Ajker Patrika

হৃদ্‌রোগের পর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ব্যায়াম

ডা. এম শরীফুল আলম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

হৃদ্‌রোগের পর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হলো ব্যায়াম। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শুধু শক্তি এবং উদ্যমই বাড়ায় না, বরং হৃদ্‌রোগে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।

তবে অনেক রোগী হার্ট অ্যাটাক কিংবা অন্যান্য হৃদ্‌রোগের পর ব্যায়াম শুরু করতে ভয় পান অথবা দ্বিধায় ভোগেন। কোথা থেকে শুরু করবেন, কিংবা সে সময় ব্যায়াম কতটা নিরাপদ—

এসব ভাবনা থেকেই সাধারণত এই ভয় কাজ করে। আসলে ভয়ের কিছু নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যায়াম শুরু করলে কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকছে না।

কার্ডিয়াক পুনর্বাসনের ভূমিকা

কার্ডিয়াক রিহ্যাব হলো একটি বিশেষায়িত প্রোগ্রাম, যা আপনাকে নিরাপদে শারীরিক কার্যকলাপ শুরু করতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে সহায়তা করবে।

রিহ্যাব টিমে সাধারণত থাকেন

  • কার্ডিওলজিস্ট
  • ফিজিয়াট্রিস্ট
  • ফিজিওথেরাপিস্ট
  • ডায়েটিশিয়ান
  • সাইকোলজিস্ট

বিশেষজ্ঞ এসব চিকিৎসক একসঙ্গে কাজ করে আপনাকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। যদি আপনার এলাকায় রিহ্যাব সেন্টার না থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে বসেই নিরাপদে প্রোগ্রাম অনুসরণ করতে পারেন।

হাঁটাহাঁটি দিয়ে শুরু করুন

অনেকের জন্য হাঁটা সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম। শুরুতে ছোট পরিসরেই হাঁটুন; যেমন হলওয়ে, বাসার আঙিনা কিংবা নিকটবর্তী রাস্তা। ধীরে ধীরে সময় ও দূরত্ব বাড়িয়ে দিন।

হাঁটার পরিকল্পনা করবেন যেভাবে

  • সপ্তাহ ১: প্রতি দ্বিতীয় দিন, ১০ মিনিট সহজ হাঁটা।
  • সপ্তাহ ২: ৫ মিনিট ওয়ার্মআপের সঙ্গে ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটা এবং ৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া।
  • সপ্তাহ ৩: সপ্তাহে ৪ দিন, ১৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা।
  • সপ্তাহ ৪: সপ্তাহে ৪ দিন, ২০ মিনিট দ্রুত হাঁটা।
  • সপ্তাহ ৫ ও ৬: সপ্তাহে ৫ দিন, ২৫ থেকে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সামান্য উঁচু পথে হাঁটার চেষ্টা করা।
  • প্রতিবার ব্যায়ামের আগে ৫ থেকে ১০ মিনিট ওয়ার্মআপ ও শেষে স্ট্রেচিং করুন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এফআইটিটি নীতি, সঠিক ব্যায়ামের নিয়ম

আপনার ব্যায়াম কার্যকর ও নিরাপদ রাখতে এফআইটিটি নীতি অনুসরণ করুন।

এফ অর্থ ফ্রিকোয়েন্সি: সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন ব্যায়াম করা দরকার।

আই অর্থ ইনটেনসিটি বা তীব্রতা: হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ে; যতটুকু পরিশ্রম করলে শ্বাস দ্রুত হবে, তবে কথোপকথন চালানো সম্ভব হবে।

টি অর্থ টাইম বা সময়: প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন।

টি অর্থ টাইপ বা ধরন: প্রফেশনাল ট্রেনারের মাধ্যমে আপনি ব্যায়ামের ধরন নির্দিষ্ট করে নিন। ব্যায়ামের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে আছে অ্যারোবিক। এর মধ্যে রয়েছে হাঁটা, সাইক্লিং ও সাঁতার। এগুলো আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস এবং হৃদ্‌স্পন্দন বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এর ফলে আপনার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং রক্তসংবহনতন্ত্র কর্মক্ষম হবে। এ ছাড়া আছে স্ট্রেচিং বা নমনীয়তার ব্যায়াম। এগুলো পেশি শিথিল রেখে আপনার জয়েন্টগুলোকে সচল রাখবে।

ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি লাগা, শ্বাস দ্রুত হওয়া কিন্তু শ্বাসকষ্ট নয়, ঘাম ও শরীর শিথিল লাগা স্বাভাবিক অনুভূতি। কিন্তু ব্যায়ামের সময় কিছু উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যায়াম বন্ধ করে দিতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যেমন—

  • বুকে ব্যথা বা চাপ (এনজাইনা)
  • মাথা ঘোরা বা বমি ভাব
  • তীব্র শ্বাসকষ্ট
  • অতিরিক্ত দ্রুত হৃদ্‌স্পন্দন
  • ঠান্ডা ও আঠালো ঘাম

হৃদ্‌রোগের পর ব্যায়াম শুরু করা আপনার কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং ধাপে ধাপে ব্যায়ামের অগ্রগতি আপনাকে সুস্থ ও সক্রিয় জীবন ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে বিশেষভাবে।

সতর্কতা

হৃদ্‌রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই নতুন ব্যায়াম শুরু করবেন না।

ডা. এম শরীফুল আলম, কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

চেম্বার: আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-০৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত