তানিম আহমেদ, ঢাকা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান দীর্ঘ সংলাপপ্রক্রিয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কথা জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অঙ্গীকারনামায় ছিল না। কারও কারও দ্বিমত থাকা এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তার উল্লেখ না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত ভাষ্য সংশোধন করে নোট অব ডিসেন্ট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী দলের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে জুলাই জাতীয় সনদের পটভূমির বিবরণে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডবের’ ধারাবাহিকতায় এক-এগারো হওয়া, স্বৈরাচারী শাসকের স্থলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ কথাগুলো প্রতিস্থাপনসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সংযোজন হচ্ছে। এ ছাড়া সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্যে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
অতীতের মতো কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা ফিরে আসা ঠেকানোর লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপে সংলাপের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করে ঐকমত্য কমিশন। পরে তাদের সুপারিশ আমলে নিয়ে তৈরি করা সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য গত ১১ সেপ্টেম্বর দলগুলোকে দেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়, সনদের বিষয়ে কোনো নতুন মতামত নেওয়া হবে না। তবে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আয়োজিত তৃতীয় ধাপের সংলাপে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন তোলে। তখন অঙ্গীকারনামাসহ সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যে কিছু সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যে সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত-পরামর্শের পাশাপাশি আমরাও সনদে কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করেছি। সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। যাতে করে সনদে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের প্রতিফলন দেখা যায়।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। ৫ অক্টোবর আবারও বৈঠকে হবে। তার আগেই দলগুলোর কাছে সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্য পাঠানো হবে। দলগুলোর মতামত নিয়ে এটি বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবে কমিশন। এরপর ৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো রাজি হলে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঘটা করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১১ সেপ্টেম্বর পাঠানো চূড়ান্ত ভাষ্যে ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্যে ৮০টি বিষয় রয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়োগের প্রস্তাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় চারটি বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সর্বশেষ ঐকমত্য হওয়া ৮০টি প্রস্তাবে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় সাতটি ধারা রয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া আট নম্বর ধারায় বলা আছে, সনদের যেসব ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া রাজনৈতিক দল সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
পটভূমিতে যুক্ত নিকট ইতিহাস
চূড়ান্ত ভাষ্যে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির পটভূমি হিসেবে পাকিস্তানি শাসনামলসহ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও বঞ্চনার পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে একমাত্র দল বাকশাল গঠন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ ইতিহাসের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ আছে। চূড়ান্ত ভাষ্যের পটভূমিতে ছিল ১৯৭৬ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন ভাষ্যে ১৯৭৬ সালের কথাটি বাদ দিয়ে লেখা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
পটভূমির আরেক অংশে ২০০৬ সালে কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও ‘অস্বাভাবিক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সংশোধন করে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠার তাণ্ডবে দেশে কয়েকটি নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়।’
আগের চূড়ান্ত ভাষ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে বলা হয়েছে, শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ প্রায় ১ হাজার নাগরিক নিহত হয়। সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্যে ১ হাজারের জায়গায় ‘সহস্রাধিক’ বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ‘জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসরেরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়’–এ অংশে স্বৈরাচারী শাসকের স্থলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ এবং পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার আগে ‘অনেকেই’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশন গঠন অংশে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কমিশনে লিখিত মতামত দেওয়ার কথা যুক্ত করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম অংশে দলগুলো সংলাপের ভিত্তিতে ‘কিছু বিষয়ে ভিন্নমতসহ’ জাতীয় সনদ তৈরিতে সম্মত হয়েছে—এ কথা যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া চূড়ান্ত ভাষ্যে ‘২০০৯ সাল-পরবর্তী ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের’ কথা নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন ও অন্যান্য
সংলাপে পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়। তবে দলগুলোর কাছে পাঠানো চূড়ান্ত ভাষ্যে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার উল্লেখ ছিল না। সংশোধিত ভাষ্যে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে বলা হয়, কমিশন নিশ্চিত করবে পুলিশ যাতে আইনানুগভাবে এবং প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে কমিশন। ৯ সদস্যের কমিশনে কমপক্ষে ২ জন নারী রাখার কথা বলা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (বয়স ৭৫-এর বেশি নয়), সদস্যসচিব হবেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ-মহাপরিদর্শকের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা (বয়স অনূর্ধ্ব ৬২ বছর), সদস্য হিসেবে থাকবেন জাতীয় সংসদের নেতার প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), স্পিকারের প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), সচিব পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন), জেলা জজ পদমর্যাদার নিচে নন এমন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী এবং ১০ বছরের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানবাধিকারকর্মী।
সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি ছাড়া চেয়ারম্যান, সদস্যসচিবসহ বাকি ৫ জনের নিয়োগের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারপতির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এর চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব হবেন সার্বক্ষণিক, বাকি সাত সদস্য হবেন অবৈতনিক।
পুলিশ কমিশনের সদস্যদের কার্যক্ষমতার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাহিনীর সদস্যদের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা, পুলিশকে বেআইনি প্রভাব বা হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা প্রদানে নিজ বিবেচনায় নির্দেশনা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নাগরিকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা মহল কর্তৃক বেআইনি চাপ প্রয়োগ, অবৈধ বা বিধিবহির্ভূত কাজে বাধ্য করা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো পুলিশের অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা, পুলিশব্যবস্থা সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা চিহ্নিত করে যথাযথ ও যুগোপযোগী করার সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও পরিচালনা, অভিযোগের তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কমিশন পুলিশের যেকোনো সংস্থা, এমনকি প্রয়োজন মনে করলে সরকারের সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে পারবে। তাদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান দীর্ঘ সংলাপপ্রক্রিয়ায় সমঝোতার অংশ হিসেবেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের কথা জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যের অঙ্গীকারনামায় ছিল না। কারও কারও দ্বিমত থাকা এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তার উল্লেখ না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল। এমন অবস্থায় চূড়ান্ত ভাষ্য সংশোধন করে নোট অব ডিসেন্ট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী দলের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে জুলাই জাতীয় সনদের পটভূমির বিবরণে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডবের’ ধারাবাহিকতায় এক-এগারো হওয়া, স্বৈরাচারী শাসকের স্থলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ কথাগুলো প্রতিস্থাপনসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সংযোজন হচ্ছে। এ ছাড়া সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্যে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
অতীতের মতো কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা ফিরে আসা ঠেকানোর লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপে সংলাপের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করে ঐকমত্য কমিশন। পরে তাদের সুপারিশ আমলে নিয়ে তৈরি করা সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য গত ১১ সেপ্টেম্বর দলগুলোকে দেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়, সনদের বিষয়ে কোনো নতুন মতামত নেওয়া হবে না। তবে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আয়োজিত তৃতীয় ধাপের সংলাপে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন তোলে। তখন অঙ্গীকারনামাসহ সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যে কিছু সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যে সংযোজন-বিয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত-পরামর্শের পাশাপাশি আমরাও সনদে কিছু কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করেছি। সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। যাতে করে সনদে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের প্রতিফলন দেখা যায়।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। ৫ অক্টোবর আবারও বৈঠকে হবে। তার আগেই দলগুলোর কাছে সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্য পাঠানো হবে। দলগুলোর মতামত নিয়ে এটি বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবে কমিশন। এরপর ৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো রাজি হলে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঘটা করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১১ সেপ্টেম্বর পাঠানো চূড়ান্ত ভাষ্যে ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্যে ৮০টি বিষয় রয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়োগের প্রস্তাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় চারটি বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সর্বশেষ ঐকমত্য হওয়া ৮০টি প্রস্তাবে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় সাতটি ধারা রয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া আট নম্বর ধারায় বলা আছে, সনদের যেসব ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া রাজনৈতিক দল সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
পটভূমিতে যুক্ত নিকট ইতিহাস
চূড়ান্ত ভাষ্যে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির পটভূমি হিসেবে পাকিস্তানি শাসনামলসহ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও বঞ্চনার পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে একমাত্র দল বাকশাল গঠন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ ইতিহাসের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ আছে। চূড়ান্ত ভাষ্যের পটভূমিতে ছিল ১৯৭৬ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন ভাষ্যে ১৯৭৬ সালের কথাটি বাদ দিয়ে লেখা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
পটভূমির আরেক অংশে ২০০৬ সালে কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও ‘অস্বাভাবিক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সংশোধন করে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠার তাণ্ডবে দেশে কয়েকটি নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়।’
আগের চূড়ান্ত ভাষ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে বলা হয়েছে, শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ প্রায় ১ হাজার নাগরিক নিহত হয়। সংশোধিত চূড়ান্ত ভাষ্যে ১ হাজারের জায়গায় ‘সহস্রাধিক’ বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ‘জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী শাসক ও তার দোসরেরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়’–এ অংশে স্বৈরাচারী শাসকের স্থলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ এবং পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার আগে ‘অনেকেই’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশন গঠন অংশে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কমিশনে লিখিত মতামত দেওয়ার কথা যুক্ত করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম অংশে দলগুলো সংলাপের ভিত্তিতে ‘কিছু বিষয়ে ভিন্নমতসহ’ জাতীয় সনদ তৈরিতে সম্মত হয়েছে—এ কথা যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া চূড়ান্ত ভাষ্যে ‘২০০৯ সাল-পরবর্তী ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের’ কথা নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন ও অন্যান্য
সংলাপে পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়। তবে দলগুলোর কাছে পাঠানো চূড়ান্ত ভাষ্যে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার উল্লেখ ছিল না। সংশোধিত ভাষ্যে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে বলা হয়, কমিশন নিশ্চিত করবে পুলিশ যাতে আইনানুগভাবে এবং প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে কমিশন। ৯ সদস্যের কমিশনে কমপক্ষে ২ জন নারী রাখার কথা বলা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি (বয়স ৭৫-এর বেশি নয়), সদস্যসচিব হবেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ-মহাপরিদর্শকের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা (বয়স অনূর্ধ্ব ৬২ বছর), সদস্য হিসেবে থাকবেন জাতীয় সংসদের নেতার প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), স্পিকারের প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি (সংসদ সদস্য), সচিব পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন), জেলা জজ পদমর্যাদার নিচে নন এমন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী এবং ১০ বছরের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানবাধিকারকর্মী।
সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের প্রতিনিধি ছাড়া চেয়ারম্যান, সদস্যসচিবসহ বাকি ৫ জনের নিয়োগের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারপতির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এর চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব হবেন সার্বক্ষণিক, বাকি সাত সদস্য হবেন অবৈতনিক।
পুলিশ কমিশনের সদস্যদের কার্যক্ষমতার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাহিনীর সদস্যদের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা, পুলিশকে বেআইনি প্রভাব বা হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা প্রদানে নিজ বিবেচনায় নির্দেশনা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নাগরিকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা মহল কর্তৃক বেআইনি চাপ প্রয়োগ, অবৈধ বা বিধিবহির্ভূত কাজে বাধ্য করা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো পুলিশের অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা, পুলিশব্যবস্থা সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের দুর্বলতা ও অসম্পূর্ণতা চিহ্নিত করে যথাযথ ও যুগোপযোগী করার সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও পরিচালনা, অভিযোগের তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কমিশন পুলিশের যেকোনো সংস্থা, এমনকি প্রয়োজন মনে করলে সরকারের সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে পারবে। তাদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে।
২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করছে এই স্টেশন থেকে। এরপর প্রায় দুই বছর হতে চললেও এখনো চালু হয়নি স্টেশনের ছয়তলা আধুনিক ভবনটি। ফলে আইকনিক এই স্টেশনে থাকা হোটেল, ফুড কোর্ট, শোরুম, মাল্টিপারপাস হলসহ নানা...
১ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য আগামী নভেম্বরে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামে একটি অ্যাপস উদ্ভোধন করার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমি
৪ ঘণ্টা আগেঅধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর জাতীয় শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে পালন করবে এই বিশেষ সপ্তাহ। এবারের বিশ্ব শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিশুর কথা বলব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ’।
৪ ঘণ্টা আগেগাজার ওপর ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একতরফা অবরোধ ভেঙে সারা পৃথিবী থেকে ছুটে চলা ত্রাণবাহী বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় যোগ দেওয়ায় দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ঢাকার ফিলিস্তিনি দূতাবাস।
৪ ঘণ্টা আগে