Ajker Patrika

বাংলাদেশের অস্থিরতা ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি ও চাকরি সৃষ্টির সুযোগ: কংগ্রেস

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ১৫
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের (বামে) সঙ্গে অল ইন্ডিয়া প্রফেশনাল কংগ্রেসের সভাপতি প্রবীণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের (বামে) সঙ্গে অল ইন্ডিয়া প্রফেশনাল কংগ্রেসের সভাপতি প্রবীণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর এবং কোটি কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করেছে। এমনটাই জানানো হয়েছে অল ইন্ডিয়া প্রফেশনাল কংগ্রেসের (এআইপিসি) এক চিঠিতে। গত ১২ নভেম্বর ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের কাছে লেখা চিঠিতে এআইপিসির সভাপতি প্রবীণ চক্রবর্তী এই পরামর্শ দিয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, প্রবীণ চক্রবর্তী চিঠিতে জানিয়েছেন, কোয়েম্বাটোরে ১২০ জন টেক্সটাইল ও পোশাক প্রস্তুতকারকের সঙ্গে আলোচনা করে তারা এ সুপারিশ করেছেন। চক্রবর্তী জানান, গত ২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রথীন রায় এবং তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের ২০২৫ সালের বাজেটে নীতিগত পরিবর্তন আনার সুপারিশ করে চক্রবর্তী চিঠিতে লিখেছেন, আমেরিকা, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের মতো শীর্ষ পাঁচটি পোশাক আমদানিকারক দেশ সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক ৭০ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক কাপড়ের পোশাক ৩০ শতাংশ কেনে।

প্রবীণ চক্রবর্তী চিঠিতে লেখেন, ‘কিন্তু ভারত বেশি প্রাকৃতিক কাপড় এবং কম সিনথেটিক পোশাক রপ্তানি করে। এর মূল কারণ, সিনথেটিক কাপড়ের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক। এই শুল্ক কাঠামো ভারতের রপ্তানিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ তিনি সিনথেটিক কাপড়ের আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর সুপারিশ করেন।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে কংগ্রেসের এই নেতা টেক্সটাইল ও পোশাক প্রস্তুতকারকদের জন্য রপ্তানিসংশ্লিষ্ট বিশেষ জামানতমুক্ত ঋণ সুবিধার কথা বলেন। এতে দ্রুত রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রবীণ চক্রবর্তী ‘নীতি আয়োগের’ একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, পোশাক রপ্তানিতে প্রতি ১ বিলিয়ন ডলারে ১ লাখ ২৫ হাজার প্রত্যক্ষ এবং ৫ লাখ পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, ‘এর মধ্যে ৭০ শতাংশ কর্মসংস্থান নারীদের জন্য। কিন্তু এটি উদ্বেগজনক যে, গত এক দশকে ভারতের বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানি স্থবির। বিপরীতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম তাদের অংশ দ্বিগুণ করেছে।’

চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে যাওয়ার একটি বিশেষ সুযোগ পেতে পারে।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ভারতের জন্য সহায়ক হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এসব দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে।

চক্রবর্তী বলেন, ‘বর্তমান ১৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার অনন্য সুযোগ রয়েছে। এতে ১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে, যার বেশিরভাগই নারীদের জন্য।’ তিনি দাবি করেন, ‘জাতীয় স্বার্থে এবং রাজনীতি দূরে রেখে এ চিঠি লেখা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুদ্ধবিরতি ভেঙেই চলেছে ইসরায়েল, ৫ ফিলিস্তিনি বন্দী ও ৪৫ মরদেহ ফেরত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও ইসরায়েল এখনো তা লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু
যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও ইসরায়েল এখনো তা লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে। ছবি: আনাদোলু

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরায়েল পাঁচ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। এতে গাজায় পরিবারগুলোর মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ ছাড়া, দখলদার দেশটি ৪৫ ফিলিস্তিনি বন্দীর মরদেহও ফেরত দিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মুক্তি পান ওই পাঁচ ফিলিস্তিনি। পরে তাদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য দেইর আল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে স্বজনেরা জড়ো হন। কেউ কেউ মুক্ত হওয়া বন্দীদের জড়িয়ে ধরেন, কেউ আবার নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের খোঁজে উদ্বিগ্নভাবে ঘুরে বেড়ান।

গাজায় আল–জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি বাহিনী এই প্রথমবার অজানা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিল।’ ইসরায়েলে এখনো হাজারো ফিলিস্তিনি বন্দী আছেন। তাদের অনেকেই অভিযোগ ছাড়াই আটক, যাকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্বেচ্ছাচারী আটক বলে মনে করে।

এর আগে, সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে ইসরায়েল তাদের কাছে আরও ৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হস্তান্তর করেছে। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট ২৭০টি মরদেহ গাজায় ফেরত এসেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ফরেনসিক টিম এখন পর্যন্ত ৭৮টি মরদেহ শনাক্ত করেছে। চিকিৎসা নীতিমালা ও প্রটোকল মেনে পরীক্ষার পর মরদেহগুলো পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হবে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেরত পাওয়া অনেক মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। কারও হাত বাঁধা, চোখ বেঁধে রাখা, মুখ বিকৃত—এমন অবস্থায় মরদেহগুলো পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া মরদেহগুলোর সঙ্গে কোনো শনাক্তকরণ ট্যাগও ছিল না। এই মরদেহ ও বন্দী বিনিময় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের অংশ। ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর এই যুদ্ধবিরতি তুরস্ক, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রও ভূমিকা রেখেছে।

দেইর আল-বালাহ থেকে প্রতিবেদনে খুদারি বলেন, ‘অনেক মরদেহেই নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে।’ তিনি আরও জানান, নিখোঁজ ফিলিস্তিনিদের পরিবারগুলো এখনো মরদেহের ভেতর স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যেসব মরদেহ শনাক্ত করা যাবে না, সেগুলো দেইর আল-বালাহতেই গণকবরে দাফন করা হবে।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েল হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে। নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানায়, সোমবার রাফাহর উত্তরে ইসরায়েলি গোলাগুলিতে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, কিছু ব্যক্তি ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করেছিল, যা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত এলাকা। তারা এটিকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে।

এই ঘটনা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। এ ছাড়া ওই একই ঘটনায় নিহত তিনজন ফিলিস্তিনির কথাই ইসরায়েল বলছে কি না, সেটিও পরিষ্কার নয়। কারণ, গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তিনজন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন শিশু আছে বলে আল-আহলি আরব হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে।

গাজা শহর থেকে আল জাজিরার তারেক আবু আজযুম জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখনো কোয়াডকপ্টার ড্রোন ব্যবহার করে আংশিক ধসে যাওয়া ভবনের ওপর গ্রেনেড ফেলছে। তিনি বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ১২৫টির বেশি লঙ্ঘন করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এই হামলাগুলো অব্যাহত থাকলে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে বরাদ্দ দেবেন না ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি বামপন্থী প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি শহরটিতে ফেডারেল বরাদ্দ দেবেন না।

রোববার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্য বা শহরগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ফেডারেল অনুদান কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, জোহরান মামদানি তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্ক সিটি চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন পাউন্ড) ফেডারেল সহায়তা পেয়েছে। তবে মামদানি জয়ী হলে এই সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

সোমবার এক বক্তব্যে মামদানি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিউইয়র্ক সিটিতে তাঁর প্রতিচ্ছবি তৈরি নয়, বরং বিকল্প তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এমন এক শহর চাই, যা এখানে বসবাসকারী সবার মর্যাদায় বিশ্বাস করে।’

অ্যান্ড্রু কুমো পাল্টা বক্তব্যে বলেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একমাত্র প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়েছি। নিউইয়র্কের জন্য লড়াই করার সময় আমি থামব না।’

কুমো কোভিড-১৯ মহামারির সময় নিউইয়র্কের গভর্নর ছিলেন। তখন বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্য ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। যদিও পরবর্তী সময়ে রাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন রাখার অভিযোগে কুমোও সমালোচনার মুখে পড়েন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশ ইরান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ইরানে ৩০ জন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ছবি: আইএইচআর
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ইরানে ৩০ জন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ছবি: আইএইচআর

মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ইরানে মৃত্যুদণ্ডের উন্মাদনা চলছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে অন্তত ৩১ জন নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে; যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৩০ জন নারীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এসব নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাঁরা তাঁদের স্বামীকে হত্যা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইরানিয়ান মানবাধিকার সংগঠন আব্দর রহমান বোরোমান্ড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রয়া বোরোমান্ড বলেন, কাউকে খুনের জন্য ইরানে কোনো কারাদণ্ডের বিধান নেই। হয় আপনাকে ক্ষমা করা হবে অথবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

কিন্তু ইরানের চেয়েও যেসব দেশে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেখানেও এত বেশিসংখ্যক নারীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না বলে তথ্য দিচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে এসব মৃত্যুদণ্ডের মাত্র ১২ শতাংশ সরকারি সূত্রে প্রকাশ করা হয়।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ।

রয়া বোরোমান্ড বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে পরবর্তী ২২ বছরে কমপক্ষে ২৩৩ জন নারীর মৃত্যুদণ্ডের তথ্য পেয়েছি। তাদের মধ্যে ১০৬ জনকে খুনের দায়ে আর ৯৬ জন অবৈধ মাদকসংক্রান্ত অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’ এর একটি ক্ষুদ্র অংশকে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বোরোমান্ড।

এ ছাড়া দেশটির আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পরিবর্তন করা যায় না। ‘দিয়াহ’ বা রক্তঋণ নিয়ে শুধু নিহতের পরিবার পারে কাউকে ক্ষমা করতে।

সম্প্রতি গোলি কোহকান নামের এক বালিকাবধূর মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে ইরানের এই অন্ধকার দিকটি আবারও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ২৫ বছর বয়সী গোলি কোহকান নামের এই নারী সাত বছর ধরে উত্তর ইরানের গোরগান কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায়। ২০১৮ সালের মে মাসে ১৮ বছর বয়সে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে আদালত তাঁকে ‘কিসাস’ (প্রতিশোধমূলক শাস্তি) আইনে মৃত্যুদণ্ড দেন।

গোলির মতো আরও তিন নারী মৃত্যুদণ্ডের মুখে পড়েছিলেন। সামিরা সাবজিয়ান ফারদ, যাকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পর স্বামীর হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফাতেমা সালবেহি, ২০০৮ সালে ১৭ বছর বয়সে স্বামীর হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন; পরে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। জয়নাব সেকানভান্দ, ২০১২ সালে ১৭ বছর বয়সে স্বামীর হত্যার অভিযোগে আটক হন। আদালতে স্বামীর নির্যাতনের কথা জানালেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত অপেরা হাউস। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত অপেরা হাউস। ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনের তরুণ হেইডেন ফিশার এক বছর আগে চলে যান অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। নিউজিল্যান্ডে প্রতি সপ্তাহে তাঁকে আয়ের অর্ধেকটাই খরচ করতে হতো বাজারে। অস্ট্রেলিয়ায় অবশ্য একই পণ্য তিনি এক-চতুর্থাংশ মূল্য দিয়ে কিনতে পারছেন।

সিডনিতে একটি একটি বইয়ের দোকানে কাজ করা ফিশার বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছি এখন—যেটা ওয়েলিংটনে অসম্ভব মনে হয়েছিল।’

স্ট্যাটস এনজেড-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গত এক বছরে নিউজিল্যান্ডের ৭৩ হাজার ৯০০ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। এই পরিসংখ্যানটি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে দেশ ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের মধ্যে ৫৮ শতাংশই গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ২০২৪ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বাধিক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউজিল্যান্ড এই ‘মেধা পাচার’ এর প্রভাব নিয়ে চিন্তিত হলেও অস্ট্রেলিয়া এতে লাভবান হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাইগ্রেশন হাবের পরিচালক অ্যালান গ্যামলেন বলেন, ‘১৯৭০-এর দশক থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিকে মানুষের প্রবাহ বেড়েছে। নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি দুর্বল এবং বৈশ্বিক ধাক্কায় বেশি প্রভাবিত হয়।’

তিনি জানান, মাথাপিছু জিডিপিতে দুই দেশের পার্থক্যই এই প্রবণতার জন্য দায়ী। অস্ট্রেলিয়ায় যেখানে মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৪ হাজার ৪০০ ডলার, নিউজিল্যান্ডে তা মাত্র ৪৮ হাজার ডলার।

২২ বছর বয়সী জেনিভিভ ফালটন চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গেছেন। আগে ঘণ্টায় তিনি ২২.৭০ নিউজিল্যান্ড ডলার আয় করতেন। এখন তাঁর আয় দ্বিগুণ। এতে তিনি কম সময় কাজ করেও তাঁর পছন্দের ইলাস্ট্রেশনের পেশায় মন দিতে পারছেন। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার প্রেরণাটুকু তিনি তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তাঁর ভাই একজন ওয়েল্ডার। দুই বছর আগে তিনি মেলবোর্নে গিয়ে বোনকে বলেছিলেন, ‘এখানে কাজও বেশি, টাকাও পাগল করা।’

একইভাবে, ঐতিহ্যবাহী সামোয়ান ট্যাটু শিল্পী টাইলা ভায়াউ বলেন, ‘অকল্যান্ড (নিউজিল্যান্ডের শহর) এখন আর আমার বেড়ে ওঠা শহরের মতো নেই। জীবনযাত্রার ব্যয় ও বাড়ির দাম সেখানে এমন পর্যায়ে যে, ফেরার চিন্তা করাও অসম্ভব।’ তিনি এখন পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে স্থায়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের তরুণ অ্যান্ডি ফেকনি জানান, তাঁর সিডনিতে যাওয়া সম্পূর্ণ ক্যারিয়ারভিত্তিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় সুযোগ অনেক বেশি, বিশেষ করে পেশাগতভাবে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, নিউজিল্যান্ড থেকে যারা অস্ট্রেলিয়ায় যান তাঁদের ৮০ শতাংশই অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে বসবাস করেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন ও গোল্ড কোস্টে এক-তৃতীয়াংশের বেশি নিউজিল্যান্ডের প্রবাসীরা থাকেন। এরপরই তাঁদের পছন্দের শহরের মধ্যে রয়েছে মেলবোর্ন ও সিডনি।

গল্পের শুরুতে যার কথা বলা হয়েছিল, সেই হেইডেন ফিশার বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড সুন্দর দেশ ঠিকই। কিন্তু সুন্দর পাহাড় ভাড়া আর বিল পরিশোধ করে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত