Ajker Patrika

কথা-কাজে মিল নেই, কী করবেন ট্রাম্প নিজেও জানেন না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প কি ভারত-পাকিস্তানের মতো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও বিরতি আনতে পারবেন? ছবি: এএফপি
ট্রাম্প কি ভারত-পাকিস্তানের মতো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও বিরতি আনতে পারবেন? ছবি: এএফপি

গত এক সপ্তাহ ধরে ইরান নিয়ে একের পর এক পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কখনো তিনি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন, আবার অন্যদিকে—ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার কথাও বলছেন তিনি।

সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে কি না। প্রেসিডেন্টের এমন অবস্থান পরিবর্তন দেখে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রাম্পের হয়তো সুস্পষ্ট কোনো কৌশল বা লক্ষ্য নেই—বরং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চাপেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কথা ভাবছেন তিনি।

অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্প হয়তো ইরানকে চূড়ান্তভাবে পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগে বাধ্য করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কঠোর ও যুদ্ধোন্মুখ বক্তব্য দিয়ে কূটনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—এ ধরনের দ্বিমুখী চাপে উত্তেজনা এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে তা শেষ পর্যন্ত এক সর্বাত্মক মার্কিন-ইরান যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।

ন্যাশনাল ইরান-ইউএস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি বলছেন, হুমকি-ধমকি দিয়ে ইরানকে আত্মসমর্পণ বাধ্য করতে কেবল একটি কৌশল নিচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, তিনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন, যিনি কখন কী করবেন কেউ জানে না। আর এমন একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি তিনি বহু বছর ধরেই চেয়ে আসছেন, যাতে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে বাধ্য করা যায়। আর নিজের এই চাওয়া পূরণ করতে গিয়েই তিনি নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা দিচ্ছেন। আর সেই ফাঁদ হলো—ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া।’

যুক্তরাষ্ট্রবিষয়ক ইরানি বিশ্লেষক নিগার মোর্তাজাভি মনে করেন, নেতানিয়াহুর কূটচালের কাছে পরাজিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প নিজে কী চান তা তিনি আদৌও জানেন কিনা—তা নিয়ে আমি সন্দিহান। তিনি নির্বাচনের আগে “শান্তির দূত” হিসেবে প্রচার চালিয়েছেন। অঙ্গীকার করেছিলেন যে তিনি বিশ্বজুড়ে সব যুদ্ধ থামাবেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখন কেমন? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। গাজা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। এবং তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি বড় যুদ্ধ ঘটতে দিলেন! খুব নিশ্চিতভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে এটি মূলত সরকার পরিবর্তনের যুদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেন এক, আর করেন আরেক।’

গত সপ্তাহের রোববার পরমাণু ইস্যুতে ষষ্ঠ দফায় আলোচনায় বসার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের। এর ঠিক দুদিন আগেই তেহরানে হামলা চালায় তেলআবিব। হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মচারীদের সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর হামলার পর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বক্তব্য যেন নিজেদের দায় ঢাকার চেষ্টাই ছিল। তারা জানায়, হামলায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে, হামলার ব্যাপারে যে ট্রাম্প বা অন্য মার্কিন কর্মকর্তারা জানতেন তা নিজেই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গত সাত দিনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন এসেছে ট্রাম্পের অবস্থানে। সম্পৃক্ততা নেই বললেও পরবর্তীতে তাঁর বলা বিভিন্ন কথা ও সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ইঙ্গিত ছিল উল্টো। গত মঙ্গলবার তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে লেখেন, ‘ইরানের আকাশের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছি আমরা। ইরানের অনেক ভালো ভালো স্কাই ট্র্যাকার এবং অন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আছে বটে। কিন্তু মার্কিন প্রযুক্তির সঙ্গে সেগুলোর তুলনা চলে না।’

তবে, ওই পোস্টে তিনি ‘আমরা’ বলতে কোন কোন পক্ষকে বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট করেননি। কিন্তু স্পষ্ট না করলেও তিনি যে ইসরায়েল এবং আমেরিকাকে বুঝিয়েছেন তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, পারমাণবিক কেন্দ্র, তেল স্থাপনা, আবাসিক ভবনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। বহু শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন বহু বেসামরিক মানুষও। জবাবে ইরানও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে শক্তিশালী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মোসাদসহ বহু সরকারি ও সামরিক কাঠামোতে হামলা চালিয়েছে ইরান।

নেতানিয়াহু প্রশাসনের দাবি—ইরান ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। খুব শিগগিরই তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে সেই অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। তাই বাধ্য হয়ে ইরানি পরমাণু কর্মসূচি থামাতে এই হামলা চালিয়েছে তারা। তবে, বিশ্লেষক থেকে শুরু করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নিজেও স্বীকার করেছে মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

বিশ্লেষক মোর্তাজাভি বলেন, ‘ইসরায়েল ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে এটা কোনো সরকার পরিবর্তনের যুদ্ধ নয়। মূলত ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধই এর একমাত্র উদ্দেশ্য—যা যুক্তরাষ্ট্রও বহুদিন ধরে চেয়ে আসছে। তবে, ট্রাম্পকে যুদ্ধে টেনে আনতে নেতানিয়াহু যে কৌশল অবলম্বন করছেন তা খুবই উদ্বেগজনক। তারা এই পরিকল্পনাকে একটি সহজ, স্বল্পমেয়াদি সামরিক অভিযানের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করছে—যেন একটি বাংকার-বাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেই কাজ শেষ!’

তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে জড়ালে তা আফগানিস্তান ও ইরাকের সমন্বিত ক্ষয়ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘এই সংঘাত যদি পূর্ণমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এর ফলাফল হবে ভয়াবহ—এটি একযোগে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ-পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইরান একটি বড় ও জটিল দেশ, যেখানে যেকোনো রাজনৈতিক পতন অনিবার্যভাবে বিশৃঙ্খলা, গৃহযুদ্ধ ও মানবিক সংকট ডেকে আনবে। এটি কোনো রঙিন বিপ্লব হবে না—বরং এটি যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা ও দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার শঙ্কা নিয়ে হাজির হবে।’

ইরান ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি দেশটির ওপর সামরিক হামলা চালায়, তবে তারা কঠোর জবাব দেবে। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন থাকা হাজার হাজার মার্কিন সেনা ইরানি প্রতি আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে। সংঘাত আরও বাড়লে ইরান পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুটগুলো বন্ধ করে দিতে পারে, যা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত