Ajker Patrika

জুবিন গার্গের শেষযাত্রায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনসমাবেশ, বাকি ৩ জন কারা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
শিল্পী জুবিন গর্গের প্রতি মানুষের শেষ শ্রদ্ধা। ছবি: সংগৃহীত
শিল্পী জুবিন গর্গের প্রতি মানুষের শেষ শ্রদ্ধা। ছবি: সংগৃহীত

আসামের কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গের শেষযাত্রায় শোকে স্তব্ধ পুরো গুয়াহাটি। প্রিয় শিল্পীকে বিদায় জানাতে লাখ লাখ ভক্ত শহরের রাস্তায় নেমে আসেন। চোখের জলে ভেসে যাওয়া সেই বিদায়ের মুহূর্ত এখন ইতিহাস। ‘লিমকা বুক অব রেকর্ডস’-এ ঘটনাকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনসমাবেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই তালিকায় তাঁর আগে রয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন, পোপ ফ্রান্সিস দ্বিতীয় ও রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয়র শেষযাত্রা।

জুবিন গার্গ

দিনটি ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর। শুধু আসাম নয়, পুরো ভারতের জন্য শোকের দিন। সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মাত্র ৫২ বছর বয়সে মারা যান জুবিন গার্গ। পানির নিচে অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত উদ্ধার করা হলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে আর ফিরিয়ে আনতে পারেননি। জুবিনের মরদেহ আসামে আসার পর গুয়াহাটির রাস্তায় নামে জনতার ঢল। তাতে ট্রাফিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। শহরের প্রতিটি মোড়ে ফুল, নীরব প্রার্থনা আর গানের সুরে জুবিন গার্গকে শ্রদ্ধা জানায় তাঁর ভক্তরা। শুধু আসাম নয়, কিংবদন্তি এই শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন আসামে।

শিল্পী জুবিন গর্গের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নেমেছিল মানুষের ঢল। ছবি: আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এক্স পেজ থেকে
শিল্পী জুবিন গর্গের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নেমেছিল মানুষের ঢল। ছবি: আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এক্স পেজ থেকে

প্রিয় শিল্পীকে শেষবার শুধু একঝলক দেখার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল সব বয়সী মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তরা তাঁকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করেন। জুবিনের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দিমোরিয়া কলেজের একটি চন্দনগাছ উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁর দাহক্রিয়ায়; পাশাপাশি তাঁর পদচিহ্ন সংরক্ষণ করা হয়েছে স্থায়ী স্মৃতি ধরে রাখার জন্য।

আসাম সরকার জুবিন গার্গের শেষকৃত্যে রাজ্যের পক্ষ থেকে সম্মাননা দিয়েছে। শেষযাত্রার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে গান স্যালুট দেওয়া হয়। এটি শহরজুড়ে গভীর শ্রদ্ধা ও শোকের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। ভক্তরা ফুল, প্রার্থনা ও গান দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় তাদের প্রিয় শিল্পীকে। প্রতিটি মহল্লা, রাস্তার পাশে, বাজারে জুবিনের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দেখাতে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়।

ভক্তদের এই জনসমাবেশকে লিমকা বুক অব রেকর্ডস বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনসমাবেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ঠিক কতসংখ্যক লোকের উপস্থিতি ছিল, সেটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

‘কিং অব হামিং’খ্যাত জুবিন গার্গ আসামের আঞ্চলিক গান দিয়ে পরিচিতি পান। বলিউডেও প্রচুর জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গান ‘ইয়া আলি’ দিয়ে তাঁর বলিউডে অভিষেক হয়। বহু ভাষা ও ঘরানায় গান গেয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের সংগীতাঙ্গনের এক অনন্য নাম।

মাইকেল জ্যাকসন

২০০৯ সালের ৭ জুলাই। লস অ্যাঞ্জেলেসের স্টেডিয়াম স্টেপলেস সেন্টারে মাইকেল জ্যাকসনের শেষকৃত্য ও স্মরণসভার আয়োজন চলছিল। ভেতরে অতিথির সংখ্যা ১৭ হাজার ৫০০ জন। বাইরের উপস্থিত সংখ্যাটা কত, তা জানলে হয়তো চমকে যাবেন। স্টেডিয়ামের চারপাশে সেই সময় আড়াই লাখ মানুষ তাদের প্রিয় শিল্পীর প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়।

মাইকেল জ্যাকশনের শেষযাত্রা। ছবি: সংগৃহীত
মাইকেল জ্যাকশনের শেষযাত্রা। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোনা থেকে এই স্মরণসভা টেলিভিশন ও অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়। সেই দর্শকদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫০ কোটি! এটি ইতিহাসের অন্যতম সর্বাধিক দেখা টেলিভিশন অনুষ্ঠান।

এই অনুষ্ঠান বার্সেলোনা, বার্লিন, লন্ডন, প্যারিস, মিলান, স্টকহোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের ৮৮টি সিনেমা হলে সরাসরি প্রচার করা হয়েছিল। এই স্মরণসভা মাইকেল জ্যাকসনের প্রতি বিশ্বজুড়ে মানুষের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে আছে।

রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয়

স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে মারা যান যুক্তরাজ্যের রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয়। তাঁর মৃত্যুর পর ১১ দিনব্যাপী শোক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয়; বিশেষ করে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত রাজকীয় শেষকৃত্য আয়োজনে আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিল। লন্ডনের রাস্তাগুলো প্রায় ১০ মাইল দীর্ঘ লাইনে ভরে গিয়েছিল। মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর রানির কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিল।

রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয় এর শেষযাত্রায় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছে মানুষ। ছবি: উইকিপিডিয়া
রানি এলিজাবেথ দ্বিতীয় এর শেষযাত্রায় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছে মানুষ। ছবি: উইকিপিডিয়া

রানির শেষকৃত্যে ২ হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ১৮ রাজতন্ত্রের সদস্য, ৫৫ জন প্রেসিডেন্ট, ২৫ জন প্রধানমন্ত্রী এবং ১৬৮টি দেশের প্রতিনিধিরা। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার করা হয়। সেটি দেখেছিল আনুমানিক ৪১০ কোটি দর্শক।

পোপ জন পল দ্বিতীয়

পোপ জন পল দ্বিতীয়-এর শেষকৃত্যে ৪০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। ছবি: গেইনসভিল ডট কম
পোপ জন পল দ্বিতীয়-এর শেষকৃত্যে ৪০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। ছবি: গেইনসভিল ডট কম

ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে প্রাক্তন পোপ জন পল দ্বিতীয়-এর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল। এটি আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বড় ধর্মীয় সমাবেশ। তাঁর শেষকৃত্যে ৪০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে প্রধান সমাবেশস্থলে ছিল প্রায় ৩ লাখ মানুষ। রোমের অন্যান্য স্কয়ার ও রাস্তায় আরও প্রায় ২৭ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল। আর বাকিরা ছড়িয়ে ছিল আশপাশে। অনুষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী ৮১টি দেশের ১৩৭টি টেলিভিশন চ্যানেল এবং ভ্যাটিকান রেডিওর সাতটি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১০ জন রাজা, ৫ জন রানি, ৮০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, ৭৫ জন সরকারপ্রধান এবং ১৫টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা। এ ছাড়া লাখ লাখ ভক্ত ও সাধারণ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছিল।

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস, টাইম ম্যাগাজিন, এবিসি, রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

১৫ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ইবির এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে

মার্কা শাপলাই হতে হবে, না হলে নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেব: সারজিস আলম

ইসির তালিকায় ‘শাপলা’ নেই, বিকল্প প্রতীক নিতে হবে এনসিপিকে

এই আক্রমণ আখতার হোসেনকে এক বিন্দুও দুর্বল করবে না: তাসনিম জারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত