Ajker Patrika

কারা সেফ এক্সিট নিতে চান, নাহিদ ইসলামকে তার প্রমাণ দিতে হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ২৬
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে চান, নাহিদ ইসলামকে তার প্রমাণ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর (নাহিদ ইসলাম) বক্তব্য তাঁকেই সাবস্ট্যান্টসিয়েট (সত্যতা প্রমাণ) করতে হবে। তাঁর বক্তব্যকে আমার সাবস্ট্যান্টসিয়েট করার বিষয় না, আমার খণ্ডানোরও বিষয় না।’

উপদেষ্টাদের অনেকে সেফ এক্সিট খুঁজছেন বলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে, ওই ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশে থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে যাব আপনাদের সঙ্গে ইনশা আল্লাহ।’

আজ বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেখানে ছাত্র প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন এবং তাঁদের ভেতর থেকে একজন উপদেষ্টা বের হয়ে রাজনৈতিক দল করেছেন। আরও দুজন উপদেষ্টা আছেন। সরকার থেকে বের হয়ে আসা উপদেষ্টা এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কিছু উপদেষ্টা তাঁদের সঙ্গে বিট্রে (প্রতারণা) করেছেন, যা তাঁরা আশা করেননি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে। সময় হলে এই উপদেষ্টাদের নাম বলা হবে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘এখন নাহিদ ইসলাম কেন, কোন কথা বললেন, উনি যে নামগুলো প্রকাশ করেননি, যে আলোচনার বিষয়গুলো প্রকাশ করেননি, সেটা নিয়ে আমি কেমন করে মন্তব্য করব? আমি যেটুকুন দেখতে পাই খোলা চোখে, সেটা হচ্ছে, সব রাজনৈতিক দলের মতো এই নবগঠিত রাজনৈতিক দলের (এনসিপি) সঙ্গে সরকারের ভালো একটা ওয়ার্কিং রিলেশন। এটা উনি অভিমান থেকে বলেছেন নাকি এটা উনার কোনো একটা ব্যাপারে গ্রিভেন্স (ক্ষোভ) আছে—এই বিষয়গুলো পরিষ্কার উনাকে করতে হবে। উনি যদি কখনো কোনো বিষয় পরিষ্কার করেন, তখন সেটা নিয়ে সরকারের বক্তব্য বা কথা আসে, তার আগে তো সরকারের বক্তব্যের কোনো সুযোগ নেই।’

নাহিদ ইসলামের সঙ্গে এসব নিয়ে সরকারের কোনো ধরনের কথা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে রিজওয়ানা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতারা নানা বিষয়ে নানা কথা বলে যাচ্ছে, এটা তাদের অধিকার। এটাই গণতন্ত্রের চর্চা, প্রতিটি বিষয় নিয়ে যদি আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই, প্রতিটি বিষয় নিয়ে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো আমরা কখন চালাব? অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

স্পেসিফিক বলা হচ্ছে যে, উপদেষ্টারা সব বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন, এক্সিট খুঁজছেন। বিষয়টি নজরে আনলে রিজওয়ানা বলেন, ‘তাঁর (নাহিদ ইসলাম) বক্তব্য তাঁকেই সাবস্ট্যান্টসিয়েট (সত্যতা প্রমাণ) করতে হবে। তাঁর বক্তব্যকে আমার সাবস্ট্যান্টসিয়েট করার বিষয় না, আমার খণ্ডানোরও বিষয় না৷ তথ্যপ্রমাণ-উপাত্ত, মানে বক্তব্যটা স্পেসিফিক হলে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলা হতো। এটা হয়তো তাঁদের ধারণা, তাঁরা মনে করেন তাঁদের বক্তব্য হিসেবে বলেছি। এখানে সরকারের অবস্থান নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। সরকারের বক্তব্য দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’

আসলেই কি কোনো উপদেষ্টা সেফ এক্সিট খুঁজছেন—জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশেই ছিলাম। এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে, ওইসব ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশে থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে যাব, আপনাদের সঙ্গে থাকব ইনশা আল্লাহ।’

পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘শুধু সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়। সব রাজনৈতিক দলও আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে। এ জন্য তারা (রাজনৈতিক দল) তাদের কার্যক্রমও শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশন হবে, এখানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তোলার আর কোনো সুযোগ বা অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করছি না।’

এই অন্তর্বর্তী সরকারই কি নির্বাচন করবে, না ছোট ফরম্যাটে আরও একটি নির্বাচনকালীন সরকার হবে—জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এ রকম কোনো কথা শুনিনি। এই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন করবে, এখন এটাই হচ্ছে অবস্থা এবং অবস্থান।’

সংস্কার-বিচার প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এগুলো চলমান প্রক্রিয়া, বিচার বিচারের গতিতে চলছে। বিচার কীভাবে চলছে, সেটা সবাই প্রত্যক্ষ করতে পারছেন। সরকার চায় সুবিচার নিশ্চিত হোক।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচার কখন শেষ হবে? শুনানি প্রক্রিয়া শেষ হবে, সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে, তারপরে বলা যাবে। আমি তার আগে বলতে পারব না যে, অক্টোবর মাসে রায় হবে। প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বলা যাবে। দেড় বছরে বিচারের রায় হয়, এটি আমরা আগেও দেখেছি। আমরা আশা করি, বিচারের রায় হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়নি, এটি ঠিক না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ঐকমত্যের বাস্তবায়ন কেমন করে হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নানা অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, দু-একটা অপশনের দিকে রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সমর্থন দিয়েছে। আপনি যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটা প্রশ্নের সমাধান চান, সেটায় আপস অ্যান্ড ডাউন হবেই। স্মুথ যাওয়ার সুযোগ নেই। স্মুথ যেটা যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে আলোচনা, সবাই আলোচনায় আসছেন, সবাই মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু পরিবর্তন কী করে হবে, সেখানে রাজনৈতিক ডিবেট থাকবেই। সেখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

ইনক্লুসিভ নির্বাচনের সংজ্ঞা আসলে আপনাদের কাছে কী—জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকার প্রথম থেকে বলেছে, সরকার একটা স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। জনগণ যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, সেই নির্বাচনটা চায় এবং জনগণের অংশগ্রহণের পথে যাতে কোনো কিছু অন্তরায় না হয়, সে জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে যতভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, ততভাবে সহায়তা দেবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা বা না-করা নিয়ে বিষয়টি আইনি হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত