Ajker Patrika

উড়ানের সময় ককপিটের দরজা খোলা থাকে কেন জানেন?

ফিচার ডেস্ক
বিমানের সমস্ত নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র ফ্লাইট ডেক সাধারণত উড়ন্ত অবস্থায় তালাবদ্ধ থাকে। ছবি: পেক্সেলস
বিমানের সমস্ত নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র ফ্লাইট ডেক সাধারণত উড়ন্ত অবস্থায় তালাবদ্ধ থাকে। ছবি: পেক্সেলস

ফ্লাইট ডেক হলো বিমানের সবকিছু নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র। এটি সাধারণত উড়ন্ত অবস্থায় তালাবদ্ধ থাকে। বিমানে আরোহণের সময় যদি বিমানের সামনের দিকে তাকিয়ে ফ্লাইট ডেক ডোর বা ককপিট ডোর খোলা দেখেন, তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন এমনটি হয়। এর কারণ আসলে বেশ সহজ।

গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়

বিমানবন্দর থেকে একটি বিমান ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তগুলো পুরোপুরি যোগাযোগের ওপর নির্ভরশীল। এই আদান-প্রদান যাত্রীদের চোখে খুব কমই ধরা পড়ে। যদি না তাঁরা খুব মনোযোগী হন। বেসরকারি জেট চার্টার কোম্পানি সিরিয়াস এভিয়েশন সার্ভিসেসের সুরক্ষা পরিচালক কোরি লেন বলেন, ‘পাইলট এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা সক্রিয়ভাবে ফ্লাইটের বিবরণ, যাত্রীসংখ্যা, জ্বালানির অবস্থা, আবহাওয়া এবং শেষ মুহূর্তের যেকোনো পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন।’ কোরি লেন বলেন, দরজা খোলা রাখলে পাইলটরা ককপিট সিল করার আগে একে অন্যের এবং কর্মীদের সঙ্গে আরও দ্রুত কথা বলতে পারেন।

কোরি লেন আরও বলেন, ‘গ্রাউন্ড ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী বা ডিসপ্যাচারদের কাগজের কাজ, ফ্লাইট প্ল্যান আপডেট করা বা চূড়ান্ত পরীক্ষা করার জন্য ককপিটে প্রবেশ করতে হতে পারে। ফেডারেল নিয়মাবলি অনুসারে, বিমানকে সরানোর আগে ককপিটের দরজা অবশ্যই তালাবদ্ধ করতে হবে।’ লেন যে নিয়মের কথা বলছেন, তা হলো সিএফআর ১২১.৫৮৭, যা কোড অব ফেডারেল রেগুলেশনসের একটি অংশ। এয়ারলাইনসগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে এই নির্দেশিকাগুলো। এই কোড অনুযায়ী, বিমান গেট ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর পুরো ফ্লাইটের সময় ককপিটের দরজা সুরক্ষিতভাবে বন্ধ থাকতে হবে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

তবে বিমান গেট ছাড়ার আগে দরজা খোলা থাকাটা ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের জন্য একটি জরুরি উপায়, যার মাধ্যমে তাঁরা কেবিনে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে ক্যাপ্টেনকে অবগত করতে পারেন।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ভেনিজিয়া ম্যাকিয়াস বলেন, ‘পাইলটরা আরোহণের সময় দরজা খোলা রাখেন; কারণ, তাঁরা তাঁদের নিজেদের দায়িত্ব সামলান এবং যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। তাঁরা ব্যাগেজের ওজন ও ভারসাম্য, শেষ মুহূর্তের কাগজপত্র বা রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা নিয়ে গেট এজেন্ট এবং র‌্যাম্পারদের সঙ্গে কথা বলেন।’ তিনি আরও বলেন, কেবিনে কোনো সমস্যা হলে; যেমন যদি কোনো যাত্রীকে নামানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁরা ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের জন্যও দরজা খোলা রাখেন। দিনের শেষে, ক্যাপ্টেনই সবকিছু পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন এবং তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই মানা হয়। তাই এই খোলা দরজা উড্ডয়নের আগে যোগাযোগের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

যাত্রীদের জন্য বাড়তি সুযোগ

খোলা ককপিট দরজা মাঝে মাঝে কৌতূহলী ভ্রমণকারীদের জন্য একটি সুযোগ। এই সুযোগে তাঁরা ভেতরে একঝলক দেখার সুযোগ পান। যদিও এটি উচিত নয়। তবে কিছু এয়ারলাইনস একটি সংক্ষিপ্ত পরিদর্শনের অনুমতি দিতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি বাচ্চাদের সঙ্গে ভ্রমণ করেন বা বিমান চালনায় আপনার সত্যিকারের আগ্রহ থাকে। তবে জিজ্ঞেস করার সেরা সময় হলো আরোহণের সময় নয়, বরং যখন আপনি আপনার গন্তব্যের গেটে অবতরণ করেছেন। এই পরিদর্শন ক্রুদের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে এবং কঠোর নিরাপত্তা নিয়মের অধীন। তাই এটিকে একটি প্রত্যাশিত অধিকারের চেয়ে একটি আনন্দদায়ক অপ্রত্যাশিত সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ককপিট ও নিরাপত্তা

৯/১১ অর্থাৎ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর বিশ্বজুড়ে বিমান নিরাপত্তা প্রটোকল কঠোরভাবে পরিবর্তিত হয়। এর আগে পাইলটরা সাধারণত যাত্রীদের সঙ্গে গল্প করার জন্য ককপিটের দরজা খোলা রাখতেন কিংবা অনেক যাত্রীকে ককপিট দেখানোর অনুমতি দিতেন। ৯/১১-এর পর সব বাণিজ্যিক বিমানের ককপিট দরজাগুলো বুলেটপ্রুফ এবং বলপূর্বক খোলা অসম্ভব করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উড়ানের সময় এই দরজা সব সময়ের জন্য তালাবদ্ধ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। উড়ন্ত অবস্থায় যদি পাইলটদের খাবারের প্রয়োজন হয় বা বাথরুম ব্যবহারের জন্য দরজা খুলতে হয়, তবে তা একটি কঠোর প্রটোকলের মাধ্যমে করতে হয়। সাধারণত একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ককপিটের সামনে দাঁড়িয়ে একটি পর্দা বা ট্রলি দিয়ে দরজাটিকে আড়াল করে দেন, যাতে অন্য কোনো যাত্রী প্রবেশ করতে না পারে। অন্য একজন পাইলট বা ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ভেতরে থাকার পরই দরজা খোলা হয়, যাতে সব সময় দুজন ব্যক্তি ককপিটে থাকেন।

সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত