Ajker Patrika

গুলিয়াখালী সৈকতে

মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪৬
গুলিয়াখালী সৈকতে

সাগর বললেই আমাদের চোখে ভাসে পতেঙ্গা, কক্সবাজার অথবা সেন্ট মার্টিনের কথা। কিন্তু চট্টগ্রামেই আছে অসাধারণ এক সৈকত। সেখানে সাগরপাড়ের সবুজের ভুবন, বালু নেই। পা ফেলতেই কাদামাখা মাটির আস্তরণে নরম ঘাসের রাজত্ব। দুই দিকে কেওড়া বন। সেই বনের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি খাল। খালের পাশ ধরে সামনে দেখা যাবে বিশাল জলরাশি আর তার ঢেউ। আছড়ে পড়ছে একেবারে তীরে—সবুজ ঘাসের ওপর। তবে গর্জন কম। কিছুটা আটপৌরে এখনো। দেখে মনে হবে, লজ্জা কাটেনি তার।

না, এখানেই শেষ নয়। পরিবেশটা একেবারেই সুনসান। খানিক পর সূর্য রানি পশ্চিমে যাবেন। তারপর টুপ করে ডুব দেবেন সমুদ্রের জলে। আর তাতেই বাড়বে মায়া। বাড়বে ভালোবাসার টানে ফিরে আসার তাড়া।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে এই সৈকত। নাম গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অবশ্য এই জায়গা মুরাদপুর বিচ নামে পরিচিত। প্রতিদিনই দলে দলে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভিড় করছেন সীতাকুণ্ডের এই গুলিয়াখালী সৈকত ওরফে মুরাদপুর বিচে।

মন ভাসাইয়া দে

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত আর প্রকৃতির মাখামাখি বহুদিনের। সাগরপাড়ে যাওয়ার পথে রয়েছে সবুজ ঘাসের ছোট ছোট মাটির চাক বা কুণ্ড। সেখানে পা দিয়েই এগিয়ে যেতে হয় ঢেউয়ের কাছে। ইচ্ছে করবে হাত-পা এলিয়ে দিয়ে সাগরকে উঁকি দেওয়া নীলাকাশ দেখার। ঢেউয়ের ওপর সাদা মেঘের ভেলা। খেলছে আনমনে। যত দূর চোখ যায় উত্তাল তরঙ্গ। মন কেড়ে নেয় সহজে।

ওই তো, সাগরপাড়ে উড়ে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল। কোথা থেকে আসছে এত পাখি? কাদা জলে উদোম গায়ে ফুটবলে মেতেছে একদল কিশোর। ইচ্ছে হলে নেমে পড়তে পারেন ওদের সঙ্গে, মনের আনন্দে।

সাগরের ঢেউয়ে দুলছে নৌকা। জেলেরা ফিরে আসছেন মাছ নিয়ে। পাড়েই রয়েছে অনেক বোট। ঘুরে আসতে পারেন ঘণ্টাখানেক। সাগরের বুকে জড়িয়ে থাকা সন্দ্বীপের দৃশ্য মনটা ভালো করে দেবে। বিকেল গড়াতেই সূর্য ডুবে যায়। ম্যানগ্রোভ বনের হাতছানি ডাক দেয় চুপিচুপি। এখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে সূর্যাস্ত দেখার মজাটা সত্যি অন্য রকম!

জোয়ারের সময় গুলিয়াখালী সৈকতএ যেন সুন্দরবন

সাগরের পাড়েই কেওড়াগাছের গহিন বন। চোখে পড়ে সারি সারি শ্বাসমূল। জোয়ারের সময় সেই বনের গাছের ফাঁকে ঢুকে যায় সাগরের পানি। নৌকাভ্রমণে গিয়ে মনে হবে, আরে, সুন্দরবনে চলে এলাম না তো!

অনেকে প্রিয় মুহূর্তটা স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে ছবি তুলতে ভুল করেন না। গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত অসংখ্য ছোট খালের মিলনস্থল। এসব খালে ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। ভাটার সময় দারুণ লাগে পুরো সৈকত। তবে সাগরের কাছে এসেই জোয়ার-ভাটার তথ্যটা টুকে নিতে হবে আপনাকে। নইলে কাদামাখা পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হবে যে!

বদলে যাচ্ছে পর্যটন স্পট

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের অবারিত সম্ভাবনা একে আরও জনপ্রিয় করে তুলছে দিন দিন। সরকার এই সৈকতকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে হাতে নিয়েছে নানা পরিকল্পনা। যার মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট, নৈসর্গিক কাঠের সেতু, পার্কিংসহ অনেক কিছু।

সীতাকুণ্ডের ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, বর্ষাকালে যাতায়াত করতে এসে কেউ যাতে দুর্ভোগে না পড়েন, তাই সেতু নির্মাণের দিকে তাঁরা নজর দিয়েছেন।

আনন্দের খবর হচ্ছে, এই বিচে প্রবেশে কোনো বাধা নেই। লাগবে না প্রবেশ ফি কিংবা টাকাপয়সা। এই বিচে ঢাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন সালাউদ্দিন রেজা। তিনি বলেন, ‘চমৎকার একটি বিচ। ভালো লাগল। কক্সবাজারের মতো অত গর্জন নেই। নীরব। শান্ত ঢেউ।’

যাওয়ার পথটা খুব সহজ

সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে যেতে হলে আপনাকে স্থানীয় বাজারে আসতে হবে। মানে সীতাকুণ্ড বাজার। সীতাকুণ্ড উপজেলায় গাড়ি থেকে নেমেই বাজারে চলে আসা খুব সহজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই গুলিয়াখালী সৈকতে যাওয়ার রাস্তা। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে সাগরের বেড়িবাঁধে গিয়ে নামতে হবে।

এরপর সামনে এগোলেই চমৎকার বিচটি। অনেকে চট্টগ্রাম শহরে রাত যাপন করে পরদিন সকালে গুলিয়াখালীতে চলে যান। চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড যেতে লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। সারা দিন থেকে সন্ধ্যায় আবার শহরে ফিরে আসা যায়। চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী স্টেশন থেকে প্রচুর ছোট-বড় লোকাল গাড়ি ছাড়ে সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে।

ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৬০-১০০ টাকা। কেউ কেউ ফেনী থেকে বিচের সৌন্দর্য দেখার জন্য সীতাকুণ্ডে আসেন। তখন ভাড়া পড়বে ৮০-১৬০ টাকা। তবে সমুদ্রসৈকতে আসা-যাওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে নেওয়াই ভালো।

সতর্কতা

  • খাবারের প্যাকেটসহ কোনো প্লাস্টিক পণ্য যেখানে-সেখানে ফেলবেন না।
  • জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে।
  • সন্ধ্যার পর সৈকতে অবস্থান করবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত