Ajker Patrika

সব আছে, তবু শিক্ষার্থী কমছে

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১১: ২৮
সব আছে, তবু শিক্ষার্থী কমছে

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ৮২ নম্বর ছাতারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র ১৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণিতে মাত্র একজন শিক্ষার্থী থাকলেও পঞ্চম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই। অথচ ওই বিদ্যালয়েই দেওয়া হয়েছে অর্ধকোটি টাকার একটি নতুন ভবন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে কালীগ্রাম ইউনিয়নের ছাতারদিঘী গ্রামে অবস্থিত ছাতারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকায় শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এলাকার সচেতন ও গুণী লোকজনদের সহযোগিতায় ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। একসময় ভরপুর শিক্ষার্থী ছিল বিদ্যালয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে পড়ালেখার মান, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে ঝরতে থাকে শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বিদ্যালয় খোলা হলেও পরিচালনা কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পারিবারিক দ্বন্দ্ব গড়ায় বিদ্যালয়ের ওপর। ভেঙে পড়ে পড়ালেখার মান। ফলে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তথ্যমতে, করোনার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার আগে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যায়। তাই বর্তমানে প্রথম শ্রেণিতে পাঁচজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চারজন, তৃতীয় শ্রেণিতে চারজন ও চতুর্থ শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে পঞ্চম শ্রেণির মাত্র তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে সাবই অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়ায় বর্তমানে ওই শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই। বিদ্যালয়ে মাত্র ১৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য রয়েছেন তিনজন শিক্ষক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ৬০ লাখ ৬২ হাজার ১৩৯ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ভবনটি হস্তান্তর করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জহুরুল হক বলেন, তাঁরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠান ভালো শিক্ষা অর্জনের জন্য। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না।

অপর এক অভিভাবক লিটন হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পড়ান না। বারবার পড়ালেখা নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি সভাপতিকে বলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, সভাপতির সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ জন্য সভাপতির কথা গুরুত্ব দেন না প্রধান শিক্ষক। বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে ভালো পড়ালেখার জন্য অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করান তিনি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দা হাসিনা আনোয়ার অভিভাবকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকেরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের বিদ্যালয়ে আনতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আফজাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। আর এই দ্বন্দ্বের কারণে সভাপতি বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছেন না। ফলে অভিভাবকেরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করে দিয়েছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আফজাল হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষকেরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না এবং ভালো পাঠদান করান না। যে কারণে অভিভাবকেরা সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, তিনি অল্প দিন হলো এই উপজেলায় যোগদান করেছেন। এসেই বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে প্রয়োজনে অভিভাবক সমাবেশ করা হবে। তবে কেন শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে, সে বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত