Ajker Patrika

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি: যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে ফ্রান্সে বয়স্ক দম্পতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক আমেরিকান দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। ডেব্রা ও এরিক এমনই এক দম্পতি। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। ছবি: ফেসবুক
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক আমেরিকান দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। ডেব্রা ও এরিক এমনই এক দম্পতি। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। ছবি: ফেসবুক

অনেকে ভাগ্য বদলাতে যুক্তরাষ্ট্রে যান। কিন্তু সে দেশে ঘটছে অন্য ঘটনা। অনেক আমেরিকান দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন; বিশেষ করে বয়স্করা। ডেব্রা ও এরিক স্টিলওয়েলও এমনই এক দম্পতি। পাঁচ বছর আগে তাঁরা লস অ্যাঞ্জেলেস ছেড়ে ফ্রান্সে চলে যান।

ডেব্রা ও এরিকের পরিচয় ১৯৯৫ সালে। এর এক বছর পরে তাঁরা বিয়ে করেন। যৌবনে তাঁরা ইউরোপে অবসর কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যয় এত বেশি ছিল যে, আগেভাগে অবসর নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এরিক বলেছেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকলে আমার হয়তো ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে হতো। এর সঙ্গে ঋণও শোধ করতে হতো। আর আমাদের দুজনেরই ডায়াবেটিস আছে। তখন মেডিকেল ইনস্যুরেন্সের জন্য মাসে ৫০০ ডলার দিতে হতো একজনকে।’

ফ্রান্সে নতুন জীবন

ডেব্রা ও এরিক দম্পতি প্রথমে ইতালি যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে ফ্রান্সের প্রতি তাঁরা আকৃষ্ট হন। দেশটির সঙ্গে দুজনেরই আছে এক দারুণ সম্পর্ক। ডেব্রা ছোটবেলা থেকে ফরাসি জানেন। আর এরিকের দাদা ছিলেন ফরাসি। ২০১৩ সালে একটি ওয়াইন ক্রুজে চড়ে বর্ডো শহরে যাওয়ার সময় তাঁরা ফ্রান্সে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সাঁত-এমিলিয়ঁ-এ রাত কাটিয়ে তাঁরা ডর্দগোন ভ্যালির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। এরিক বলেন, ‘মধ্যযুগীয় শহর, দুর্গ আর প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করেছে।’ এরপরেই ডেব্রা ও এরিক চাকরি ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি বিক্রি করে ঋণমুক্ত হয়ে ফ্রান্সে চলে যান।

বাড়ি ও প্রতিবেশী

২০২০ সালে ডর্দগোন ভ্যালির লাচাপেল অউজাক এলাকায় তাঁরা ৭০ হাজার ইউরোতে একটি বাড়ি কিনেছেন। বাড়িটিতে রয়েছে গলফ কোর্স, টেনিস কোর্ট ও সুইমিংপুল। সেখানে তাঁদের প্রতিবেশীরা ব্রিটিশ, ডাচ, ফরাসি ও আইরিশ। ফরাসি এখনো পুরোপুরি শিখতে না পারলেও প্রয়োজনমতো যোগাযোগ করতে পারেন তাঁরা। এরিক বলেন, ‘ফরাসি প্রতিবেশীরা খুবই বন্ধুসুলভ। একে অপরকে ডিনারে আমন্ত্রণ দেওয়া সেখানে সাধারণ ব্যাপার। যেটা যুক্তরাষ্ট্রে চোখে পড়ে না।’

ডেব্রা ও এরিক দম্পতি চাকরি ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি বিক্রি করে ঋণমুক্ত হয়ে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। ছবি: ফেসবুক
ডেব্রা ও এরিক দম্পতি চাকরি ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি বিক্রি করে ঋণমুক্ত হয়ে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। ছবি: ফেসবুক

আর্থিক স্বাধীনতা

ডেব্রা ও এরিকের প্রধান আয়ের উৎস হলো সোশ্যাল সিকিউরিটি। অর্থাৎ, তাঁরা যখন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতেন, তখন তাঁদের নিয়োগকর্তার দেওয়া ট্যাক্স জমা হতো পেনশনের জন্য। অবসর নেওয়ার পর সেই অর্থ প্রতি মাসে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ফ্রান্সে বসবাস করলেও তাঁরা নিয়মিত এই আয়ের সুবিধা পান। এর মাধ্যমে তাঁরা সহজে দৈনন্দিন খরচ, খাবার, ইউটিলিটি ও ভ্রমণের খরচ চালাতে পারেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে এই আয়ে তাঁদের খরচ চালানো কঠিন হতো বলে জানিয়েছেন এরিক।

জীবনযাত্রার নতুন চ্যালেঞ্জ

তবে কিছু বিষয় তাঁদের এখনো মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। যেমন ফরাসি রেস্টুরেন্টগুলোতে বেলা দুইটার পর আর দুপুরের খাবার পাওয়া যায় না। এরিকের ফরাসি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রায় ৬ মাস সময় লেগে যায়। আরও একটি চ্যালেঞ্জ হলো ভাষা। ফরাসিরা সাধারণত অন্য ভাষায় কথা বলতে চায় না। অন্যদিকে এই দম্পতি ফরাসি ভাষায় এখনো পুরোপুরি দক্ষ হননি, যদিও ডেব্রা ছোটবেলায় খানিক ফরাসি শিখেছিলেন।

অবসরজীবন ও ভ্রমণ

ভ্রমণে ব্যস্ত থেকে ডেব্রা ও এরিক এখন অবসর সময় পার করছেন। এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের লোয়ার ভ্যালি, রিভিয়েরা, বারগুন্ডি, চাব্লিস, লন্ডন, রোম, লুক্সেমবার্গ ও জাগরেব ঘুরেছেন। আইসল্যান্ডে ক্রুজ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। প্রতিবছরের ডিসেম্বর মাসে তাঁরা প্যারিস যান, ক্রিসমাস মার্কেট ঘোরেন এবং গ্যালারিস লাফায়েতের বড় ক্রিসমাস ট্রি দেখতে যান। গত বছর ২০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন, তিনটি ক্রুজে অংশ নিয়েছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় পরিবারের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ডেব্রা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে এই সবকিছু আমরা করতে পারতাম না। যেটুকু পারতাম, সেটিও অনেক বাধা পেরিয়ে।’

ডেব্রা ও এরিক মাঝে মাঝে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তবে ফ্রান্সে নতুন জীবন একেবারে ছেড়ে যেতে চান না। এরিক বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে চাই না। আমরা ফ্রান্সকে ভালোবাসি। বাকি জীবনটা হয়তো এখানেই কাটিয়ে দেব।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৌকীর-বিপাশা বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন যে কারণে

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

সখীপুরে বনপ্রহরীদের ওপর হামলা: ইউপি সদস্য, বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের নামে মামলা

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত