Ajker Patrika

মিথ্যাবাদী চেনার ৫ উপায়

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

বাড়ি, অফিস বা বন্ধুদের অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নেন। সেটি হয়তো আপনি বুঝতে পারেন না। যদিও সময়ের সঙ্গে মিথ্যাবাদী সাধারণত ধরা পড়ে। কিন্তু কাউকে মিথ্যাবাদী চিহ্নিত করা সব সময় সহজ নয়। অনেক মানুষ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মিথ্যা বলতে পারে, যা শুরুতে বোঝা দায়।

তবে খেয়াল করলে কিছু সূক্ষ্ম শারীরিক ভঙ্গি এবং আচরণ আমাদের বলে দিতে পারে, কে মিথ্যা বলছে।

চোখের যোগাযোগ এড়ানো

বলা হয়, চোখ হলো মনের জানালা। সত্যি কথা বলা মানুষ সাধারণত সহজে চোখে চোখ রাখে। তারা আত্মবিশ্বাসী থাকায় কথা বলার সময় চোখের যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু মিথ্যাবাদীরা সাধারণত চোখ এড়িয়ে যায়। কেউ একেবারে চোখ তাকায় না, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত চোখ রাখে, যেন নিজের সততা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। দুটোই অস্বাভাবিক।

যদি কেউ আপনাকে প্রশ্নের সময় চোখ এড়িয়ে পেছনের দিকে কিংবা আপনার দিকে অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ সময় তাকায়, এটি সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিত। সব সময় চোখের ভঙ্গি কখনো মিথ্যা ধরার উপায় নয়, তবে অন্য ইঙ্গিতের সঙ্গে মিললে তা বড় সতর্কসংকেত।

নার্ভাস এবং অবিচ্ছিন্ন হাত-পা নাড়াচাড়া

মিথ্যা বলার সময় মানুষ প্রায়ই মানসিক চাপ অনুভব করে। সেই চাপ কমানোর জন্য অবচেতনভাবে বিভিন্ন কাজ করে, যা তাদের শারীরিক ভঙ্গিতে প্রকাশ পায়।

সাধারণ উদাহরণগুলো হলো—

– পা নাড়ানো

– আঙুল নাড়াচাড়া কিংবা কোনো ছোট বস্তু খেলনা হিসেবে ব্যবহার করা

– চুল বা মুখে হাত দেওয়া

– বসা থাকলেও অস্থিরভাবে নড়াচড়া

এই ধরনের আচরণ শুধু ইঙ্গিত। তবে যদি এগুলো নির্দিষ্ট প্রশ্নের সময় হয়, তাহলে এটি মিথ্যার বড় সতর্কতা হিসেবে ধরা যায়।

অপ্রয়োজনীয় বিস্তারিত দেওয়া

মিথ্যাবাদীরা প্রায়ই সত্য লুকাতে অতিরিক্ত তথ্য দিতে শুরু করে। তারা মূল বিষয়ের বাইরে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, দীর্ঘ গল্প বা ছোট উদাহরণ যুক্ত করে, যেন তাদের কথার সত্যতা অন্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কাউকে সরলভাবে কোনো বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তখন সাধারণ সৎ মানুষ শুধু প্রয়োজনীয় তথ্যই দেবে। কিন্তু মিথ্যাবাদীরা প্রায়ই প্রশ্নের প্রসঙ্গ অতিক্রম করে দীর্ঘ বিবরণ দেয়। কখনো কখনো এমনকি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা বা উদাহরণ পর্যন্ত টেনে আনে। যদিও এই আচরণ একা মিথ্যার নিশ্চিত প্রমাণ নয়, তবে এটি একটি সতর্কবার্তা; বিশেষ করে যদি অন্য শারীরিক ভঙ্গি ইঙ্গিত; যেমন চোখ এড়ানো বা হাত-পা নাড়াচাড়া দেখা গেলে বোঝা যায়, তারা সত্য চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এবং আপনার সামনে পুরো সত্য প্রকাশ করছে না।

উত্তর দিতে দেরি করা

সৎ মানুষ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে দ্রুত এবং নির্ভুল উত্তর দেয়। মিথ্যাবাদীরা প্রায়ই কিছু সময় রুখে রেখে উত্তর দেয়। এর কারণ হলো, মস্তিষ্ক অতিরিক্ত পরিশ্রম করে এমন গল্প বানাচ্ছে, যা অন্যদের বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। এমন দেরি খুব ছোট হলেও একটি কারণ হতে পারে। যদি আপনি সরল প্রশ্ন করেন এবং উত্তর পেতে কারও একটু থেমে যেতে দেখা যায়।

জোর করে হাসি

সত্যিকারের হাসি চোখ দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু মিথ্যাবাদীরা প্রায়ই জোর করে হাসে, যেখানে শুধু মুখই হাসে। এই নকল হাসি চাপ, অস্বস্তি বা অপরাধবোধ ঢাকার জন্য ব্যবহার করা হয়। লক্ষ করুন, সত্যিকারের হাসি চোখের কোণে ভাঁজ তৈরি করে। জোর করা হাসি কখনো এমনটা হয় না। কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে কেউ হঠাৎ হাসে, সেটা তার অস্বস্তি ঢাকার কৌশল। এটি ভদ্র মনে হলেও আসলে মিথ্যা লুকানোর চেষ্টা।

শরীরবিষয়ক ভঙ্গি দেখে সব সময় নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, কেউ মিথ্যা বলছে। তবে একাধিক ইঙ্গিত একই সময়ে দেখা গেলে তা সতর্কতার সংকেত। চোখের দৃষ্টি, হাত-পা নড়াচড়া, অতিরিক্ত ব্যাখ্যা, উত্তর দেরি, জোর হাসি—সব মিলিয়ে সহজে বোঝা যায়, কেউ সত্য বলছে না।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত