Ajker Patrika

মালিকানা বিবাদে সড়কে ঝুঁকি

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ১৩ মে ২০২২, ১৫: ২৯
মালিকানা বিবাদে সড়কে ঝুঁকি

বগুড়া সদরের মাটিডালি-পীরগাছা সড়ক। পশ্চিমে শিবগঞ্জ ও পুবে গাবতলী উপজেলাকে সদরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। প্রায় ৯ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের পাশে প্রায় ৫ হাজার গাছ রয়েছে। সড়ক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অন্তত ২০০টি। এর মধ্যে ৮১টি গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে এসব গাছ ভেঙে পড়তে পারে। ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা। তা সত্ত্বেও মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদ, বন বিভাগ ও একটি বেসরকারি সংস্থার মধ্যে ‘বিবাদ’ চলায় গাছগুলো কাটা হচ্ছে না।

সড়কটিতে প্রধানত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। পাশাপাশি হিউম্যান হলার, বাস, ট্রাক ও ট্যাংকলরি চলাচল করে। এ ছাড়া বগুড়া-রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে সংস্কার বা দুর্ঘটনাজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে বাস ও ট্রাকের চালকেরা এ সড়ক ব্যবহার করেন। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়কটিতে ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে পিচ ঢালাই করা হয়। এরপর ২০০৪-০৫ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংস্কার করা হয়। ২০২০ সালে আবার সংস্কার ও প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেয় এলজিইডি। আগের ১২ ফুট চওড়া সড়কটি ১৮ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করে গত বছরের মাঝামাঝিতে পিচ করা শেষ হয়।

দেখা গেছে, ১২৬টি গাছ সড়কের শোল্ডারের অংশে দাঁড়িয়ে আছে। পিচ করা অংশে রয়েছে ১৪টি। শেখেরকোলা সেতু ও শেখেরকোলা মোড়ের ওপর সড়ক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি গাছ। হামিদ আলী মোড়ে সড়কের কয়েক ইঞ্চি ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে একটি গাছ। শেখেরকোলা থেকে মাটিডালি পর্যন্ত আরও পাঁচটি এবং যোগাইপুর থেকে পীরগাছা অংশের অন্তত সাতটি গাছ সড়ক ঘেঁষে রয়েছে। পীরগাছা মোড়ে পার্শ্ব সড়কের মাঝ বরাবর রয়েছে বড় একটি আমগাছ। পুরো সড়কে অন্তত ৮১টি গাছ মরে শুকিয়ে আছে। ভেপসি সেতু এলাকায় সড়কের পশ্চিম পাশে হেলে আছে তিনটি গাছ। 
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এ সড়কে ট্রাক ও গাছকে পাশ কাটাতে গিয়ে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারান দুই তরুণ। 
এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সড়কের মালিক জেলা পরিষদ। কিন্তু জেলা পরিষদ গাছগুলো কাটতে পারছে না। কারণ, এই গাছের মালিকানা দাবি করছে বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস। সংস্থাটির দাবি, ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে সম্প্রসারিত সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় বন বিভাগ, টিএমএসএস, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে, বন বিভাগের রোপণ করা গাছের চারা পরিচর্যার জন্য স্থানীয় একটি উপকারভোগী শ্রেণি তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয় টিএমএসএসকে। বিনিময়ে গাছ কাটার পর মূল্যের ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পাবে উপকারভোগী শ্রেণি, ১০ ভাগ এনজিও, ১০ ভাগ ভূমি মালিক এবং ১০ ভাগ রাখা হবে আবার গাছের চারা রোপণের জন্য।

মাটিডালি-পীরগাছা সড়কের পল্লীমঙ্গল হাটে দোকানপাটের ওপর প্রায় সাত মাস ধরে মরে শুকিয়ে আছে একটি মেহগনিগাছচুক্তি অনুযায়ী, ২০০৯ সালে গাছ কাটার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। কিন্তু এতে বাধা দেয় জেলা পরিষদ। তাদের অভিযোগ, গাছের চারা রোপণের ওই চুক্তিতে তাদের নেওয়া হয়নি এবং গাছের মালিকানা দাবি করে টিএমএসএস যে নথিপত্র দাখিল করেছে, তাতে গরমিল আছে। এরপর তিন দপ্তরে চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক হয়। কিন্তু এক যুগেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এর মধ্যে গাছ না কেটেই ২০২০-২১ অর্থবছরে সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়। 
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়া গাছ সরিয়ে ফেলা এবং সংস্কারের প্রয়োজনে গাছ কাটার এখতিয়ার আছে ভূমি মালিকের। তা সত্ত্বেও কাটা হচ্ছে না বিপজ্জনক গাছগুলো।

জানতে চাইলে টিএমএসএসের বন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। চুক্তি অনুসারে, সরকারি বিধি মোতাবেক যথাসময়ে গাছ কাটা হবে। এ নিয়ে কোনো বিবাদ নেই।’

জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল মমিন বলেন, ‘জায়গা জেলা পরিষদের। গাছও জেলা পরিষদের। তবু বন বিভাগের অনুরোধে আমরা গাছের হিস্যা বেসরকারি সংস্থাকে দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু একই সঙ্গে দুই পক্ষ গাছের মালিকানা দাবি করায় কোন পক্ষ সঠিক, তা যাচাই করার জন্য বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। বন বিভাগ একটি কমিটি করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের ওপর গাছ কাটার বিষয়টি নির্ভর করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে গাছ কাটার প্রয়োজন পড়লে এলজিইডি আমাদের চিঠি দিয়ে থাকে। কিন্তু এ সড়কের ক্ষেত্রে এলজিইডি আমাদের চিঠি দেয়নি। তাই গাছ কাটিনি।’ লজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘গাছ নিয়ে বিবাদ চলছে বলেই মূলত গাছ কাটার ব্যাপারে আমরা কিছু বলিনি।’ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল বলেন, বিষয়টি অমীমাংসিত। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।তবে জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি বন বিভাগ। বিষয়টি জেলা প্রশাসনে উত্থাপিত হলে আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত