পাকিস্তানে জিম্মি ট্রেনে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ৫৮

প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে বেলুচ বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি ট্রেনকে মুক্ত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। চার শতাধিক আরোহীসহ জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে বড় প্রাণহানি ঘটেছে।

শেষে বিদ্রোহী ও বেসামরিক ব্যক্তিরাসহ অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন ও জিও নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযানে ২১ বেসামরিক ব্যক্তি ও নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে আত্মঘাতী বোমাবাজসহ মোট ৩৩ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

জাফর এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনটির ৯টি বগিতে ৪৪০ জন যাত্রী ছিল। বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বোলান জেলার গুদালার ও পিরু কুনরির পাহাড়ি এলাকায় এক টানেলের কাছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সদস্যরা বিস্ফোরক ব্যবহার করে ট্রেনটিকে লাইনচ্যুত করে এবং জিম্মি করে। ঘটনাস্থলটি কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তান থেকে ট্রেনে পরিচালিত হয় এবং সেখানে থাকা সন্ত্রাসী নেতারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তান আশা করে, আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর জন্য তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না।’

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় বিএলএ দাবি করেছিল, তারা ৫০ যাত্রীকে হত্যা করেছে। তার আগে মঙ্গলবার সংগঠনটি জানিয়েছিল, তারা ২১৪ জনকে জিম্মি করেছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

বেলুচিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিএলএ। এই গোষ্ঠী ইরান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয়। পাকিস্তান সরকার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেলুচ রাজনৈতিক বন্দী, কর্মী ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের মুক্তি দিলে জিম্মিদের হত্যা করা শুরু করবে বলে বিএলএ হুমকি দিয়েছিল। এসব বন্দীদের সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে গেছে গোষ্ঠীটির দাবি।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমাদ শরীফ জানিয়েছেন, বিদ্রোহীরা যাত্রীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল বলে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হতে দেরি হয়। তিনি বলেন, ‘উদ্ধার অভিযান ধাপে ধাপে পরিচালিত হয়েছে এবং সন্ধ্যায় চূড়ান্ত অভিযান শেষে বাকি সব জিম্মিকে নিরাপদে মুক্ত করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, প্রথমে স্নাইপাররা আত্মঘাতী হামলাকারীদের হত্যা করে, এরপর একে একে ট্রেনের প্রতিটি বগি থেকে বিদ্রোহীদের নিকেশ করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অভিযান চলাকালে কোনো যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।