Ajker Patrika

চার জেলা বিদ্যুৎহীন, দুর্ভোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
চার জেলা বিদ্যুৎহীন, দুর্ভোগ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি, পিরোজপুর, শরীয়তপুর ও বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

ঝালকাঠির ৬০ শতাংশ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। শরীয়তপুরে ৪৬ হাজার এবং পিরোজপুরে অন্তত ২৮ হাজার পরিবার গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। এদিকে বরগুনার বেতাগী পৌরসভা বাদে সাতটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে ঝালকাঠি জেলা শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুস সংযোগ চালু করা হলেও বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার বিদ্যুতের লাইন চালু করা হয়েছে।

ঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এখনো বন্ধ রয়েছে জেলার অধিকাংশ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, ১১৫টি টিম কাজ করছে। এ ছাড়া জেলায় ৪৩টি খুঁটি, ১১টি ট্রান্সফরমার, ৩৭০টি মিটার, ৫১টি ইনসুলেটর ভেঙে নষ্ট হয়েছে।

ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম প্রকৌশলী ইমদাদুল ইসলাম জানান, ১১৫টি দল কাজ করে। প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকায় লাইন চালু করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সব এলাকায় লাইন চালু করা হবে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো ৪৬ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলীরা বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে ওই ৪৬ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের লাইন চালু করার আশ্বাস দিলেও সন্ধ্যায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি এসব এলাকায়।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে বড় বড় গাছপালা, বাঁশঝাড় উপড়ে ও ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ লাইন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৩৬টি খুঁটি ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া হেলে পড়েছে ৪৫টি খুঁটি, সঞ্চালন লাইনের ইনসুলেটর ভেঙেছে ৭৪টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ২৮টি, ৪৭০টি মিটার ভেঙেছে, ৩১৫টি স্থানে তার ছিঁড়ে পড়েছে, ১ হাজার ৬৫০টি স্থানে সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ ও বাঁশ ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১২৫টি দল মাঠে কাজ করছে।

জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৬ হাজার ৫০০ গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সখীপুর থানার মানিক বকাউল বলেন, সোমবার সকাল থেকে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ ছাড়া রাত কাটাতে কষ্ট হচ্ছে।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জুলফিকার রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার কাজ করে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন সচল করা সম্ভব হয়েছে। এখনো ৪৬ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আশা করছি আজ (বুধবার) সন্ধ্যার মধ্যে ওই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে পারব।’

সিত্রাংয়ের প্রভাবে পিরোজপুরের সাতটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রয়েছে। মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২১ হাজার গ্রাহক এবং ভান্ডারিয়ায় ৫ হাজার ও ইন্দুরকানীতে ২ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বলে স্বীকার করেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলার ৭টি উপজেলায় ৭৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, ৬৮ ক্রোসাম, ৫২টি ইনসুলেটর, ৩১৮টি মিটার, ১৬টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে।

মাসুদ মিয়া নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার দুই দিন আগেই ইন্দুরকানীর বালিপাড়া এলাকার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর তিন দিন কেটে গেলেও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’

পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবু উমামা মো. মাহাবুবুল হক জানান, ধারণা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় প্রায় ৫০ লাখ ২৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে আজকের (বুধবার) মধ্যেই আমরা ৯০ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ-সেবা দিতে পারব।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎহীন বরগুনার বেতাগী উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার বাসিন্দারা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বেতাগী জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হলে গত সোমবার ভোর থেকে উপজেলার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলে আঘাত হানলে উপজেলার কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় উপজেলাব্যাপী বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার রাতে বেতাগী পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও বুধবার দুপুর পর্যন্ত সাতটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ-সেবা চালু করা যায়নি।

বেতাগী সদর ইউনিয়নের বেইলি ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। রাতে অন্ধকার, আর গরমের কারণে কষ্টের শেষ নেই।

বেতাগী পল্লী বিদ্যুৎ এরিয়া অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বিমল সেন জানান, উপজেলায় বিদ্যুৎ সেবা চালু করতে কর্মীরা রাত-দিন কাজ করছেন। অনেক চেষ্টায় পৌর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হলেও এখনো উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত