Ajker Patrika

কাপড়ে না হলেও হাঁসে হাসি

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৮: ৪৬
কাপড়ে না হলেও হাঁসে হাসি

জেসমিন নাহার ময়না এক সময় শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। তাতে সফল হননি। তবে করোনাভাইরাসের সময়ে হাঁস পালন করে সফল হলেন তিনি। ১৪ মাসে তিন লাখের বেশি টাকার হাঁস ও ডিম বিক্রি করেছেন।

ময়নার বাড়ি উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের রোশন শিমুলবাড়ী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক সামচুল হকের স্ত্রী। জেসমিন নাহার এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তাঁদের ঘরে তিন মেয়ে সন্তান রয়েছে।

ময়না বিয়ের আগেই ২০০১ সালে রংপুর বি. সি. ই ট্রেনিং সেন্টার ও রংপুর যুব উন্নয়ন থেকে পোলট্রি, ডেইরি, মৎস্য ও বেইজিং হাঁস পালনে প্রশিক্ষণ নেন।

স্বামীর সংসারে অভাব না থাকলেও ছোটখাটো আবদার পূরণে প্রায়ই স্বামীর কাছে হাত পাততে হয় ময়নাকে। এইজন্য তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাগিদ অনুভব করেন। প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা যথাযথ প্রয়োগের সুযোগটি কাজে লাগানোর উপায় খুঁজতে থাকেন। মনস্থির করেন হাঁসের খামার দেবেন। তবে ময়নার একার পক্ষে এই কাজ করা সহজ ছিল না। পুঁজি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নিজের জমানো টাকার সঙ্গে স্বামীর দেওয়া টাকা মিলে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করে বছরের ৫ জানুয়ারি খামার শুরু করেন। ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে ৪২০টি হাঁসের বাচ্চা কিনে পালতে থাকেন। ১৪ মাসে হাঁস ও ডিম বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। এর আগে ময়না কাপড়ের ব্যবসা করলেও সাফল্যের মুখ দেখতে পারেননি।

ময়নার খামারে ১০টি রাজহাঁস, ১৫টি চিনা হাঁস, ১০টি বেইজিং হাঁস, ১৫টি রুপালি হাঁস, ১০০টি নতুন জাতের কাকলী হাঁস রয়েছে। এসব হাঁস প্রতিনিয়ত ডিম দিচ্ছে। এ ছাড়া তিনি হাঁস বিক্রির টাকায় ৪০টি কবুতর ও ৫০০টি লেয়ার মুরগির বাচ্চা কিনে খামার করেছেন। এক মাসের মধ্যে লেয়ার মুরগির ডিম দেওয়াও শুরু করবে। খামারে ভালো মুনাফা হওয়ায় স্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে স্বামী সামচুল হক এগিয়ে এসেছেন। তিনিও হাঁসের খামার দেখাশোনাও করছেন। এ ছাড়া মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের কাজে সহযোগিতা করে। খামারের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে ৫ হাজার টাকা বেতনে একজন নারী শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন।

জেসমিন নাহার ময়না বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল নিজে স্বাবলম্বী হব। প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু কাপড়ের ব্যবসায় সফল হতে না পারলেও হাঁস পালনে সফল হয়েছি। আয়ের টাকায় গরু-ছাগল, মৎস্য, পোলট্রি ও কবুতরের খামার করার পরিকল্পনা করছি। ব্যাংক অথবা কোনো সংস্থা থেকে বড় ধরনের ঋণ সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের খামার করার ইচ্ছে আছে।’

ময়নার স্বামী সামচুল হক বলেন, ‘জেসমিন খুবই মেধাবী মানুষ। তাঁর ইচ্ছা তিনি সফল নারী উদ্যোক্তা হবেন। এখন আমার সংসারে অভাব নেই। এক বছরে খামারের টাকায় দুই বিঘা জমি কিনেছি। স্ত্রীর ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত