Ajker Patrika

২০ বছর পর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি ট্যাংক, আরেক গাজার আশঙ্কা

দীর্ঘ দুই দশক পর পশ্চিম তীরে ট্যাংক প্রবেশ করিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: এএফপি
দীর্ঘ দুই দশক পর পশ্চিম তীরে ট্যাংক প্রবেশ করিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

দীর্ঘ ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে ট্যাংক প্রবেশ করিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের শরণার্থীশিবিরগুলোতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সেনাবাহিনীকে ‘দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান’ গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। এই অবস্থায় ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে গাজার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে পরিণত করতে পারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, পশ্চিম তীরকে হয়তো আরেকটি গাজায় পরিণত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের তরফ থেকে এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এল, যখন গাজায় চলমান ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। হামাস চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত ৬ জিম্মিকে মুক্তি দিলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন।

গত এক মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে এরই মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জেনিন ও তুলকারেমের মতো শহরগুলোর শরণার্থীশিবিরগুলোতে অভিযান চালিয়ে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর, বিশেষ করে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছে।

এই শরণার্থীশিবিরগুলোতে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় যে ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন বা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের বংশধরেরা বসবাস করছেন। ইসরায়েলের দাবি, গত কয়েক দশক ধরে এসব শিবিরই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শক্ত ঘাঁটি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে এসব শিবির থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং শিবিরগুলো এখন খালি রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

এদিকে, নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে অভিযান আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, গত বৃহস্পতিবার তেল আবিবের কাছে পরিবহন ডিপোগুলোতে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব বিস্ফোরণে কেউ হতাহত না হলেও, দুই দশক আগের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় শত শত ইসরায়েলির মৃত্যুর স্মৃতি স্মরণ করছে ইসরায়েলি নীতি নির্ধারকেরা।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনা পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েনের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি একটি বিপজ্জনক ইসরায়েলি উসকানি, যা স্থিতিশীলতা বা শান্তি বয়ে আনবে না।’

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা জেনিন, তুলকারেম ও নুর শামস শরণার্থীশিবিরে অভিযান চালিয়ে ২৬ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তিনটি বন্দুক ও অন্যান্য অস্ত্র জব্দ করেছে। তারা অভিযানের পরিধি বাড়িয়ে নাবলুস, কাবাতিয়া ও দক্ষিণের দেইর কাদ্দিস পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো গুঁড়িয়ে, এমনকি রাস্তা খুঁড়ে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। রোববার ইসরায়েলি যুদ্ধট্যাংকগুলোকে পশ্চিম তীরের জেনিনের দিকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে।

গাজায় ৪২ দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতি চলাকালে এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান স্থগিত থাকায়, ইসরায়েলি নজর এখন ক্রমশ পশ্চিম তীরে সরে এসেছে। ইসরায়েলি সেনারা সবসময়ই পশ্চিম তীরে সক্রিয় থাকলেও এবার সাঁজোয়া যানসহ ভারী ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রমাণ করে যে, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করছে। এই গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরান থেকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছে বলেও দাবি করে আসছে ইসরায়েল।

রোববার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেন, ‘দশকের পর দশক পর পশ্চিম তীরে—যেটিকে আমরা জুডিয়া ও সামারিয়া বলি—আমরা সেখানে ট্যাংক পাঠিয়েছি। এর অর্থ একটাই, আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সব উপায়ে, সব জায়গায় লড়াই করছি।’

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে পশ্চিম তীরে শত শত ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের পশ্চিম তীরে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি মূল্যায়ন করতে গিয়ে লেবেক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির গোয়েন্দা প্রধান মাইকেল হোরোভিটজ বলেন, পশ্চিম তীরে ট্যাংক মোতায়েন ‘যুদ্ধবিরতির জন্য খুবই স্পর্শকাতর সময়ে’ ঘটছে। তিনি উল্লেখ করেন, নেতানিয়াহু দেশীয় চাপে রয়েছেন। তাঁর যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে এবং তিনি হয় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবেন বা তার কট্টর-ডানপন্থী জোট সরকারের পতনের ঝুঁকি নেবেন।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই অঞ্চলটিকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখে এবং এই রাষ্ট্রে গাজাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীদের মধ্যে এখন প্রকাশ্যেই পশ্চিম তীরকে যুক্ত করে নেওয়ার আহ্বান বাড়ছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, তখন তিনি পুরো পশ্চিম তীর দখলের বিষয়ে সমর্থন দেবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে তাঁর এই বক্তব্য ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বিতীয় ‘নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে নিজেদের ভূমি হারানোর ঘটনাকে ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ হিসেবে উল্লেখ করে।

এরই মধ্যে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের শরণার্থীশিবিরগুলোকে দুর্বল করতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ পরিচালিত সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ—এর সদর দপ্তর বন্ধ করতে বাধ্য করেছে।

রোববার কাৎজ জানান, এই সংস্থাকে শরণার্থীশিবিরগুলোতে কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৫
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন জোহরান মামদানি। ভোট শেষে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পরপরই বার্তা সংস্থা এপি তাঁর বিজয়ের খবর নিশ্চিত করে। বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া উত্তেজনাপূর্ণ এ নির্বাচনে তার জয় ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ৮৪ লাখের বেশি মানুষের এই শহর অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বৈশ্বিক শক্তিকেন্দ্র। সেই শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নেতা হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখালেন মামদানি।

বহুধর্মী ও বহুজাতির এই মহানগরের ভোটারেরা মামদানির জয়কে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তবে তাঁর নিবেদিত সমর্থকেরা বলছেন, এটি কেবল ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের জয় নয়—এটি জীবনের ব্যয় সামাল দেওয়ার বাস্তব সমস্যায় তার তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট অবস্থানের প্রতিফলন।

এই নির্বাচন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো অনেকের কাছে পুরোনো ধনবান দাতানির্ভর রাজনীতির প্রতীক। আর নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া মামদানি দলটির জন্য নতুন এক পথের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

মঙ্গলবার ভোট দেওয়ার সময় কুমো বলেন, এটি ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরের এক গৃহযুদ্ধ, যা বহুদিন ধরে জ্বলছিল।’ তিনি বলেন, ‘চরমপন্থী বামপন্থীরা, যারা নিজেদের সমাজতন্ত্রী বলে, তারা মাঝারি ডেমোক্র্যাটদের চ্যালেঞ্জ করছে। তোমরা যেটা এখানে দেখছো, সেটাই সেই সংঘর্ষ।’

তবে ব্রংক্সের মোট হ্যাভেন এলাকার সমাজকর্মী জোশুয়া উইলসন মামদানীকে ভোট দিয়েছেন। তাঁর মতে, কুয়োমো যা বলেছেন তা আংশিক সত্য। তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে এখন সবার নজর নিউইয়র্কে, নজর যুক্তরাষ্ট্রে। সব কিছু রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে, ঘৃণা আর তিক্ততা বেড়ে গেছে।’ ৩৩ বছর বয়সী উইলসন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কণ্ঠ আসছে, এটা অনেককে ভয় দেখাচ্ছে। তারা পুরোনো অবস্থা ধরে রাখতে চায়, যেন কিছুই না বদলায়।’

একই এলাকার ৬৮ বছর বয়সী লুসি করদেরো বললেন, ‘আমরা কুয়োমোকে চিনি, তিনি খুব ভালো মানুষ নন। আমি মামদানীকে বেছে নিয়েছি, কারণ তিনি নতুন, তরতাজা। হয়তো তিনি পরিবর্তন আনতে পারবেন, যা এখন ভীষণ দরকার।’

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প কুয়োমোকে সমর্থন দিয়েছিলেন, যাতে রক্ষণশীল ভোটারদের উজ্জীবিত করা যায়। কিন্তু সেটি উল্টো ফল দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কুয়োমোর সাবেক সমর্থকরাও মামদানীর প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ইফতিখার খান বলেন, মামদানী মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের এক বিশাল ঐক্য গড়ে তুলেছেন। অনেকেই মনে করছেন, তার এই বিজয় নিউইয়র্কের মুসলিমদের জন্য নতুন রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা। কারণ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মুসলিমরা এই শহরে বৈষম্যের কঠিন সময় পার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচন: ভোট গণনা শেষ, ‘জিততে যাচ্ছেন মামদানি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৮
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গণনাও শুরু হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নির্বাচনে অন্তত ২০ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহকারী প্ল্যাটফর্ম ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ জানিয়েছে, জোহরান মামদানিই জিতবেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভোট গণনা সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশের আশা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের সমর্থকেরা ফলাফলের অপেক্ষায় নানা স্থানে আয়োজন করেছে ওয়াচ পার্টি।

মামদানির নির্বাচনী অনুষ্ঠান হচ্ছে ডাউনটাউন ব্রুকলিনের ঐতিহাসিক কনসার্ট ভেন্যু ব্রুকলিন প্যারামাউন্টে। অন্যদিকে, কুমো তাঁর নির্বাচনী আয়োজন করেছেন ম্যানহাটনের মিডটাউনের জিগফেল্ড থিয়েটারে। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়া তাঁর নির্বাচনী পার্টির আয়োজন করেছেন ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্ট সাইডের একটি রেস্তোরাঁয়, যেটি মূলত ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন জানিয়েছে, ১৯৮৯ সালের পর এবারই প্রথম ভোটার উপস্থিতি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আগেই বোর্ড এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।

এদিকে, নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জোহরান মামদানির প্রচারশিবিরের প্রেস সেক্রেটারি ডোরা পেকেক আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আজ যা দেখছি, তা এক বছরের পরিশ্রম আর এক বছরের আন্দোলনের ফল। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিই ভালো খবর। প্রাইমারিতেও এটি আমাদের পক্ষে গিয়েছিল, এবারও সেটি আমাদের পক্ষে যাবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা নতুন মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করছি।’

অপরদিকে, নির্বাচনে নিয়ে কাজ করা স্বাধীন সংস্থা ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ ইতোমধ্যেই মামদানিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কেবল এই সংস্থাটিই এমন ঘোষণা দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ জানাচ্ছে যে, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানিই জিততে যাচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাদ্দাফির পুত্রকে মুক্ত করতে লেবাননে গেল লিবিয়ার প্রতিনিধিদল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৫
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্ত করতে লেবাননের বৈরুতে পৌঁছেছে লিবিয়ার একটি প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি হানিবালের মুক্তির জন্য ১১ মিলিয়ন ডলারের জামিন দাবি করেছিল লেবাননের আদালত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা।

লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পুত্র হানিবাল ২০১৫ সাল থেকে কোনো বিচার ছাড়াই লেবাননের কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লেবাননের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মুসা আল সদরের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য লুকিয়ে রেখেছেন।

মুসা আল সদর ১৯৭৮ সালে গাদ্দাফির আমন্ত্রণে লিবিয়ায় সফরে যান এবং সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। সদর যখন নিখোঁজ হন, হানিবাল তখন মাত্র দুই বছরের শিশু। তাই এই বিষয়ে কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, গত মাসে (অক্টোবর) লেবাননের আদালত হানিবালকে ১১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে হানিবালের আইনজীবীরা তখন দাবি করেন, বিপুল এই অর্থ পরিশোধে তিনি সক্ষম নন। এ ছাড়া আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হানিবালকে মুক্তি দেওয়া হলেও লেবানন ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অতীতে তিনি বন্দী অবস্থায় অনশন ধর্মঘটও পালন করেছিলেন।

এদিকে হানিবালের দেশ লিবিয়ান এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হানিবাল হয়তো লেবানন ও লিবিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে ছাড়পত্র পেতে পারেন।

লিবিয়ার প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইব্রাহিম দবাইবাহ। তিনি ত্রিপোলির জাতীয় একতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবাইবাহর ভাগনে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিবারের সঙ্গে দবাইবাহ পরিবারের একসময় শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।

প্রতিনিধিদলটি লেবাননের প্রেসিডেন্ট সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য ও ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের যোগাযোগ ও রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়ালিদ এল লাফি সরাসরি হানিবালের মামলার উল্লেখ না করে জানান, তাঁরা দুই দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বিচারিক সম্পর্ক আবারও চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং আশা করি এই সফর শিগগির দৃশ্যমান ফলাফল দেবে।’

তিনি জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে লেবাননের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গেছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনসহ দেশটির সংসদের স্পিকার নাবিহ বের্রি এই আলোচনার প্রতি ইতিবাচক মনোভব দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নাবিহ বেররি হলেন ‘আমাল আন্দোলন’ এর নেতা। বহু বছর আগে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ মুসা আল সদরই এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সদরের নিখোঁজ হওয়া এখনো লেবাননে গভীর অনুভূতি জাগায়। সদরের সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী, শেখ মুহাম্মদ ইয়াকুব ও সাংবাদিক আব্বাস বাদরেদ্দিনও নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাই হানিবালের মুক্তির বিষয়ে সব ধরনের সমাধান ও চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে ইয়াকুবের পরিবার।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়া ত্যাগ করেছিলেন হানিবাল। পরে তিনি তাঁর লেবানিজ স্ত্রী আলিন স্কাফ ও সন্তানদের নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি সশস্ত্র গ্রুপ তাঁকে অপহরণ করে লেবানন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকেই তিনি লেবাননের কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মামদানিকে ভোট না দিতে নিউইয়র্কের ইহুদিদের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ইহুদিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন মামদানিকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ট্রাম্পের মতে, মামদানিকে ভোট দেওয়া মানে ‘বোকামি’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি একজন ইহুদিবিদ্বেষী। এটা জেনেও কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি তাকে ভোট দেয়, তাহলে সে স্বঘোষিত ও প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী। সেই সঙ্গে সে একজন বোকা মানুষ!!!’

এর আগে গত রোববার (২ নভেস্বর) মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত