Ajker Patrika

সিনিয়র অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

মহিউল ইসলাম হৃদয়
সিনিয়র অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

গত ১৬ মে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের আওতাধীন ৮টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০২২ সালের ভিত্তিতে সিনিয়র অফিসার পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ৯৭৪টি শূন্য পদের বিপরীতে এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ হাজার ৮০৫ জন। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা ২০ জুন অনুষ্ঠিত হবে। হাতে সময় খুব বেশি নেই, তবে শেষ সময়কেও যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে এ পর্ব অতিক্রম করে চাকরি পাওয়ার সুযোগ একেবারে অমূলক নয়। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিকে ফলপ্রসূ করে তুলতে পরামর্শ দিয়েছেন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মহিউল ইসলাম হৃদয়

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির অধীনে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার মোট নম্বর ২০০। এই পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিভাজন হলো: ইংরেজি ফোকাস রাইটিং ৩৫, বাংলা ফোকাস রাইটিং ৩৫, সাধারণ জ্ঞান ৩০, ইংরেজি কম্প্রেহেনশন ৩০, গণিত ৩০, ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ ১০ এবং ইংরেজি আর্গুমেন্টেটিভ রাইটিং ৩০। পরীক্ষার সময়সীমা মোট ২ ঘণ্টা।

ব্যাংকে চাকরির তিনটি ধাপের মধ্যে লিখিত পরীক্ষাটি সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে পারলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তবে এ ধাপে অনেকেরই গণিত অংশে তুলনামূলক নম্বর কম থাকে, ফলে মোট নম্বর কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায় না। সাধারণত লিখিত পরীক্ষায় ১২০-১৩০ নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের ভাইভা পরীক্ষার জন্য বিবেচনায় আনা হয়। তাই পরীক্ষার আগের এই শেষ সময়টুকু গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারলে একজন প্রার্থী সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারেন।

ইংরেজি ফোকাস রাইটিং (৩৫ নম্বর)

ইংরেজি ফোকাস রাইটিং একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে গভীরভাবে আলোচনার মাধ্যমে লেখা উপস্থাপন। এই অংশে ভালো করলে সহজেই ২০-২৫ নম্বর পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার সময় ২০-২৫ মিনিট ধরে ৩-৪ পৃষ্ঠা লেখা উচিত। শুরু ও শেষে প্রাসঙ্গিক সুন্দর দুটি উক্তি যুক্ত করলে তা পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লেখায় প্রয়োজনীয় ডেটা, চার্ট বা গ্রাফ সংযুক্ত করলে তা আরও তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় হয়। লেখাটি কয়েকটি উপবিভাগে ভাগ করে লিখলে গঠন পরিষ্কার হয় এবং পাঠযোগ্যতা বাড়ে। যেমন: ভূমিকা, সমস্যার প্রেক্ষাপট, কারণ, প্রভাব, সমাধান ও উপসংহার।

বাংলা ফোকাস রাইটিং (৩৫ নম্বর)

বাংলা ফোকাস রাইটিংয়ের ক্ষেত্রেও ইংরেজির মতো একই রকম গুরুত্ব বহন করে। তবে বাংলা অংশে লেখাটি তুলনামূলকভাবে একটু বড় করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে। লেখার শুরু ও শেষে প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ কিছু চমৎকার লাইন যোগ করলে তা পরীক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ভালো ফোকাস রাইটিংয়ের জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। যে যত বেশি পত্রিকা পড়বেন, তত রিডিং ও রাইটিং দক্ষতা তত উন্নত হবে এবং লেখার গঠন ও বিষয়বস্তু আরও সমৃদ্ধ হবে।

সাধারণ জ্ঞান (৩০ নম্বর)

ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশে মোট ১৫টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ২ করে সর্বমোট ৩০ নম্বর। এই অংশে একজন প্রার্থী চাইলে পূর্ণ ৩০ নম্বরও পেতে পারেন। সাধারণ জ্ঞান অংশের অধিকাংশ প্রশ্নই সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর ভিত্তি করে আসে। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর দেওয়ার সময় পুরো বাক্য লেখার পরিবর্তে এক বা দুই শব্দে সংক্ষিপ্তভাবে উত্তর দেওয়া উত্তম।

ইংরেজি কম্প্রেহেনশন (৩০ নম্বর)

লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি কম্প্রেহেনশন অংশে মোট ৬টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটির মান ৫ করে মোট ৩০ নম্বর। এই অংশটি অনেক সময় লিখিত পরীক্ষায় পার্থক্য গড়ে দেয়। এখানে পূর্ণ ৩০ নম্বর অর্জন করা সম্ভব, যদি প্যাসেজটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে যথাযথভাবে উত্তর দেওয়া যায়। প্রতিটি উত্তর ২-৩টি সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক বাক্যে লেখা উচিত। কোনোভাবেই প্যাসেজের বাক্য হুবহু কপি করা যাবে না। খাতায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখা হলে তা দেখতে পরিষ্কার ও আকর্ষণীয় লাগে। খাতায় কাটাকাটি করা একেবারেই বর্জনীয়। এই অংশে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখাই যুক্তিসংগত।

গণিত (৩০ নম্বর)

লিখিত পরীক্ষায় অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গণিত। এখানে ৫টি প্রশ্ন থাকে, প্রতিটির মান ৬ করে মোট ৩০ নম্বর। যেহেতু প্রশ্নগুলো বাংলায় থাকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের বই থেকেই আসে, তাই একটু অনুশীলন করলেই এই অংশে পূর্ণ নম্বর তোলা সম্ভব। যাঁরা ফোকাস রাইটিংয়ে দুর্বল, তাঁরা গণিতে ভালো করে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। অনেকে গণিত অংশে কম নম্বর পাওয়ার ভয় থেকে এখানে কম সময় দেন, যা ঠিক নয়। বরং অন্য বিষয়ের চেয়ে গণিতে বেশি সময় বরাদ্দ দেওয়া উচিত। কারণ এটি তুলনামূলকভাবে নিশ্চিত নম্বর তোলার সুযোগ দেয়।

অনুবাদ (১০ নম্বর)

অনুবাদ অংশে ইংরেজি থেকে বাংলায় একটি অনুবাদ থাকে, যার মান ১০ নম্বর। এই অংশে সঠিক শব্দচয়ন এবং বানান নির্ভুল রেখে অনুবাদ করলে সহজেই ৭-৮ নম্বর পাওয়া সম্ভব। অনুবাদ শুরু করার আগে পুরো অংশটি ভালো করে একবার পড়ে নিতে হবে, যাতে সঠিকভাবে ভাব বুঝে অনুবাদ করা যায় এবং সময় বাঁচে। এই অংশে ৫-৬ মিনিটের বেশি সময় ব্যয় না করাই উত্তম।

আর্গুমেন্ট রাইটিং (৩০ নম্বর)

ইংরেজি আর্গুমেন্ট রাইটিং লিখিত পরীক্ষার একটি ব্যতিক্রম ও সৃজনশীল অংশ। এখানে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এটি প্রার্থীর যুক্তি উপস্থাপনার দক্ষতা ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা যাচাইয়ের সুযোগ তৈরি করে। এই অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে লিখতে হয়। লেখার শুরুতে সংক্ষিপ্ত একটি ভূমিকা, তারপর মূল অংশে অন্তত তিনটি পৃথক প্যারায় যুক্তি ও উদাহরণসহ অবস্থান তুলে ধরা এবং শেষে একটি উপসংহার দিয়ে লেখা শেষ করা উচিত। লেখা ৩-৪ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে ভালো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত