Ajker Patrika

র‍্যাগিং–একটা অসুস্থ ভাবনা

সম্পাদকীয়
র‍্যাগিং–একটা অসুস্থ ভাবনা

র‍্যাগিং বিষয়টি নিছক হাসি-ঠাট্টার ব্যাপার নয়। সেনাদল বা ক্রীড়াঙ্গনে নতুন মানুষদের বরণ করে নেওয়ার সময় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করার ব্যাপার হয়েও তা নেই। র‍্যাগিং হয়ে উঠেছে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিকৃত আদেশ মানার জন্য জুনিয়র বা সদ্য যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার ঘটনা। এই তথাকথিত আমোদের সীমা বাড়তে বাড়তে কখনো তা নৃশংস হয়ে উঠেছে।

এ ব্যাপারে সবচেয়ে তাজা খবরটি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ‘জ্যেষ্ঠ’ শিক্ষার্থীর দখলে। কী তাঁদের মহিমা! মধ্যরাতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের একাংশকে ডেকে নিয়ে যা-ইচ্ছে-তাই করার বাসনা হয়েছিল তাঁদের। খবর পেয়ে প্রক্টোরিয়াল টিমের দুজন সদস্য সেখানে উপস্থিত হলে এই বীরপুঙ্গবেরা সরে পড়েন। তবে একজন ধরা পড়ায় বদমাইশির সঙ্গে জড়িত অন্যদের নামগুলোও সামনে এসেছে। ১১ জন শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে।

র‍্যাগিং কী, কোথায় এর উৎপত্তি, এতে কী কী ধরনের উদ্ভট ঘটনা ঘটানো হয় ইত্যাদি নিয়ে বিশদ আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মনে রাখলেই হবে, এই বিকৃত ঘটনাটি শুধু আমাদের দেশের শিক্ষালয়গুলোতেই ঘটে না। পৃথিবীর বহু দেশের, বহু বিদ্যায়তনেই তা ঘটে। কোথাও ঘটনাটিকে একটি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু তারপরও নানাভাবে তা টিকে আছে। কোথাও কোথাও এই অপতৎপরতা কমেছে বটে, কিন্তু একেবারে নির্মূল হয়ে যায়নি।

নবীন শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা ছাড়া আর কোনো উপকার র‍্যাগিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় না। শারীরিক এবং মানসিক এই পীড়া কারও কারও জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ছায়া ফেলে।

কেন র‍্যাগিং বছরের পর বছর টিকে থাকে, তা নিয়েও গবেষকেরা ভেবেছেন। সাধারণ কিছু মানসিকতার কথা এখানে বলে রাখা যায়। এক হতে পারে প্রতিশোধস্পৃহা। এ বছর যাঁরা র‍্যাগিং নামক অপমানের সামনে পড়েছেন, তাঁরা ঠিক করে রাখেন এর প্রতিশোধ নেবেন পরবর্তী সময়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একইভাবে অপমান করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, র‍্যাগিং বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের অবশ্যপালনীয় একটি অংশ। জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মনে করেন, নবীন শিক্ষার্থীদের কারও যেন ডানা না গজায়, তা নিশ্চিত করার জন্যই শুরুতে হেনস্তা করে নেওয়া দরকার।

র‍্যাগিংয়ের অপরাধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা শোকজ পেয়েছেন, তাঁদের কি শাস্তি হবে? এই শাস্তি কি পরবর্তীকালে র‍্যাগিংকে নিরুৎসাহিত করতে পারবে? বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংবিরোধী কোনো তৎপরতা কি আছে? কেউ কি র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে কখনো? নাকি র‍্যাগিংকে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের একটা অংশ বলে মেনে নিয়ে যুগের পর যুগ তা চলার পথ প্রশস্তই করা হচ্ছে কেবল? 
র‍্যাগিং কোনো সুস্থ ঘটনা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন র‍্যাগিংমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু কী উপায়ে সেটা করা সম্ভব, তা নিয়ে ভাববে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। হতে পারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিতভাবেই এ ব্যাপারে করণীয় কী, তা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে পারে। দেখা যাক, র‍্যাগিংয়ের নামে রাত-বিরেতে নবীন শিক্ষাথরীদের হেনস্তা করলেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত