Ajker Patrika

দর্শনীয় ট্রাম্পেট ক্রিপার

চয়ন বিকাশ ভদ্র
দর্শনীয় ট্রাম্পেট ক্রিপার

ময়মনসিংহ শহর ২৩৫ বছরের পুরোনো। এর উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদের পুরোনো ধারা। এরই তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিচালনা করে। এখানে বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মগুলো সংরক্ষিত আছে।

যে ভবনে সংগ্রহশালা অবস্থিত, ইংরেজ আমলে তা ছিল জনৈক ইংরেজ বার্ডেন সাহেবের বাড়ি। তাঁর কাছ থেকে বড় লাটের কাউন্সিল সদস্য জনৈক নলিনী রঞ্জন সরকার বাড়িটি কিনে নেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারতে চলে যান। এরপর সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ এপ্রিল, বাংলা ১৩৮২ সনের ১ বৈশাখ তারিখে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন। দর্শনীয় ফুল ট্রাম্পেট ক্রিপারের সঙ্গে এই বাড়ির সম্পর্ক আছে।

ট্রাম্পেট ক্রিপার নামের এই ফুল আমাদের দেশে খুব কম দেখা যায়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা ভবনের সামনে অন্য একটি গাছের গায়ে থাকা ট্রাম্পেট ক্রিপার লতা দৃষ্টি কেড়ে নেয় আমার। দেখেই ছবি তুলে নিই ঝটপট। থোকায় থোকায় কমলা বা ইটের মতো লাল রঙের বড় বড় বাহারি ফুল গুচ্ছাকারে ঝুলতে থাকা লতার দিকে তাকালে মন ভরে যায়। একটি গুচ্ছে ২ থেকে ৯টি ফুল থাকে। ট্রাম্পেট একধরনের বাদ্যযন্ত্র। এই ফুলের পাপড়িগুলো যুক্ত হয়ে ট্রাম্পেট আকৃতির হয় বলে এর নাম ট্রাম্পেট ক্রিপার। গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটা শুরু হলেও হেমন্তকাল পর্যন্ত গাছে ফুল থাকে।

ট্রাম্পেট ক্রিপার একটি গুল্মজাতীয়, বহুবর্ষজীবী পাতাঝরা লতানো আরোহী উদ্ভিদ। যেসব লতানো উদ্ভিদে অনেক শাখা-প্রশাখা হয় এবং অন্য কোনো উদ্ভিদ বা অবলম্বন আঁকড়ে ধরে ছড়িয়ে থাকে, তাদের বলা হয় ক্রিপার। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাম্পসিস গ্র্যান্ডিফ্লোরা এবং এটি বিগনোনিয়েসি পরিবারের উদ্ভিদ। রৌদ্রোজ্জ্বল এলাকায় ৪ থেকে ৯ মিটার লম্বা হতে পারে এ উদ্ভিদ। এর পাতা দ্বিপক্ষল যৌগিক।

পাতার কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। উদ্ভিদটি কাষ্ঠল, শক্ত-সমর্থ এবং বড় বৃক্ষকে আঁকড়ে ওপরে ওঠে। বাঁশের মাচা, সিঁড়ি বা বাড়ির গ্রিলে তুলে দিলে সুন্দর দেখায়। শীতকালে পাতা ঝরে যায়। তখন গাছ ছেঁটে দেওয়া ভালো। এদের ফুলের মধু পিঁপড়া ও প্রজাপতির খাদ্য।

হামিংবার্ড এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী এর মধু খেতে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। যখন ফুল ঝরে যায়, তখন লম্বা শিমের মতো ফল হয়। ফল পরিপক্ব হওয়ার পর ফেটে যায় দুই ভাগে এবং দুই ডানাযুক্ত বীজ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পসিস নামটি গ্রিক ক্যাম্পে থেকে নেওয়া। এর অর্থ বাঁকানো। ক্যাম্পসিস শব্দটি দিয়ে ফুলের বাঁকানো পুংকেশরকে বোঝায়। আর গ্র্যান্ডিফ্লোরা শব্দটি ল্যাটিন গ্র্যান্ডিস থেকে এসেছে।

এর অর্থ বড়। ফ্লোরিও শব্দের অর্থ প্রস্ফুটিত।বীজ, শাখাকলম ও দাবাকলম করে ট্রাম্পেট ক্রিপারের চারা তৈরি করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণে এবং রমনা পার্ক নার্সারিতে এই উদ্ভিদ আছে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও আনন্দ মোহন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানেও এই উদ্ভিদ দেখা যায়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত