Ajker Patrika

বাজারের খোলা ভোজ্যতেলের ৫১ শতাংশ নমুনায় ভিটামিন ‘এ’ পায়নি বিএসটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৩
সোমবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ খাদ্য সমৃদ্ধ করণ কর্মসূচি শীর্ষক সেমিনার। ছবি: আজকের পত্রিকা
সোমবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ খাদ্য সমৃদ্ধ করণ কর্মসূচি শীর্ষক সেমিনার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীসহ দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা তেলের ৫১ শতাংশেই ভিটামিন ‘এ’ খুঁজে পায়নি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।

আজ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ খাদ্য সমৃদ্ধ করণ কর্মসূচি শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানান বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক এস এম আবু সাঈদ।

আবু সাঈদ বলেন, গত অর্থবছরে বাজার থেকে খোলা ভোজ্যতেল এবং প্যাকেট ভোজ্যতেলের ২০৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ খোলা তেলে ভিটামিন ‘এ’ শনাক্ত হয়নি। তবে প্যাকেটজাত তেলের ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। সরকার ২০১৩ সালে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধিকরণ আইন জারি করলেও অনেকে তা মানছে না।

উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলের পুষ্টি সমৃদ্ধকরণকে বলে ফোর্টিফিকেশন। ভোজ্যতেলে পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য ভিটামিন এ ও ডি-এর মতো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যোগ করাকে বলে ফোর্টিফিকেশন। মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের অভাব মেটানো এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এটি একটি কার্যকর কৌশল বলে মনে করা হয়। মূলত প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় তেলে এসব উপাদান যোগ করা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সচিব মাসুদুল হাসান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে একটি জনগোষ্ঠীর ভিটামিন এ-এর স্বল্পতা রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এসব কাজ দেখভাল করছে। তবে এগুলো বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা জানান, বাজারে ব্যবহৃত ৬৫ শতাংশ তেলেই খোলা ড্রামে বিক্রি হয়। এসব ড্রামের গায়ে কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানি করা বা উৎপাদক কে—তার নাম ঠিকানা থাকে না। এসব ড্রামে রাসায়নিক আসে। সেগুলো ধুয়ে সেটিতে তেল বাজারজাত করা হয়, যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

তবে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, দেশের গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান এসব তেল আমদানি ও বাজারজাত করছে। অথচ সিটি করপোরেশন নিরাপদ খাদ্য আইনের বিভিন্ন ধারায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জেল জরিমানা করছে, যা মোটেও ঠিক না। তাঁরা উৎপাদনকারী বা বাজারকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর অনুরোধ করেন।

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রোভড নিউট্রিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রুদাবা খন্দকার বলেন, কোনো বিষয় নিয়ে নতুন আইন করলে তা বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে। কোনো পক্ষ আরেকজনকে যাতে অভিযোগ না দেয় এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলেন, দেশে খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। তবে নিরাপদ ও সুষম খাদ্যের অভাব রয়েছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিনের বিষয়টি অধিকাংশ মানুষই জানেন না। উৎপাদনকারীরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে। খোলা তেলে ভিটামিন সমৃদ্ধ থাকে না।

উৎপাদক, বিক্রেতা ও ভোক্তার সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামীমুল হক বলেন, দেশের মানুষের অপুষ্টি ও অনুপুষ্টির অভাব আছে। মাইক্রো নিউট্রিশনের অভাব আছে। এ জন্য সচেতনতা দরকার। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, নিরাপদ খাদ্যের পাশাপাশি পুষ্টি নিয়েও দেখা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক বিপদ ঘটাবে অনিরাপদ খাদ্য। অগ্রাধিকার দিতে হবে নিরাপদ খাদ্যে। পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। খোলা তেল নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। খোলা তেল বিক্রিতে আইনগত বাধা নেই। লেবেলিং প্রতিবিধানমালা দরকার।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রকৌশল এবং টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম বোরহান উদ্দিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত