনা করে প্রস্তাবটি বাদ দিয়ে ‘সংবিধান আদেশ’ ও গণভোটের সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

আজকের বৈঠকে তা নিয়ে আবারও আলোচনা করেন তাঁরা।

বৈঠকে উপস্থিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এক সদস্য বলেন, ‘১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেটি কীভাবে নিলে জুলাই সনদ কার্যকর হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। সে ক্ষেত্রে আমরা “সংবিধান আদেশ”, ১০৬ অনুচ্ছেদ এবং গণভোট মিলিয়ে জুলাই সনদের বৈধতা দেওয়ার পথ-পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছি। আমরা কমিশনে একটি লিখিত মতামত জমা দেব।’

এক সদস্য বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সংবিধান আদেশের বিষয়ে যেসব অসংগতির কথা রাজনীতিবিদেরা বলেছেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জুলাই ঘোষণাপত্রের অধীনে সংবিধান আদেশের কোনো সমস্যা নেই। যথাযথ ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সনদের ২৫ বা ২৭ ধারা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। কারণ জুলাই সনদ দেওয়া হয়েছে জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী।

‘সংবিধান আদেশ’-এর নজির পৃথিবীর কোথাও নেই—অনেকের এমন বক্তব্য নিয়েও আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নজির নেই—এটা ভুল কথা। কারণ প্রতিটি রাষ্ট্র-সমাজের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন। বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে সাংবিধানিক চাহিদা বা ব্যবস্থায় আছি, সে প্রয়োজন অনুসারে আমরা সংস্কার গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করব। নজির অন্য দেশে নেই, এটি কোনো যুক্তি নয়।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সনদের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সম্ভাব্য সুপারিশমালা নিয়ে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনার সারসংক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের অবহিত করা হয়। আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত, পরামর্শ ও উদ্বেগগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়, যাতে বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারেন।

পরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও কৌশল নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করা হয়। তাঁদের বিশ্লেষণ ও পরামর্শের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়ন করা হয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে তা বিবেচনায় নেওয়া হয়।

এতে কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগদান সারলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ, কনে বাগছাসের নেত্রী

উচ্চদক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা আনতে যে ৮ পরামর্শ দিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

আবাসিক হোটেলে তিন বন্ধু, মিলল একজনের লাশ

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ: গোল্ড ও প্লাটিনাম কার্ড ভিসার ঘোষণা ট্রাম্পের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত