Ajker Patrika

‘বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি হিন্দু ঐতিহ্য’: তসলিমা নাসরিনের মন্তব্যের জবাব দিলেন জাভেদ আখতার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাভেদ আখতার ও তসলিমা নাসরিন। ছবি: সংগৃহীত
জাভেদ আখতার ও তসলিমা নাসরিন। ছবি: সংগৃহীত

বাঙালি সংস্কৃতির উৎস ও ভিত্তি নিয়ে তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তাঁর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন ভারতের বিশিষ্ট কবি, গীতিকার জাভেদ আখতার।

দুর্গাপূজার মহালগ্ন অষ্টমী তিথিতে তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিস্ফোরক পোস্ট করেন। সেই পোস্টে তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেন, বাঙালি মুসলিমদের সংস্কৃতিসহ সমগ্র বাঙালি সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো হিন্দু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। তাঁর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাভেদ আখতার বাঙালি সংস্কৃতিকে সম্মান জানালেও, উত্তর ভারতের ‘গঙ্গা-যমুনা আওয়াধি সংস্কৃতি’র অপরিহার্যতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ রাজের ঐতিহাসিক গ্রন্থে আওয়াধ মূলত অবধ বা অউধ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ নেপালের একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল, যা বর্তমানে উত্তর প্রদেশের মধ্যাঞ্চল গঠন করেছে। এটি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মগ্রন্থের প্রাচীন কোশল অঞ্চলের প্রায় সমার্থক।

আওয়াধ মুঘল সাম্রাজ্য-সহ ভারতের সব প্রধান ইসলামি শাসক বংশের একটি প্রদেশ ছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকালে, উত্তর ভারতে নবাব নামে পরিচিত এগারো জন শাসকের শাসনামলে আওয়াধ সাহিত্য, শিল্প, ধর্মীয় এবং স্থাপত্যকলার পৃষ্ঠপোষকতার একটি প্রধান উৎস হয়ে ওঠে। ১৭২০ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত, নবাবেরা আওয়াধের নেতৃত্ব দেন। অযোধ্যা এবং ফৈজাবাদ এই অঞ্চলের প্রাথমিক রাজধানী ছিল। পরে, রাজধানী লক্ষ্ণৌতে স্থানান্তরিত হয়, যা বর্তমানে উত্তর প্রদেশের রাজধানী।

১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা আওয়াধ দখল করে। এতে ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭-৫৮) সূচনা হয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম সর্ববৃহৎ বিদ্রোহ।

দুর্গাপূজা উদ্‌যাপনের সময় একটি প্যান্ডেলের ছবি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মুহূর্ত পোস্ট করে তসলিমা নাসরিন এই বিতর্ক শুরু করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি জাতিগত পরিচয়ে ভারতেরই অংশ।

তাঁর যুক্তি হলো—লুকানোর কিছু নেই: হিন্দু সংস্কৃতিই হলো বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি। ইতিহাসের গতিপথে আমরা বাঙালিরা যে ধর্ম বা দর্শনই গ্রহণ করে থাকি না কেন, আমাদের জাতীয় পরিচয় ভারতেরই অন্তর্গত।

তসলিমা ঐতিহাসিক যুক্তির ওপর ভিত্তি করে আরও বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম এবং এমনকি ভারতের নাস্তিকদের পূর্বপুরুষেরা সকলেই, বা প্রায় সকলেই, ভারতীয় হিন্দু ছিলেন।’

ইসলামি ঐতিহ্যের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত এই লেখিকা জোর দিয়ে বলেন, বাঙালি মুসলিমদের সংস্কৃতি আরব দেশের সংস্কৃতি নয়। তিনি লেখেন, ‘একজন বাঙালি মুসলিম হলেও তার সংস্কৃতি আরবের সংস্কৃতি নয়। তার সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতি, এবং সেই সংস্কৃতি হিন্দু ঐতিহ্যে নিহিত।’ তসলিমা ঢোল, গান ও নাচের মতো সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে বাঙালি সংস্কৃতির আদিমতম প্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এর অর্থই হলো বাঙালি হওয়া। একে অস্বীকার করা নিজেকেই অস্বীকার করার শামিল।’

তসলিমা নাসরিন ও জাভেদ আখতারের বিতর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা তুঙ্গে। ছবি: স্ক্রিনশট
তসলিমা নাসরিন ও জাভেদ আখতারের বিতর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা তুঙ্গে। ছবি: স্ক্রিনশট

তবে এই একদেশদর্শী ধারণার সমালোচনা করে ‘গঙ্গা-যমুনা তেহজিব’-এর কথা উল্লেখ করেছেন জাভেদ আখতার। তিনি ভারসাম্যের বার্তা দিয়েছেন।

জাভেদ আখতার, হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয়মূলক ধারার প্রবক্তা হিসেবেই পরিচিত। তিনি তসলিমা নাসরিনের বক্তব্যের সঙ্গে আংশিকভাবে সহমত হলেও এটিকে আরও বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার আহ্বান জানান।

তিনি গঙ্গা-যমুনা তেহজিব-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর মতে, উত্তর ভারতে বিকশিত এই সংস্কৃতি হিন্দু-মুসলিম সংমিশ্রণ ও সমন্বয়কে বোঝায়। জাভেদ আখতার বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী আওয়াধের মানুষ হিসেবে বাঙালি সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা রয়েছে।’ তবে তিনি তসলিমা নাসরিনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কিন্তু কেউ যদি মহান গঙ্গা-যমুনা আওয়াধি সংস্কৃতি এবং এর পরিশীলিত দিকটি, এর সূক্ষ্মতা উপলব্ধি ও সম্মান করতে না পারে, তবে এটি তাঁরই ক্ষতি।’

জাভেদ আখতার এও উল্লেখ করেন, এই মিশ্র সংস্কৃতির মূল আরবের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তিনি বরং ফারসি এবং মধ্যএশীয় সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাবের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, এই সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাব ভারতীয় সমাজে তার নিজস্ব শর্তে প্রবেশ করেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘অনেক বাঙালি পদবিও ফারসি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭৫ বছরের বর ও ৩৫ বছরের কনে, বাসররাতের পরদিনই মৃত্যু

‘বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি হিন্দু ঐতিহ্য’: তসলিমা নাসরিনের মন্তব্যের জবাব দিলেন জাভেদ আখতার

‘দুবাই শেখ সেক্স পার্টনার খুঁজছেন’, ‘দিল্লি বাবা’র চাঞ্চল্যকর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট

বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তামিম

এনসিপি-গণঅধিকার একীভূতকরণ: নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, গতি নেই আলোচনায়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত