Ajker Patrika

কোটা সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভে সহিংসতা: ৫ দিনে যা যা ঘটল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৯: ২৮
কোটা সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভে সহিংসতা: ৫ দিনে যা যা ঘটল

কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে সেই সংঘর্ষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লিপ্ত হলেও পরে আর তা ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। স্থানীয়রাসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বেড়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুক্রবার রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কারফিউর মধ্যেই শনি ও রোববার সংঘর্ষ চলে। 

এর মধ্যে বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানায়। পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে যায় গত পাঁচ দিনে। নজিরবিহীন এই সহিংসতার মধ্যে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিটিভিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কোটার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত নাশকতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। এ অবস্থায় ১৭ জুলাই থেকে সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বন্ধ থাকে। সহিংসতার এই পাঁচ দিনে যা যা ঘটেছে, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

বৃহস্পতিবার যা ঘটেছিল
‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার ২৫ স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়, ৪৮ স্থানে সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন অন্তত ২৮ জন। এ চিত্র দেশের বড় বড় নগরসহ অনেক জেলা শহরেও। সংঘর্ষ-গুলিতে দিন শেষে শিক্ষার্থী-সাংবাদিক-পথচারীসহ নিহত অন্তত ২৮। আহত দেড় হাজারের বেশি। এর আগে বুধবার মধ্যরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম শাটডাউনে দেশের সব অফিস-আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানায়। ঠিক তখন থেকেই যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজাসহ শনির আখড়ার অন্তত ২০টি জায়গায় আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন। সেখান থেকে রাতেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত অজ্ঞাত একজনকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঘণ্টাখানেক বিরতির পর সকাল থেকে একই স্থানে আবার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, উত্তরা, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি ও মিরপুর এলাকা। সড়কে থাকা পুলিশের অধিকাংশ ট্রাফিক বক্স, পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল, সরকারি নানা স্থাপনা, সরকারি গাড়ি, ফুটওভার ব্রিজ, গণপরিবহন, এমনকি বিটিভি কার্যালয়ে আগুন দেওয়াসহ ভাঙচুর করা হয়। 

সকাল সাড়ে ১০টায় মেরুল বাড্ডা এলাকায় রাজধানীর প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা পাশের রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদিন সকাল ১০টায় অবরোধ শুরু হয় রামপুরা-কুড়িল সড়কে। রাস্তায় নামেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টার পর রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র‍্যাবের সংঘর্ষ হয়। সেখানে ঘটনাস্থলে দুজনসহ ছয়জন নিহত হন। বেলা ১১টায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এরপর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তা পুরোপুরি অবরোধ করেন। এই সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় হাতিরঝিল পুলিশ বক্স। বেলা ২টায় র‍্যাবের হেলিকপ্টার কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া পুলিশের সদস্যদের উদ্ধার করে।

বিটিভি ভবনে হামলা: বৃহস্পতিবার ঢাকার রামপুরায় বিটিভি ভবনে দিনভর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি এর নিয়ন্ত্রণকক্ষেরও দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিল হামলাকারীরা। বিটিভি কার্যালয়ের মুজিব কর্নার এবং ঢাকা কেন্দ্রের নিরাপত্তা গেট, অভ্যর্থনা কক্ষসহ অন্তত আটটি স্থানে আগুন দেওয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন দফায় হামলার পর ৭টা ৪ মিনিটে বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ করে স্টেশন ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চতুর্থ দফা হামলা হয়; ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাটও চালানো হয়। এতে ২২ ঘণ্টা সম্প্রচার বন্ধ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই টিভি স্টেশনটির। 

উত্তরা রণক্ষেত্র: বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। সেখানে সাতজন নিহত হয়। র‍্যাবের এক সদস্যকে গণপিটুনি দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন স্থানে থাকে পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। 

যাত্রাবাড়ী-মিরপুর-মহাখালী রণক্ষেত্র: বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দখল নেয় বিক্ষোভকারীরা। এরপর রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় তাদের সঙ্গে পুলিশ-র‍্যাবের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তারা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ফুটওভার ব্রিজে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিকেলে মহাখালী এলাকার সেতু ভবন ও দুর্যোগ ভবনে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে থাকা গাড়িগুলোও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

রাতে ইন্টারনেট বন্ধ: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত বুধবার রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ব্রডব্যান্ড চালু থাকে। মোবাইল ইন্টারনেটের টু-জি সেবাও চালু ছিল। ফোর-জি সেবা বন্ধ থাকায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবহারকারীরা। প্রবেশ করা যাচ্ছিল না ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছিলেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। 

শুক্রবার কী হয়েছিল
শুক্রবার দিনের প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় বিটিভির সামনে রামপুরা ব্রিজ এলাকায়। আগের দিনও এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দিনভর সংঘর্ষ হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা পুরো বনশ্রী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে বনশ্রী পুলিশ ফাঁড়ি আর সন্ধ্যায় রামপুরা থানায় হামলা করে আন্দোলনকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মেরাদিয়া পুলিশের পিবিআই পূর্ব কার্যালয়ও। এই ঘটনাস্থল থেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যায় ২৫টি শিশু, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। 

এদিনও রণক্ষেত্রে পরিণত উত্তরা এলাকা। আগের দিন আটক হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের গতকাল বেলা ১১টার দিকে আদালতে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে প্রবেশ করতে চাইলে বিকেলে উত্তরার বিজিবি মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত হন সাবেক এই মেয়র। মারা যান তাঁর দেহরক্ষী হামিদুর রহমান জুয়েল (৩৫)। আর সন্ধ্যার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা হামলা চালান উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে পুলিশ কোয়ার্টারে। 

ভয়ানক অবস্থা তৈরি হয় মিরপুর এলাকাতেও। জুমার নামাজের পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর ওপর সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। তাঁদের পেছনে থাকেন পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। সেখানে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিকেলে তাঁরা মিরপুর ১০-এ কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিকেলের দিকে বনানীতে সেতু ভবন, এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোল প্লাজা, মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আজিমপুর, বাড্ডা, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার (সায়েন্স ল্যাব), দুর্যোগ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন দেয় আন্দোলনকারী। রাত পর্যন্ত ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকা আটকে রেখে সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসব জায়গাতেও পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সেখানেও রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, ছররা গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হতাহত হয় শতাধিক আন্দোলনকারী।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী আটকের পর গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করেন। এর পরপরই সেখানে থাকা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনার রেশ চলে যায় নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ের সামনে। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি চালায়। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শতাধিক নেতা-কর্মী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও পরিবেশ ছিল থমথমে। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি। তবে এত কিছুর পরেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, পুলিশ এখনো ধৈর্য ধারণ করে আছে। 

সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলে সারা দেশে নিহত হন ১০৩ জন। এর মধ্যে মঙ্গলবার নিহত হন ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন এবং শুক্রবার নিহত হন ৫৬ জন। শুক্রবার রাতে সরকারে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে কারফিউ জারি করা হয়। 

মধ্য রাতে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষুব্ধরা তখনো সড়কে ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। গত শনিবার সারা দিন সেই ধারাবাহিকতা ছিল। 

শনিবার যা ঘটেছিল
প্রথম দিকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ। ভাঙচুর-সংঘর্ষে টালমাটাল পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের সঙ্গে মাঠে নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তাতেও পরিস্থিতি দিন দিন বেসামাল হয়ে পড়ছিল। সেই অবস্থায় জারি করা হয় কারফিউ। রাতারাতি মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারপরও বিক্ষোভ দমানো যায়নি। পথে পথে সেনাসদস্যদের টহলের পরও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকার বাইরে কয়েক জায়গায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৪৫ জনের মতো। 

রামপুরা-বাড্ডা এদিনও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। তবে এবার পুলিশের সঙ্গে মাঠে ছিল সেনাবাহিনীও। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দেয়। তাদের লক্ষ্য করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান। দিনভর দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলতে থাকে। রামপুরার মতো যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ও কদমতলীর অবস্থাও ছিল একই রকম। 

ঢাকার বাইরের পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম ছিল। টঙ্গীতে শিল্প পুলিশের কার্যালয়, পুলিশ বক্স এবং বিআরটিএ প্রকল্পের চলন্ত সিঁড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া টঙ্গী থানা এবং সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। সিটি করপোরেশনের ১১টি গাড়িসহ প্রায় ৪০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া চেরাগ আলী এলাকায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কারখানায় হামলা চালিয়ে তিনটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। 

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভরত তিন শিক্ষার্থী নিহত হন। দুপুর ১২টার দিকে কলতাপাড়া এলাকার ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। গাজীপুর-ময়মনসিংহ ছাড়া আরও কয়েক জেলায় ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানেও তাদের সংঘর্ষ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে। 

রোববার যা হয়েছিল 
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে।

আদালত বলেছেন, নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। তবে সরকার প্রয়োজনে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল বা সংশোধন করতে পারবে।

হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রোববার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করেন।

এদিকে পাঁচ দিনে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ১৭৪। আহত কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় এবং আগের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার কারণে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। 

সোমবার কী হয়েছিল 
টানা হামলা-সংঘর্ষ-ভাঙচুর, এর মধ্যে কারফিউ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জিম্মি হয়ে পড়েছিল রাজধানীবাসী। কারফিউ না উঠলেও গতকাল ঢাকায় নতুন করে সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন নগর ও জেলার পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নগরজীবনে। হাঁপ ছেড়েছে দেশের মানুষ।

আবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এতেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। রাস্তা ছেড়ে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার কথা বলছেন তাঁরা। 

সব মিলিয়ে সংঘর্ষ-ভাঙচুর-গুলি আর লাশের পর এবার আতঙ্ক কাটছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে ইন্টারনেট সেবা না থাকায় এবং টাকা উত্তোলন করতে না পারায় নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে মানুষের হাতে। 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রাজধানী ও ঢাকার বাইরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের সংঘর্ষে যখন কমবেশি ৮০ জনের মৃত্যু হয়, তখন কারফিউ জারি করে সরকার। শনিবার থেকে সেনাসদস্যরা নামলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। অবশ্য তার আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সরকারি অনেক স্থাপনা, যানবাহন, এমনকি পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়। 

রাজধানীতে গত কয়েক দিনের সহিংসতার দৃশ্য পরিদর্শনে নেমে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সেনা মোতায়েনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। 

গত সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আগের দিনও আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে যেসব সড়ক অচল ছিল, গতকাল তা সচল হয়েছে। রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের রাখা বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ। তবে রাস্তায় কোনো যাত্রীবাহী বাস কিংবা মালবাহী ট্রাক দেখা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪০
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহযোগী সংগঠন ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহযোগী সংগঠন ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিকল্পিতভাবে একযোগে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আর এই দুই বাহিনীর মূল শক্তি ছিল স্বাধীনতাবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাদের সহায়তা করেছিল ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। দুই দেশই তাদের ফেরত দিচ্ছে না।

ট্রাইব্যনালের ১৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন হত্যাযজ্ঞের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ও মুঈনুদ্দীন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।

জামায়াতের এই দুই ছাত্র নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করে তারা।

‘ফ্যাসিস্ট’ জামায়াত

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছিল। আদালত বলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামী একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসাবে কাজ করেছে। ‘কিলিং স্কোয়াড’ আল বদরের নিয়ন্ত্রণ জামায়াতের হাতেই ছিল।

রায়ে বলা হয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত মহাপরিকল্পনার আলোকেই সে সময় আল বদর বাহিনীকে নামানো হয়। বাঙালি জাতিকে প্যারালাইজড করতে তারা বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিহীন করতে চেয়েছিল।

একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ‘সন্তানের জন্য সেলিনা পারভীন প্রাণ ভিক্ষা চান, তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে, যাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারীরা তাকে ছাড়েনি। বেয়নেট দিয়ে তাকে তাতক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় বলে প্রসিকিউশনের ২২ নম্বর সাক্ষী জানিয়েছেন। সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন মা। ভীতিকর আক্রমণ কেবল সেলিনা পারভীনের ওপরই করা হয় নাই। বরং মাতৃত্বের ওপরও হয়েছে। এটা বরং মাতৃহন্তাও। অবর্ণনীয় এই নিষ্ঠুরতা মানবতার বিবেককে আঘাত করেছে।’

এর আগে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মুঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ায় ওই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।

রায়ে বলা হয়, ‘এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৮
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন করবেন না—বিদায়ী ভাষণে বিচারকদের প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩১
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইন বৃহত্তর রাজনীতির একটা অঙ্গ হলেও বিচারকদের রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়। কেবল ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণির পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের আলাদা কোনো অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই। সে কাজের জন্য নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই যথেষ্ট। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি যে আদর্শকেই ধারণ করে গড়ে ওঠুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আজ রোববার জেলা ও মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন রেফাত আহমেদ। অবসর নেওয়ার আগে আজ বিদায়ী ভাষণ দেন তিনি। ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন রেফাত আহমেদ।

প্রধান বিচারপতি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকদের দ্বারা সৃষ্ট যাবতীয় অন্যায়ের জন্য এখন থেকে অন্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ বন্ধ করতে হবে। জনগণের জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সুবিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শুনানিকালে কোনো বিশেষ পদবিধারী ব্যক্তি বা ক্ষমতাবান পক্ষকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া বিচারকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘এই পৃথক সচিবালয় (সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়) প্রতিষ্ঠার কোনো স্বার্থকতা নেই, যদি না আমরা ব্যক্তিগত অসততার ব্যাপারে সতর্ক থাকি। একটি স্বাধীন সচিবালয় কেবল শুরু, সর্বশেষ উদ্দেশ্য নয়। আপনাদের উচিত, সততা আর যোগ্যতার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। অনুপার্জিত অর্থের বাসনা, অন্যায্য বিলাসী জীবন এবং অসংগত ক্ষমতার প্রতিপত্তি যদি আমাদের মনকে কলুষিত করে রাখে, তাহলে পৃথিবীর কোনো আইনি বিধানই আমাদের সামষ্টিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।’

বিচারকদের উদ্দেশে রেফাত আহমেদ আরও বলেন, ‘উন্নত জীবনমান ও কর্মপরিবেশের প্রতি প্রত্যাশা কখনোই ব্যক্তিগত ভোগ, আত্মতুষ্টি কিংবা সামাজিক মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য হতে পারে না। এর অন্তরে থাকতে হবে বিচারিক সক্ষমতার উন্নয়ন, জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং উচ্চমানের কর্মদক্ষতা অর্জনের সৎ প্রেরণা। এটি অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ সংস্কৃতি এখনো কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আমরা এখনো একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারিনি। তবে বিদ্যমান সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিচারকদের বড় অংশের অনীহা ও কার্পণ্য পরিলক্ষিত হয়। তাই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ—জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে আপনারা জীবনের পরম দায় হিসেবে নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা থাকলেও ভোট নিয়ে শঙ্কা দেখছে না ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। ছবি: বাসস

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর আরও চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এতে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘আজকে একটা বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকেছিলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনের আমাদের কার্যক্রম এবং কৌশল কী হওয়া উচিত—সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং তাঁদের বিভিন্ন মত শুনেছি।’

সানাউল্লাহ আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় একটা ঘটনা, যেটা আমাদের সবার সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। শরিফ ওসমান হাদির ওপরে চোরাগোপ্তা হামলা। সেটা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলছি না। সেখানকার আরও কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমরা অবহিত হয়েছে। যেগুলোর সাথে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের স্বার্থ জড়িত।’

সানাউল্লাহ বলেন, ‘এখানে কয়েকটা বিষয় উঠে এসেছে যে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হচ্ছে সন্দেহভাজন হিসেবে। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সখ্যতা গড়ে তুলে অত্যন্ত কাছে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে তার একটা অতীত আছে, পেছনে তার একটা রাজনৈতিক ইন্টারেসিডেন্স (মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ) আছে এবং তার একটা ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম যে রেবেল হান্ট বিশেষ করে—এক শুরু হওয়ার পর থেকে যেসব সন্ত্রাসীদের অ্যারেস্ট করা হয়েছিল, তাদের একটা বড় সংখ্যা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গেছে এবং তারা সমাজে বিরাজ করছে। এটা নিয়ে আমাদের কী করণীয়—সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’

দেশে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সামনেও যে এটা সম্ভাবনা নাই, তা-ও বলছি না। আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয় ... নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার। নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নাই।’

প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য নজরে আনলে এই নির্বাচন কমিশনার বলে, ‘আমার সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কমিশনের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নাই। উনি কী মন্তব্য করেছেন, কোন প্রেক্ষাপটে করেছেন, আমি যদি জানি পরে আমি আলোকপাত করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত