Ajker Patrika

পদ্মা সেতু এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি

অজয় দাশগুপ্ত
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১১: ১৫
পদ্মা সেতু এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি

পদ্মা সেতু: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করেছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ছিল উদ্যোক্তা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন আলোচনায় যুক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের। কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘বাস্কেট কেস’-এর বদনাম ছিল বাংলাদেশের। খাদ্যসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যে পরনির্ভর, একটি কালভার্ট নির্মাণেও যে দেশকে হাত বাড়াতে হতো ‘দাতা-উন্নয়ন সহযোগীদের’ কাছে, তাদের এমন অর্জন! নিজেদের অর্থে এত বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন! প্রকৃতই একাত্তরের চেতনা—পদ্মা সেতুর চেতনা!!

কেবল দক্ষিণাঞ্চল নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হিসেবে পরিচিত খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর অর্থনীতির জন্য এ প্রকল্প সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

পদ্মা সেতু চালু হলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে অপরিমেয় চাহিদা সৃষ্টি হবে, তার সঙ্গে মানবসম্পদ জোগানের সামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে হবে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ।

নদ-নদীর অঞ্চল হচ্ছে বরিশাল। আমাদের পরিবেশ রক্ষায় মিঠাপানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু চালু হলে নদ-নদী নিয়মিত ড্রেজিং করার কাজ যেন বন্ধ না হয়ে যায়, বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বরিশালের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে এভাবে, বাংলাদেশে সড়কপথ, রেলপথ, বিমানবন্দর—এসব নির্মাণ ব্যয়বহুল। নদ-নদী প্রকৃতির দান। রাষ্ট্রের দায়িত্ব কেবল এ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। কিন্তু এ জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ কি আছে?

পদ্মা সেতুপথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি। ঢাকা-মাওয়া সড়কপথ নতুন রূপ পেয়েছে। যাঁরা এ পথে নিয়মিত চলাচল করছেন, তাঁদের কাছে এ পথ যেন ইউরোপ-আমেরিকার মহাসড়ক। এ পথ ব্যবহার করে বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলার বাসিন্দারা প্রতিদিন নিজেদের বাড়ি থেকেই ঢাকায় অফিস করতে পারবেন। রেলপথ চালু হলে বরিশাল, খুলনা বা যশোর থেকে দেড়-দুই ঘণ্টাতেই ঢাকা যাওয়া-আসা করা যাবে। এর ফলে রাজধানীর ওপর মানুষের চাপ কমবে।

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত উন্নত বিশ্বের মানের চার লেনের সড়ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিতে এমন মানের সড়ক নির্মাণের অগ্রগতি কত দূর? সেতু চালু হলে প্রতিদিন ২৫ হাজারের মতো গাড়ি চলবে। ফলে চাপ বাড়বে সড়কের ওপর। ঢাকা থেকে এক ঘণ্টাতেই গাড়ি চলে যাবে ভাঙ্গার মোড়। তারপর গাড়ি প্রবেশ করবে দুই লেনের ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা সড়কে। এসব সড়ক চার লেনে পরিণত করার কাজ যখন চলবে, তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে?

পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দর ও পায়রা বন্দর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তুলনায় অনেক কাছে হবে। এমনকি রাজধানী ঢাকার অনেক ব্যবসায়ীও আমদানি-রপ্তানির জন্য চট্টগ্রামের পরিবর্তে মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহী হবেন। রেল ও সড়কপথে বেনাপোল স্থলবন্দর, সাতক্ষীরার স্থলবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবেন। এ জন্য সড়ক ও রেলপথের কাজ জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্মা সেতুর কারণে খুলনা শিল্পাঞ্চল জেগে উঠবে। কিন্তু বরিশাল বিভাগে তো শিল্প-কারখানাই নেই। এ অঞ্চলের উদ্যোক্তা-প্রশাসন-জনপ্রতিনিধি-রাজনীতিকসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়কে কি তাদের নিত্যদিনের এজেন্ডায় পরিণত করবেন?

পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার জন্য সৃষ্টি হবে অনুকূল পরিবেশ। অনেকের কাছে ঢাকা বা আশপাশের চেয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলে কারখানা স্থাপন লাভজনক মনে হবে। সেতুর কারণে শিল্প হবে, সড়ক-হাসপাতাল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-হাউজিং প্রকল্প গ্রহণে এগিয়ে আসবেন উদ্যোক্তারা। পর্যটন সুবিধার প্রসার ঘটবে। এসব কারণে কমে যাবে চাষাবাদের জমি। ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যেতে পারে। পরিবেশের ওপর পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব। সংশ্লিষ্টরা এসব বিবেচনায় রাখছেন নিশ্চয়ই।

লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

এলাকার খবর
Loading...