Ajker Patrika

আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য

তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা শিথিলের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আমদানি ব্যয় ও দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস তথা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার কড়াকড়ি শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য আইনকানুন সংশোধন এবং একটি রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) বা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা করা হবে।

তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরমাণু শক্তি কমিশন এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমদানি করা খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেরও তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে। পণ্যের মানবিষয়ক নজরদারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের একজন কর্মকর্তাও বলেছেন, খাদ্যদ্রব্যে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতির বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারি সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২০২৪ এ বলা হয়েছে, যেকোনো খাদ্যদ্রব্য আমদানির পর তার তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। খাদ্যদ্রব্য বন্দরে পৌঁছানোর পর পরমাণু শক্তি কমিশনের দপ্তর থেকে তা পরীক্ষা করানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকার এখন চাচ্ছে, নির্ধারিত কিছু দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য যা অতীতে নিয়মিতভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, সেগুলো পরীক্ষা ছাড়াই ছাড় দিতে। আমদানি নীতি আদেশে বিষয়টি শিথিল করা হচ্ছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অধিশাখা) মো. আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত আমদানি নীতি আদেশে খাদ্যদ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা শিথিল করার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। পণ্যের মান অনুযায়ী তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করা হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আমদানি করা খাদ্যপণ্য বন্দরে পৌঁছানোর পর দেশ ও অঞ্চলভেদে মান পরীক্ষায় যেসব পণ্য নিয়মিত উত্তীর্ণ হচ্ছে, সেসব পণ্য গ্রিন চ্যানেল দিয়ে দ্রুত খালাস হবে। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে হলুদ চ্যানেল ও কিছুর ক্ষেত্রে রেড চ্যানেল থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য গ্রিন চ্যানেল দিয়ে প্রবেশ করার পরে তাতে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সে পণ্য বাজার থেকে নিজ খরচে তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।

গত ১৯ মে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা পরিষদের নবম সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। সভার কার্যবিবরণীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের পরীক্ষাকে অশুল্ক বাধা হিসেবে বিবেচনা করে। এ ছাড়া বিগত ৫০ বছরে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার ফলাফল নগণ্য ছিল। এ জন্য শতভাগ নমুনায় তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা কমেছে।

সভার কার্যবিবরণীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালকের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, এ পরীক্ষা বন্ধ করা হলে দেশের জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা শিথিলের তাগিদ দিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লালমাই গ্রুপের পুষ্টি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ক ব্যবস্থাপক তামান্না ফারহানা বলেন, এ খাতে সময় ও অর্থ—উভয় ব্যয় হচ্ছে। প্রতিটি চালান বন্দরে পৌঁছানোর পর নমুনা সংগ্রহ, জমা দেওয়া, কাস্টমস, বিএসটিআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। পরীক্ষা শিথিল করা হলে আমদানিকারক ও ভোক্তা—উভয়ের উপকার হবে।

এদিকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জাতীয় দৈনিকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, খাদ্যে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি ক্যানসার, জিনগত বিকৃতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায়। উন্নত বিশ্ব ছাড়াও সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারতেও একই ধরনের বা আরও কঠোর তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার বিধান রয়েছে। এই বাধ্যবাধকতার কারণে ২০০৫ সালের পর দেশে আমদানি করা খাদ্যপণ্যে মাত্রাতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়নি। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায়ই মাত্রাতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তাদুষ্ট পণ্য শনাক্ত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, খাদ্যপণ্যে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা তেজস্ক্রিয়তাসম্পন্ন খাদ্যপণ্য আমদানির সুযোগ পাবে, যা জনগণকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবে।

নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া বিএসটিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমদানি করা খাদ্যে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা কার্যক্রম বাতিলের প্রস্তাবটি জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটা ইউক্রেনের চেরনোবিল ও জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের ঘটনা এবং চলমান ইউক্রেন-রাশিয়াসহ নানা ভূরাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলের কৃষিপণ্য তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফুড কোড অনুযায়ী খাদ্যে তেজস্ক্রিয়তার সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারিত রয়েছে।

বিএসটিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমদানি করা খাদ্যের তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা বাদ না দিয়েও পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া দ্রুততর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিভিত্তিক স্ক্রিনিং গ্রহণযোগ্য। প্রি-শিপমেন্ট সার্টিফিকেট ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পরীক্ষাগারের সার্টিফিকেট যাচাই করে পণ্যের দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া যায়। বন্দরে মোবাইল স্ক্যানার বা হ্যান্ডহেল্ড গামা ডিটেক্টরের মাধ্যমেও তাৎক্ষণিকভাবে তেজস্ক্রিয়তা যাচাই করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

ইরানে ভূমিকম্প নিয়ে পারমাণবিক পরীক্ষার জল্পনা, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

‘আমেরিকা যুদ্ধে জড়ালে ইরানের হাতে অনেক বিকল্প আছে’

‘ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যায় নয়, গুণে বিশ্বাসী ইরান, ইসরায়েল এবার আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখবে’

এবার আক্রমণের অগ্রভাগে ড্রোন, ইরানের ‘হাইব্রিড’ হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ ইসরায়েল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত