Ajker Patrika

কনডেম সেলে ইমরান খান— পরিবার ও সমর্থকদের উদ্বেগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য টাইমস
ছবি: দ্য টাইমস

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরান খান বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের একটি বিশেষ কক্ষে বন্দী আছেন, যা সাধারণত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য নির্ধারিত থাকে। তাঁর পরিবার ও সমর্থকেরা অভিযোগ করছেন, তাঁকে অমানবিক পরিবেশে একঘরে করে রাখা হয়েছে, যা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শামিল।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, ৭২ বছর বয়সী খান বর্তমানে ৯ ফুট বাই ১১ ফুটের একটি কক্ষে একাই অবস্থান করছেন। সমর্থকদের দাবি, তিনি ২২ ঘণ্টা ধরে প্রতিদিন একাকী বন্দী থাকেন। কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই, এমনকি আইনজীবী ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎও যখন-তখন বাতিল করে দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় ইমরান খানের দুই পুত্র সুলেমান ও কাসিম তাঁদের বাবাকে মুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। কাসিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার বাবা একজন নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে এমন সেলে রাখা হয়েছে যেখানে আলো, বাতাস বা সঠিক চিকিৎসা নেই। এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, মানবাধিকারেরও বড় লঙ্ঘন।’

গত বছরের আগস্টে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইমরান খানকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে জমি গ্রহণ করেছিলেন। একই মামলায় বুশরাকেও একই মেয়াদের সাজা দেওয়া হয়। এর বাইরে ইমরানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসসহ নানা অভিযোগে আরও তিন শতাধিক মামলা চলছে। তবে তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ইমরান খানের লেখা একটি চিঠি সম্প্রতি কারাগার থেকে গোপনে বাইরে আনা হয়। এটি পরে পৌঁছে দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতির কাছে। চিঠিতে ইমরান লিখেছেন, ‘আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে, বই-সংবাদপত্র পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। একমাত্র ব্যক্তি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ইচ্ছায় সাক্ষাৎ বাতিল করা হচ্ছে।’ তিনি এটিকে অবৈধ বন্দিদশা ও মানসিক নির্যাতন হিসেবে উল্লেখ করেন।

পরিবারের উদ্বেগ আরও বেড়েছে খানের স্বাস্থ্য নিয়ে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পাননি। সমর্থক জুলফিকার বুখারি বলেন, ‘আমরা জানি না তাঁর স্বাস্থ্য এখন কেমন। তাঁকে ফাঁসির আসামিদের মতো পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছে।’

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরীর দাবি, ইমরান নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন, তাঁর জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা আছে, এমনকি ব্যায়ামের যন্ত্রও সরবরাহ করা হয়েছে। সরকার বলছে, ইমরান ও তাঁর দল রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়ার জন্য নিজেদের ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করছে।

ইমরান খানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে সামরিক সমর্থনে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে। তবে মাত্র চার বছর পর সেনাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় তিনি ক্ষমতা হারান। বর্তমানে পিটিআই দাবি করছে, সেনা ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের যোগসাজশে ইমরানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ইমরানের দুই ছেলে সম্প্রতি ওয়াশিংটনে গিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁদের মা ও ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ বলেছেন, ‘এটি রাজনীতি নয়, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ।’

পাকিস্তানের ইতিহাসে অর্ধেক সময় সামরিক শাসন বিদ্যমান ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক শক্তির এই দ্বন্দ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ইমরান খান এবং তাঁর সমর্থকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা থাকার পরও ইমরানকে কারাগারের ভেতর নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদের জানাজায় মানুষের ঢল

খুব কষ্ট পেলাম! লাশের হাতে হ্যান্ডকাফ— সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদের মৃত্যু প্রসঙ্গে মান্না

বিএনপি নেতার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি যুবদল নেতার, থানায় অভিযোগ

ময়মনসিংহে পূজা দেখতে বেরিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত