Ajker Patrika

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান কী, এটা আদৌ সম্ভব?

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সূত্র। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, পশ্চিম তীর ও গাজাকে নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশাপাশি সহাবস্থান করবে।

তবে ইসরায়েল এই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, যেকোনো চূড়ান্ত মীমাংসা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে এবং রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কোনো পূর্বশর্ত হতে পারে না।

এদিকে ১৯৯০-এর দশকে শান্তিচুক্তির পর প্রতিষ্ঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে, কিন্তু হামাস এর বিরোধিতা করে। কারণ, তারা ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিরোধী। হামাস জানিয়েছে, যদি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসার অধিকার দেওয়া হয়, তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিয়েও ১৯৬৭ সালের বাস্তবভিত্তিক সীমান্তের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নিতে পারে।

এ সংঘাতের সমাধানের জন্য এর আগেও বিভিন্ন চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি নেতারা অসলো শান্তিচুক্তি নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল শান্তি আলোচনার একটি কাঠামো তৈরি করা। তবে সেই আলোচনা শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় এবং উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করে।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়টি আবারও আলোচনায়। কারণ, আজ ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি৭ রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় কানাডা। এরপর পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় রাষ্ট্রের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে তাদের অংশীদারত্বের প্রস্তাব দিচ্ছে।

কানাডার পর অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এই পদক্ষেপকে কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি ‘দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ’।

সবশেষ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একটি ভিডিওতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি বার্তা দেন। ওই ভিডিওবার্তায় স্টারমার বলেন, ‘ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে চলমান সমস্যা সমাধানের আশা পুনর্ব্যক্ত করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’

খেয়াল করুন, এই তিন দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলেও সমস্যা সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কথা বলেছে। অর্থাৎ এই একটামাত্র উপায় ছাড়া হয়তো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যা সমাধানের কোনো পথ নেই। কিন্তু এই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান কি আদৌ সম্ভব?

অনেকে বলছেন, রাষ্ট্র গঠন বা রাষ্ট্র নিয়ে চলমান সমস্যা সমাধানের আগে জরুরি সংঘাত থামানো। কারণ, ইউরোপ যখন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে, তখনো ইসরায়েলি বোমায় প্রাণ হারাচ্ছে গাজার নিরীহ মানুষ। ফিলিস্তিনি আইনজীবী দিয়ানা ভুট্ট বলেন, রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে হত্যাকাণ্ড বন্ধের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত