Ajker Patrika

স্নায়ুরোগ পারকিনসনিজম

ডা. মোস্তফা কামাল চৌধুরী আদিল
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ০৮: ৩০
স্নায়ুরোগ পারকিনসনিজম

পারকিনসনিজম একটি ধারাবাহিক ও দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অবস্থা, যা মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন উৎপন্নকারী কোষগুলোর ক্ষতির কারণে সংঘটিত হয়। এই রোগের কারণ এখন পর্যন্ত অজানা থাকলেও গবেষণায় দেখা যায়, পারিপার্শ্বিক এবং জিনগত কিছু বিষয়ের প্রভাবে এই রোগ হতে পারে।

লক্ষণ

  • শারীরিক অসারতা ও দুর্বলতা
  • হাত কাঁপা, অস্বাভাবিক বা অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া হওয়া
  •  হাঁটাচলার মন্থরতা বা জড়তা, ভারসাম্য রক্ষায় অপারদর্শিতা
  • ঝিমুনি ভাব ও ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি
  • কাজে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব
  • শরীরের জয়েন্টগুলো ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যাওয়া ও অক্ষমতা তৈরি
  • দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও মনোযোগে সমস্যা
  • হতাশা ও বিষাদগ্রস্ততা
  • বিভ্রান্তি ও স্মৃতিশক্তি বিলোপ।

রোগ নির্ণয়

চিকিৎসকেরা রোগের ইতিহাস শুনে ও শারীরিক পরীক্ষা করে এ রোগ নির্ণয় করেন, আলাদা কোনো পরীক্ষা নেই। তাই এসব লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

চিকিৎসা

পারকিনসনিজম রোগের চিকিৎসা মূলত তিন রকম হতে পারে—পরামর্শ, ওষুধ ও ব্যায়াম। নিরাময় অযোগ্য এই রোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়। ওষুধের কার্যকারিতা কমে গেলে জটিলতা হ্রাস ও জীবনমান উন্নত করার জন্য ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশনের (ডিবিএস) সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

জীবনযাত্রা

  • ওষুধ সেবনের পাশাপাশি জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা জরুরি
  • নিয়মিত পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, ফলমূল থাকতে হবে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোধের জন্য আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান জরুরি
  • নিয়মিত ব্যায়াম পারকিনসনিজমের রোগীকে ভালো রাখে
  • হাঁটার সময় সচেতন হতে হবে। যাতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত না হন
  • হাঁটার সময় কোনো কিছু বহন করা যাবে না। তাড়াহুড়ো করা যাবে না, কেউ ডাকলে ধীরে ধীরে ইউ-টার্ন নিতে হবে
  • পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং মস্তিষ্ককে যতটা সম্ভব ক্রিয়াশীল রাখতে হবে। 

পারকিনসনিজম ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার

সময়ের সঙ্গে পারকিনসনিজমে আক্রান্ত রোগীর অনেকেরই ক্রমেই স্বাভাবিক কাজ করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেন। পোশাক পরিবর্তন থেকে বাথরুমে যাওয়া—সবকিছুর জন্যই অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাঁরা। পারকিনসনিজমের শেষ পর্যায়ে লক্ষণগুলো আর চিকিৎসায় ভালো সাড়া দেয় না। এ অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনযাপন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে প্যালিয়েটিভ কেয়ার। যেমন:

  • উপসর্গ নিয়ন্ত্রণসহ জীবনের মান উন্নয়নের দিকে দৃষ্টিপাত
  • মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া
  • রোগী, পরিবার, তত্ত্বাবধায়ক এবং স্বাস্থ্যসেবা দলের মধ্যে খোলামেলা ও সংবেদনশীল যোগাযোগ বজায় রাখা
  • রোগী ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত পছন্দগুলো সম্মান করা এবং পরবর্তী যত্ন পরিকল্পনা করা। উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসার বিকল্প ও শেষ দিনগুলো কোথায় কাটাবে, তা নির্ধারণ করা
  • প্যালিয়েটিভ কেয়ারের জন্য বিএসএমএমইউর প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে যোগাযোগ করুন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত