Ajker Patrika

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর তাগিদ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত

শিশুর সুস্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসম্মত বিকাশ নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিবছরই মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার কমছে, যা বড়ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এ প্রবণতা রোধে পরিবার ও কর্মক্ষেত্র উভয় জায়গায় সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। আমরা চাই, আগামী বছরের মধ্যে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার বাড়ুক। এ জন্য সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকতে হবে। এতে মায়েরা কর্মক্ষেত্রে থেকেও সন্তানের কাছে থাকতে পারবেন এবং শিশুও নিয়মিত মাতৃদুগ্ধ পাবে।’

নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটি মেধাসম্পন্ন ও সুস্থ জাতি গড়ে তোলা। এর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। জন্মের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়াতে হবে। কেননা, এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিশুকে প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এরপরও দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর খাবারের পাশাপাশি মাতৃদুগ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, শহর ও গ্রামে বাস্তবতা ভিন্ন। শহরে কর্মজীবী মায়েরা সময়ের অভাব ও কর্মক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতার কারণে সন্তানকে পাশে রাখতে পারেন না। অন্যদিকে গ্রামে দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও সচেতনতার অভাবে শিশুকে সঠিকভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানো হয় না। তাই শুধু মায়ের সচেতনতা নয়, পরিবার ও সমাজকেও বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে যদি ডে-কেয়ার বা ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকে, তবে তা কর্মজীবী মায়েদের জন্য বড় সহায়ক হবে।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, গ্রামে-শহরে সর্বত্র মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর বিষয়ে প্রচারণা জোরদার করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে—মায়ের দুধই শিশুর প্রথম ভ্যাকসিন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানান, দেশে এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ নবজাতক জন্মের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ পায় না। আবার কর্মজীবী মায়েদের প্রায় ৬০ শতাংশ ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে একচেটিয়া মাতৃদুগ্ধ (এক্সকলুসিভ ব্রেস্টফিডিং) খাওয়াতে ব্যর্থ হন। এর মূল কারণ কর্মক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশের অভাব। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শিশুকে কম মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি আড়াই বছরের বেশি সময় শুধু মাতৃদুগ্ধ চালিয়ে যাওয়া শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও খাবারের অভ্যাসের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুছ আলীসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত