Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী অলি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৫৬
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেমি শর্মা অলি। ছবি: এএফপি
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেমি শর্মা অলি। ছবি: এএফপি

সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত কমিউনিস্ট পার্টি নেপালের (সিপিএন-ইউএমএল) চেয়ারম্যান কেপি শর্মা অলি। দেশটিতে জেন-জি আন্দোলনের সময় চাপের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। আগেই তাঁর দল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানায়। এবার তারা প্রশ্ন তুলছে কার্কি সরকারের বৈধতা নিয়েও।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ চালান অলি। গত ৯ সেপ্টেম্বর জেনারেশন-জেডের নেতৃত্বে ২ দিনের বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সেই ক্ষোভ থেকেই কার্কি সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অলি।

অলি ইঙ্গিত দেন, তাঁর দল আসন্ন ৫ মার্চের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে না। কারণ, তা ‘অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’ বরং তাঁর ও অন্যান্য দল, যার মধ্যে নেপালি কংগ্রেসও রয়েছে—গত ১২ সেপ্টেম্বর ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ পুনর্বহালের আন্দোলনে নামবে।

ভক্তপুরের গুণ্ডুতে ইউএমএল জেলা কমিটি আয়োজিত এক সমাবেশে অলি বলেন, ‘আমাদের এখন কোনো বিকল্প নেই। অবিলম্বে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবিতেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অসাংবিধানিকভাবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেশের গতিপথ বিপথে নেওয়া হয়েছে, সেটিকে সঠিক পথে ফেরাতে হবে।’

বালকটের নিজের বাড়ি বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই অলি গুণ্ডুতে অবস্থান করছেন। তবে মজার বিষয় হলো, এর আগেও ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দুবার পার্লামেন্ট ভেঙেছিলেন অলি নিজেই এবং তখন তিনি সেই পদক্ষেপকে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ ক্ষমতা’ বলে সমর্থন করেছিলেন।

কিন্তু এবার তিনি অভিযোগ করেছেন, সুশীলা কার্কি পার্লামেন্ট ভাঙার শর্তেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এবং তাঁর গণতান্ত্রিক যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক চন্দ্র দেব ভট্টের মতে, অলি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ইউএমএল নেতারা জেন-জেড আন্দোলনে সৃষ্ট রাজনৈতিক রূপান্তরের ব্যাপ্তি এখনো উপলব্ধি করতে পারছেন না।

ভট্ট বলেন, ‘নেপালের ৭৫ বছরের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এই পরিবর্তন একেবারেই অনন্য। এমন পরিস্থিতিতে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল নতুন শক্তির সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। কিন্তু ইউএমএল উল্টো উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। দেশের এমন সংবেদনশীল সময়ে বড় দলের নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়।’

উসকানিমূলক ভাষণে অলি দাবি করেন, কার্কির সরকার নেপালিদের ভোটে নির্বাচিত নয়। তিনি বলেন, ‘এই সরকার নেপালিদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছে, আমি জানি না। তারা বিশেষ কোনো অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। রাত ৩টা পর্যন্ত বৈঠক করে তারা অলিকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে, আমার পাসপোর্ট আটকে দিতে চাচ্ছে, যেন আমি উপত্যকা ছাড়তে না পারি। কিন্তু কেপি অলিকে ভয় দেখিয়ে দমানো যাবে না। আমি সুশীলা কার্কির ভয়ে পালাব না।’

তবে বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়া অলি কিংবা অন্য কোনো ইউএমএল নেতা নিজেদের ভুলের দায় স্বীকার করতে প্রস্তুত বলে মনে হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেশব দাহালের মতে, ‘২০১৫ সালের সংবিধান ঘোষণার পর থেকেই অলি নেপালের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। তাই জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার দায়িত্ব তারই। কিন্তু তিনি বরং মানুষকে উসকাচ্ছেন এবং দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’ দাহাল আরও বলেন, অলির উচিত ছিল দেশকে নির্ধারিত সময়ের নির্বাচনের পথে এগিয়ে নেওয়া।

ইউএমএল স্থায়ী কমিটির সদস্য ভানুভক্ত ধাকাল অভিযোগ করেছেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল কখনো নির্বাচনের ভয় পায় না। কিন্তু সরকার যদি সময়মতো নির্বাচন আয়োজনেই আগ্রহী না হয়, তবে আমরা ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আন্দোলনে মনোযোগ দেব।’

একই সুরে কথা বলেছেন নেপালি কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মাহাতো। তিনি আগে অলি সরকারের অংশীদার ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের বর্তমান কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আন্তরিক।’ অলি আরও ঘোষণা দেন, সেপ্টেম্বরের ৮–৯ তারিখের আন্দোলনে প্রাণহানি ও সম্পত্তি ক্ষতির তদন্তে গৌরী বাহাদুর কার্কির নেতৃত্বে গঠিত বিচারিক কমিশনকে তার দল মানবে না।

একই অনুষ্ঠানে অলি বলেন, ওই কমিশন ও এর সমন্বয়কারীর নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, ‘ইউএমএল এবং জনগণ এই কমিশনকে মেনে নেবে না। সরকার এমন এক পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন গঠন করেছে, যাদের অনেকেই আগেই বলেছে—অলিকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা উচিত। এটা আসলে সাজানো নাটক, এবং ইউএমএল তা প্রত্যাখ্যান করছে।’

তাঁর এই মন্তব্য এমন সময় এল, যখন জেন-জেড আন্দোলনের কর্মীরা অলির তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে। তাদের অভিযোগ, গত মাসের বিক্ষোভে অলির নির্দেশেই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিবা মারা গেছি’, স্ত্রীকে বলেছিলেন ইউক্রেনে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল

শাহবাগে গত রাতে ফুটপাত থেকে নারীসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার

নার্সিং হোমে বয়স্ক পুরুষদের ওষুধ খেতে উৎসাহিত করতে মিনি স্কার্ট পরে তরুণীর নাচ

ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়া হবে না, বরং উল্টোটা ঘটবে: ট্রাম্প

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইসরায়েলের দুজন প্রধানমন্ত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত