Ajker Patrika

ভিটামিন ‘ডি’ পেতে রৌদ্রস্নান

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
ভিটামিন ‘ডি’ পেতে রৌদ্রস্নান

মূলত হাড়, দাঁত ও মাংসপেশির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ‘ডি’। ক্যানসার প্রতিরোধ, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মাল্টিপল স্কেলেরোসিসসহ আরও কিছু রোগ প্রতিরোধে এর বেশ ভূমিকা রয়েছে।

ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সাহায্য করে। এ ছাড়া এই ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রধান উৎস সূর্যালোক
ভিটামিন ‘ডি’র প্রধান উৎস সূর্যের আলো। রৌদ্রস্নান তাই খুব দরকারি। এ ছাড়া কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও দুধজাত খাদ্য, সামুদ্রিক মাছের তেল, সামুদ্রিক মাছ, কিছু মাশরুম, কমলার শরবত, সাপ্লিমেন্টারি ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
সূর্যরশ্মির পরশ দেহে লাগলে ত্বকের নিচে তৈরি হয় ভিটামিন ‘ডি’র প্রাথমিক যৌগ। সাধারণত ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ভিটামিন ডি তৈরি হয় সূর্যালোক থেকে। 

সূর্যস্নান করুন সরাসরি
ভিটামিন ‘ডি’ কাচ ভেদ করে দেহে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে কাচের জানালা গলে নেমে আসা সূর্যরশ্মিতে স্নান করে লাভ নেই। আবার সূর্যস্নানের জন্য সমুদ্রসৈকতেও শুয়ে থাকার দরকার নেই। দরকার শুধু পর্যাপ্ত সূর্যালোক সরাসরি দেহে লাগানোর ব্যবস্থা করা। তবে পাহাড়ের চূড়ায় ভিটামিন ‘ডি’ বেশি থাকে বলে জানা গেছে।

গ্রীষ্মের রোদ বেশি ভালো
গ্রীষ্মের রোদ যতটা ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করে, শীতের রোদ ততটা পারে না। সে জন্য গ্রীষ্মের রোদে ১৫ মিনিট থেকে ঘণ্টা দুয়েক হিসাবে সপ্তাহে দুই দিন দেহে রোদ লাগালে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ‘ডি’ মিলবে। রোদে যেতে 
হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে। তবে ঠিক কত সময় এই ত্বকের কারখানায় ভিটামিন তৈরি হবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির অবস্থান, ঋতুভেদ, দিনের কোন অংশের আলো, আকাশের অবস্থা, বায়ুদূষণ, ত্বকের তারতম্যসহ অনেক কিছুর ওপর।

দরকার নির্মল পরিবেশ
দূষিত বায়ু ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে পারে না। বায়ুদূষণের কারণে অতিবেগুনি রশ্মি-বি বায়ুতে শোষিত হয়। যেসব জায়গায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি, সেখানকার মানুষের ত্বক ভিটামিন তৈরিতে বাধা পায়। তাই বসবাসের পরিবেশ যেন দূষিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

সবাই করুন রৌদ্রস্নান
যাঁরা বিভিন্ন কারণে বাইরে বের হন কম কিংবা বেরোলেও পোশাকে সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখেন, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বাইরে বেরোতে যাঁরা নিয়মিত সান-ব্লক ক্রিম ব্যবহার করেন, কালো চামড়া যাঁদের প্রকৃতিপ্রদত্ত, যাঁরা মুটিয়ে বা বুড়িয়ে গেছেন কিংবা সূর্যালোক পরিহার করে চলেন, তাঁদেরও এ ভিটামিন ঘাটতির আশঙ্কা বেশি।

সব বয়সের মানুষকে রোদে আসতে হবে ভিটামিন ‘ডি’ পেতে। তবে সত্তরোর্ধ্ব বয়সী ভাঁজ পড়া ত্বক অনেক সময় লাগায় ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে। সে জন্য বয়স্ক মানুষকে ভিটামিন ‘ডি’র জন্য খানিকটা বেশিক্ষণ রাখতে হবে সূর্যস্নানে। আর তাঁদেরই বেশি দরকার এই ভিটামিন।

সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন ও হরমোন বিশেষজ্ঞ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৯৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৯৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ রোববার (৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৫, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৭৮, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২২০, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১৫, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৪, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৯, রাজশাহী বিভাগে ১১৩ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৯৩ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৫ বছরের ছেলে শিশু রয়েছে। এ ছাড়া তিনজন নারী ও বাকি দুজন পুরুষ। তাদের বয়স যথাক্রমে ৬৫, ৩২, ৭০, ৪৮ ও ৪০ বছর।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯, সেপ্টেম্বরে ৭৬ ও অক্টোবরে ৮০ জন মারা গেছে। মার্চে কারও মৃত্যু হয়নি। আর নভেম্বরে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

মো. ইকবাল হোসেন
যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

ডায়াবেটিস রোগের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ডায়েট বা খাবার ব্যবস্থাপনা। এটি একটি লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাই এই রোগ হলে লাইফস্টাইলে নানা পরিবর্তন আনতে হয় সুস্থ থাকতে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবস্থাপনা এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে সুস্থ থাকা যায় ডায়াবেটিস থেকে।

ডায়াবেটিস ভালো হয় না—বিষয়টি রোগীদের বেশি চিন্তিত করে তোলে। এই দুশ্চিন্তা থেকে রোগীরা অনেক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন না। সেই সঙ্গে রোগীরা খাওয়া নিয়েও অনেক ভুল ধারণা পোষণ করেন।

কিটো ডায়েটে ডায়াবেটিস ভালো হয়

কথাটি বহুল প্রচলিত। বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিটো ডায়েটে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করেন; কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর পেরে ওঠেন না। কিটো ডায়েটে রক্তের সুগার বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু একটা লম্বা সময় কিটো ডায়েট করলে আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ফলে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিটো ডায়েটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। তাই এসব বিষয়ে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর সচেতন থাকতে হবে।

কিটো ডায়েটে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তার মানে এই নয় যে আপনার ডায়াবেটিস সেরে যাবে। আপনি যখন কিটো ডায়েট ছেড়ে আবার স্বাভাবিক ডায়েটে আসবেন, তখন আপনার রক্তের সুগার আবারও বেড়ে যাবে।

মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয়

এই তথ্যও একেবারে সঠিক নয়। আপনার ডায়াবেটিস যদি হয়, তাহলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলে খাওয়া যেতে পারে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিমিতভাবে। তবে অতিরিক্ত যদি খান, তাহলে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তি মিষ্টিজাতীয় তৈরি খাবার প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম খেতে পারেন।

ডাল ও বীজজাতীয় খাবার নয়

অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের ডাল ও বিভিন্ন বীজজাতীয় খাবার নিষেধ। এটিও ভুল তথ্য। ডাল এবং বীজজাতীয় খাবার অবশ্যই পরিমিত খাওয়া যাবে। শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত যেকোনো খাবার ক্ষতিকর। তবে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনির সমস্যা থাকলে ডাল ও বীজজাতীয় খাবার বন্ধ থাকবে।

মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে হয়

বহুল প্রচলিত বাণী এটি। মাঝেমধ্যে মিষ্টি না খেলে ডায়াবেটিস নীল হয়ে যায়—এটা ভুল তথ্য। এতে ডায়াবেটিস বেড়ে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। তবে রক্তের সুগার (হাইপোগ্লাইসিমিয়া) স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কিছুটা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে হয়। তবে রুটিনমাফিক খাবার খেলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার শঙ্কা খুব কম।

হাইপোগ্লাইসিমিয়া হলে, তখন ৩ চা-চামচ চিনি অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে।

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশু বুকের দুধ খেতে পারবে না

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলেও তিনি শিশুকে নিশ্চিন্তে বুকের দুধ পান করাতে পারেন। বরং বুকের দুধ পান না করালেই শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে। তার সঠিক বৃদ্ধি হবে না। জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুর সব পুষ্টির চাহিদা শুধু মায়ের বুকের দুধ থেকে পূরণ হয়। অন্য কোনো উপায়ে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।

ভুল ধারণা

ডায়াবেটিস সেরে যায়

ডায়াবেটিস রোগ কখনো সেরে যায় না। এই রোগীদের এ ধরনের দুর্বলতার সুযোগ অনেক অসাধু ব্যক্তি নিয়ে থাকে। ‘ডায়াবেটিস ভালো হয়’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়। এতে রোগীরা আকৃষ্ট হন। সেসব জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পর ডায়াবেটিস তো ভালো হয়ই না; উল্টো রোগীদের ডায়াবেটিসের অন্যান্য জটিলতা আও বেড়ে যায়।

অনেকে বলেন, হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি চিকিৎসায় ডায়াবেটিস ভালো হয়। এগুলোও ভুল তথ্য। ডায়াবেটিস ভালো করার কোনো ফর্মুলা যদি আবিষ্কৃত হয়, তাহলে সে খবর সবার আগে দেশের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও ডায়াবেটিস হাসপাতালগুলো জানবে। তাই এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে নিজের স্বাস্থ্য আর কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট করবেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক
লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার বা যকৃৎ। একবার সমস্যা হলে তা আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। এর প্রধান কাজ হলো শরীরে দ্রুত এনার্জি পাওয়ার জন্য গ্লুকোজ স্টোর করে রাখা। এটি বাইল নামের একধরনের তরল তৈরি করে, যা খাবার থেকে চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। শুধু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই লিভার সুস্থ রাখতে পারে।

আগেই লিভারের যত্ন

লিভার নষ্ট হওয়ার খুব সাধারণ একটি কারণ হলো অতিরিক্ত মদ্যপান। এটি লিভার ড্যামেজ, ফ্যাটি লিভার এমনকি লিভার ক্যানসার তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার কারণেও লিভার কর্মক্ষমতা হারায়।

লিভারের ক্ষতির আর একটি কারণ হচ্ছে ধূমপান। সিগারেটের উপাদানগুলো সরাসরি লিভারের ওপর প্রভাব ফেলে এর কোষ নষ্ট করে। তা ছাড়া লিভারের স্বাভাবিক কাজেও বাধা সৃষ্টি করে।

নিয়মিত কম ঘুমানো লিভারের ক্ষতি করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। যাঁরা রাতে ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগের পাশাপাশি লিভারসংক্রান্ত সমস্যায়ও ভোগেন। পুষ্টিকর খাবারের অভাব কিংবা খাবারে অনিয়ম লিভারের ক্ষতি করে থাকে। সকালে না খাওয়া, খারাপ তেল বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, পোড়া তেলের খাবার বেশি খাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড খাওয়ার কারণে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

কেমিক্যালসমৃদ্ধ যেকোনো খাবারই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। আমরা অনেকে প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল ফুড কালার, আর্টিফিশিয়াল চিনি যুক্ত খাবার পছন্দ করি। এগুলো লিভারের জন্য সুফল বয়ে আনে না। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, প্যারাসাইট, ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিকতা, বংশগত কারণ কিংবা ক্যানসারের কারণেও লিভার নষ্ট হতে পারে।

লিভারের যত রোগ

লিভার নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর কিছু রোগ আছে বংশগত, কিছু আমাদের অর্জিত, কিছু স্বল্পস্থায়ী এবং কিছু দীর্ঘস্থায়ী। লিভারের কয়েকটি সাধারণ সমস্যা হলো, জন্ডিস, পিত্তে পাথর, হেপাটাইটিস সি, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, উইলসন্স।

করণীয়

আপনি যদি স্থূল হন, অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে আপনার ওজন বেশি হয়, তাহলে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। লিভার ফ্যাট কমিয়ে সুস্থ থাকতে ওজন কমাতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস লিভারকে সুস্থ রাখে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, যেমন সাদা পাউরুটি, পাস্তা এবং চিনি এড়িয়ে চলতে হবে। কাঁচা ও আধা সেদ্ধ মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে। প্রতিদিনকার খাবারে তাজা ফল, শাকসবজি, লাল চাল এবং সিরিয়াল রাখতে পারেন। তা ছাড়া রসুন, জাম্বুরা, গাজর, গ্রিন টি, অ্যাভোকাডো, আপেল, অলিভ অয়েল, লেবু, বাঁধাকপি ও হলুদ লিভারের জন্য বেশ উপকারী। লিভার ও কিডনি—দুটোই সুস্থ রাখার জন্য পানির ভারসাম্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম লিভার সুস্থ রাখার বড় ওষুধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানসিক চাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে শিল্পকর্ম

ফিচার ডেস্ক
মানসিক চাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে শিল্পকর্ম

শুধু চোখের আরাম নয়, শিল্পকর্ম মনকেও প্রফুল্ল করে। এ বিষয়ে লন্ডনে নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আর্ট গ্যালারিতে ঘুরে বেড়ালে মানসিক চাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমতে পারে। এমনকি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও বাড়ে।

ভাবুন তো, নিস্তব্ধ গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে ভ্যান গঘ বা গগ্যাঁর কোনো বিখ্যাত ছবি। হালকা আলো ও শান্ত পরিবেশে ক্যানভাসের রংগুলো ধীরে ধীরে আপনাকে যেন টেনে নিচ্ছে। এই অভিজ্ঞতা যে শুধু মনকে শান্ত করে, তা নয়; একই সঙ্গে আপনার শরীরও প্রতিক্রিয়া জানায়।

গবেষণায় কী দেখা গেল

কিংস কলেজ লন্ডনের নেতৃত্বে হওয়া এই গবেষণায় অংশ নেন যুক্তরাজ্যের ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী। দুই দলে ভাগ করে তাঁদের অর্ধেককে লন্ডনের কোর্টল্ড গ্যালারিতে আসল চিত্রকর্ম দেখানো হয়। বাকি অর্ধেক গ্যালারির বাইরের সাধারণ পরিবেশে একই ছবি দেখেন কাগজে, ছাপা আকারে। সবাইকে সেন্সর পরিয়ে হার্ট রেট, ত্বকের তাপমাত্রা, এমনকি লালার নমুনা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের শরীর ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, তা জানার জন্য এত আয়োজন করা হয়।

ফলাফলে দেখা গেছে, গ্যালারিতে শিল্পীদের আসল শিল্পকর্ম দেখা গ্রুপের স্ট্রেস হরমোন গড়ে কমেছে ২২ শতাংশ। অন্যদিকে যারা বাইরের পরিবেশে কপি চিত্রকর্ম দেখেছে, তাদের সেই হরমোন কমেছে মাত্র ৮ শতাংশ।

এই গবেষণা প্রমাণ করে, শিল্পকর্ম শুধু মন প্রফুল্ল করে না, এটি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও কাজে দেয়।

শিল্প কীভাবে কাজ করে

শিল্পকর্ম একই সঙ্গে তিনটি সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। সেগুলো হলো ইমিউন সিস্টেম, এন্ডোক্রাইন সিস্টেম এবং অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম। গ্যালারিতে যারা আসল ছবি দেখেছে, তাদের শরীরে কয়েকটা হালকা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ত্বকের তাপমাত্রা সামান্য কমেছে, হৃৎস্পন্দন একটু বেড়েছে বা কমেছে। সহজভাবে বলতে গেলে, আসল শিল্পকর্ম স্বেচ্ছাসেবীদের শরীর সতেজ করে তুলেছিল।

গবেষক ড. টনি উডস বলেন, ‘আমরা জানতাম, শিল্প মানুষের আবেগকে নাড়া দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে স্ট্রেস কমিয়ে তিনটি সিস্টেমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা সত্যিই বিস্ময়কর।’

শিল্প সবার জন্য

গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সবার সংবেদনশীলতার ধরন ছিল আলাদা। কিন্তু তাতে ফলাফলে তেমন কোনো পার্থক্য হয়নি। অর্থাৎ আপনি খুব আবেগপ্রবণ হোন কিংবা না হোন, শিল্পকর্ম দেখার উপকার সবাই একইভাবে পেতে পারেন। আর্ট ফান্ডের পরিচালক জেনি ওয়াল্ডম্যান বলেন, ‘আমরা সব সময় বিশ্বাস করতাম যে শিল্প মানুষের জন্য। এবার তা বিজ্ঞানের ভাষাতেও আবার প্রমাণিত হলো।’

জেনি ওয়াল্ডম্যানের মতে, যেহেতু এই উপকারগুলো কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষে সীমাবদ্ধ নয়, তাই সবাইকে নিয়মিত নিকটস্থ জাদুঘর বা গ্যালারিতে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত।

দিনে দিনে ব্যস্ততা, চাপ, ক্লান্তি—এসব নীরবে আমাদের প্রায় সবার শরীরের ক্ষতি করে চলেছে। অথচ কখনো কখনো একটু সময় বের করে কোনো আর্ট গ্যালারিতে ঢুঁ মেরে এলে তা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত