Ajker Patrika

সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস, পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩: ৩২
সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস, পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ

জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে বহুল আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩। বিলটি আইনে পরিণত হলে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারে পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তার হাতে ক্ষমতা চলে যাবে। তবে এতে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার বিধান রাখা হয়েছে।

আজ বুধবার সংসদের বৈঠকে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিলের ওপর আনা বিরোধী সদস্যদের জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে আইনটি কার্যকর হবে। 

বিলের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় সদস্যরা বলেন, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি সংবিধানেই দেওয়া হয়েছে। বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। একাধিক সদস্য বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশির বিধান সংশোধনের দাবি জানান। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা এই আইনে যুক্ত করা হয়েছে। এটা অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদ রাখার মতোই অবস্থা। আইনটি নতুন করে হচ্ছে কিন্তু স্বস্তি ফিরে আসছে না। যেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছিল অনেকটা হুবহু সেভাবেই এই আইন করা হচ্ছে। জাতিসংঘ, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের যেসব আপত্তি ছিল, উদ্বেগের বিষয় ছিল সেগুলো রয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, ৯টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন প্রস্তাবিত সাইবার আইনে ৭টি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি। আগের মতোই রয়ে গেছে। তার দুটি ধারায় কোনো পরিবর্তনই আনা হয়নি। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে দুটি ধারা বাতিলের আহ্বান করেছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে তা বাতিল না করে সাজা ও জামিনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। 

মোকাব্বির বলেন, এই আইনটি ভিন্নমত সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা দমনের সবচেয়ে কার্যকর একটি হাতিয়ার। গত সাড়ে ৪ বছরে কেবল সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা দমনে প্রয়োগ করা হয়েছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাংবাদিক কমিউনিটি। এই আইনের কারণে তাঁদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে। এ আইনে পুলিশকে বাসাবাড়ি ও অফিসে প্রবেশ ও দেহ তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ করার সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। অন্য কোনো আইনে পুলিশকে এত বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। 

আইনটি দিয়ে খুব সহজেই কাউকে হয়রানি করা যায় উল্লেখ করে মোকাব্বির খান বলেন, ‘রাষ্ট্রের যখন একজন শীর্ষ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী) একটি জনপ্রিয় লিডিং পত্রিকাকে বলতে পারেন এটি দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ওই পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা যেতে পারে। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার সরাসরি কত বড় হস্তক্ষেপ তা সহজেই অনুমান করা যায়। যদিও হুমকির কারণ হিতে বিপরীত হয়েছে।’ 

জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক বলেন, সাংবাদিকেরা কলম ধরেন দেশের স্বার্থে। তাঁদের বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলকে যুক্ত করার সুযোগ ছিল। ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে। এ সময় তিনি সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুজন নেতাকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনার কথা তুলে ধরেন। 

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আইনটিতে কিছু রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকেরা বলেছেন তাঁরা সন্তুষ্ট নন। সংবিধানে বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান হলো মূল আইন। বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনো আইন তৈরি হলে তা হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

দলটির আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কিছু কারিগরি বিষয়ে এই আইনের দরকার। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার হয়েছে খুব সামান্য। মূল মামলা হয়েছে চেতনা, অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে। তিনি বলেন, সংবিধানে চিন্তা, সংবাদক্ষেত্র ও বাক্‌স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এগুলো থাকা অবস্থায় এই ধরনের আইন সংবিধানবিরোধী। এ আইনে অপরাধের সংজ্ঞা একই রাখা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে সাজা কমানো হয়েছে। এ আইনে গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ বাড়বে। 

জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার কাছে বিতর্কিত ছিল। কিছুটা পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। এটিও স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনে সাংবাদিকদের বিষয়ে আলাদা সুরক্ষা রাখা প্রয়োজন ছিল। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল। মতপ্রকাশ সাংবিধানিক অধিকার। এ আইনে মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতা বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৭ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাদী ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। 

দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন তৈরির উদ্যোগ নেয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে ওঠার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। 

পাস হওয়া বিলে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়েরের অপরাধ ও দণ্ড নিয়ে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে এই আইনের কোনো ধারায় মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যেটার দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয় সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়েরের অপরাধে অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন।

বিলের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এই ধারায় সাব ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার পরিবর্তন এনে পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ধারাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ছিল। 

বিলের ৮ ধারায় ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য-উপাত্ত অপসারণ ও ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা দেশের কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ৩১ কোটি টাকা ঋণ: সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান। ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে মামলাগুলো করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বশির আহমেদের প্রতিষ্ঠান বি অ্যান্ড বি ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান ও সিন্ডিকেট সদস্য মো. আবুল কালামের সহায়তায় কৌশলে গ্রামের সহজ-সরল কৃষক ও খণ্ডকালীন শ্রমিক নুরুল বশর, মোহাম্মদ আয়ুব, মো. ইউনুছ ও মো. ফরিদুল আলমের ব্যক্তিগত তথ্য (এনআইডি, ছবি ইত্যাদি) সংগ্রহ করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে এসব ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ঋণ অনুমোদন করানো হয়। পরবর্তীতে অনুমোদিত ঋণের ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।

দুদক বলেছে, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আসামিরা দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৬ / ৪০৯ / ৪২০ / ৪৬৭ / ৪৬৮ / ৪৭১ / ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদকের মামলায় ইউসিবিএল ও ইউসিবি পিএলসি’র এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য এবং সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, একই প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী ও ইউসিবি পিএলসি’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান,

ইউসিবিএল পোর্ট শাখার (চট্টগ্রাম) এভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মো. আব্দুল আউয়াল, এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. আবু বকর খান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার জামাল উদ্দিন, এভিপি জিয়াউল করিম খান এবং একই শাখার ভিপি ও শাখা প্রধান মো. জাহিদ হায়দারকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া আরামিট পিএলসি সংশ্লিষ্ট দুই ব্যবসায়ী—মডেল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম এবং ক্ল্যাসিক ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও এজিএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের নাম রয়েছে মামলায়।

আলোক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, বি অ্যান্ড বি ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং দিদারুল আলমকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ইউসিবি পিএলসি’র এক্সিকিউটিভ কমিটির আরও কয়েকজন সাবেক পরিচালক বজল আহমেদ বাবুল (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান), এম এ সবুর, ইউনুছ আহমদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও আসিফুজ্জামান চৌধুরীর নামও মামলার আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

নাশকতামূলক ঘটনা ও অঘটন ঠেকাতে রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, আসন্ন ১৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘শক্ত অবস্থানে’ রয়েছে এবং কোনো ধরনের সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘রাস্তার পাশে তেল বিক্রি কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে। এই তেল দিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।’ তিনি ইঙ্গিত দেন, এই তেল ব্যবহার করেই নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সাম্প্রতিক অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গোয়েন্দাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। তাঁর মন্তব্য, ‘বড় ধরনের কোনো মিছিল হচ্ছে না। বাসে আগুন ও কয়েকটা জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এগুলো যাতে আর ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এ সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনবহুল স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, মেট্রোরেল ও রেলওয়ে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানান উপদেষ্টা।

১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানাবেন। এ উপলক্ষে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ওই দিন ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘১৩ নভেম্বরের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তারা শক্ত অবস্থানে থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। কোনো আশঙ্কা এখানে নেই।’

তিনি জনগণের প্রতি সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেন। উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, সন্ত্রাসীরা যেন সহজে জামিন না পায়, সে বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি জামিন প্রদানকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সহজে যাতে জামিন না পায়, এ জন্য আমরা তাদেরও অনুরোধ করব, যারা জামিন দেয়, তারা যাতে সন্ত্রাসীদের জামিন না দেয়।’

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান বেগবান করা হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু কিছু (অস্ত্র) রয়ে গেছে বাইরে। এগুলো যেন তাড়াতাড়ি উদ্ধার করা যায়, সে চেষ্টা চলছে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিকে সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি নির্বাচনের দিন মোতায়েন হতে যাওয়া বাহিনীর একটি হিসাব দেন: এর মধ্যে আনসার সদস্য সাড়ে ৫ লাখ, পুলিশ দেড় লাখ, সেনাসদস্য ১ লাখ, বিজিবি ৩৫ হাজার, কোস্ট গার্ডের ৪ হাজারের মতো সদস্য মোতায়েন করা হবে।

মিয়ানমার থেকে মাদক আসা কিছুটা কমলেও তা আশাব্যঞ্জক নয় বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামগঞ্জে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। মাদক নির্মূলে সবার দায়িত্ব নিতে হবে।’

এ ছাড়া রাজধানীতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার দুটি ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই দুটি ঘটনা সন্ত্রাসী বাহিনীর নিজেদের মধ্যে হয়েছে। জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো সন্ত্রাসী বাইরে থেকে দেশে ঢুকতে না পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আর্মি সার্ভিস কোরের ৪৪ তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান। ছবি: আইএসপিআর
আর্মি সার্ভিস কোরের ৪৪ তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান। ছবি: আইএসপিআর

একুশ শতকের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জনের জন্য আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

আজ মঙ্গলবার খুলনা জেলার জাহানাবাদ সেনানিবাসস্থ আর্মি সার্ভিস কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুল (এএসসিসিঅ্যান্ডএস)-এ অনুষ্ঠিত কোরের ৪৪ তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এই বার্তা দেন।

সম্মেলনে উপস্থিত এএসসির সব ইউনিট অধিনায়কদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় সেনাপ্রধান কোরের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য এবং দেশমাতৃকার সেবায় তাদের অনবদ্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্র এবং লজিস্টিকসের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এএসসির ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কোরের সদস্যদের নিজেদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেবল প্রচলিত সামরিক প্রশিক্ষণ নয়, বরং প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং গবেষণায় বিনিয়োগের মাধ্যমেই এএসসি কোরের সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব।

আর্মি সার্ভিস কোরের ৪৪ তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান। ছবি: আইএসপিআর
আর্মি সার্ভিস কোরের ৪৪ তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান। ছবি: আইএসপিআর

এএসসিসিঅ্যান্ডএস-এর সম্মেলনস্থলে আগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেনাপ্রধান কোরের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশদভাবে আলোকপাত করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান এএসসিসিঅ্যান্ডএস-এ পৌঁছালে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান জিওসি, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক) ; জিওসি, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, যশোর এরিয়া এবং কমান্ড্যান্ট, এএসসিসিঅ্যান্ডএস।

সম্মেলনে উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জিওসি, আর্টডক; মহাপরিচালক, বিএমটিএফ; জিওসি ৫৫ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, যশোর এরিয়া; চেয়ারম্যান, সেনা কল্যাণ সংস্থা; সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ; কমান্ড্যান্ট, এএসসিসিএন্ডএস; বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি সার্ভিস কোরের সব ইউনিটের অধিনায়ক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন দিতে সম্মতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন দিতে সম্মতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (বাস্তবায়ন অনুবিভাগ-১) মো. মাহবুবুল আলমের সই করা অফিস আদেশ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

অফিস আদেশে ৬৫ হাজার ৫০২টি প্রধান শিক্ষক পদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. মাহবুবুল আলম বলেন, তিনটি শর্তে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে নির্ধারণে অর্থ বিভাগ সম্মতি জানিয়েছে। গত রোববার জারি করা ওই আদেশ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মাহবুবুল আলম বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো মানা, বিধিমালা অনুসারে নিয়োগ এবং অন্য বিধিবিধান ও আনুষ্ঠানিকতা মানার শর্তে এই সম্মতি দিয়েছে বাস্তবায়ন অনুবিভাগ।

গত ২৮ জুলাই অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ ও অক্টোবরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৬৫ হাজার ৫০২টি প্রধান শিক্ষক পদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার সম্মতি দিয়েছিল।

২৮ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকার দেশের ৬৫ হাজার ৫০২টি প্রধান শিক্ষক পদের বেতন স্কেল বিদ্যমান ১১তম গ্রেড (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং ১২তম গ্রেড (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণে সম্মতি দেয়।

এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হয়।

এদিকে গত ২৭ অক্টোবর গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন ১০ম গ্রেডে নির্ধারণে মন্ত্রণালয়টি বাধ্য হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত