Ajker Patrika

পায়ের ভরসাতেই জোর কদম

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৫৯
পায়ের ভরসাতেই জোর কদম

মানিক রহমানের দুটি হাতই নেই। দুই পায়ের ডানেরটি অপেক্ষাকৃত খাটো। হাঁটতে গেলেই উঁচু-নিচু ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়। খেতে হয় হোঁচট। কিন্তু এরপরও জোরকদমে চলতে চাইছে সে। পায়ে লিখেই বসেছে পরীক্ষার টেবিলে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে।

মানিকদের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামে। ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। দশম শ্রেণিতে ১২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়। এর আগে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষের দুই সারির মাঝে একটি উঁচু বেঞ্চে বসে পা দিয়ে লিখছে মানিক। পা দিয়ে লিখলেও অনেক শিক্ষার্থীর হাতের লেখার তুলনায় তার লেখা অনেক সুন্দর। পা দিয়েই সে দ্রুততার সাথে লিখছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও তা নিতে নারাজ সে। সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। 

মানিকের বাবার নাম মিজানুর রহমান। তিনি ওষুধ ব্যবসায়ী। মা মরিয়ম বেগম সহকারী অধ্যাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মানিক বড়। সে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হলেও পড়াশোনায় কখনও দমে যায়নি মানিক। শুধু পা দিয়ে লেখাই নয়, পা দিয়ে মোবাইল ও কম্পিউটার ব্রাউজিং এবং ক্যারাম বোর্ডও খেলতে পারে। ভাওয়াইয়া গান ও কৌতুক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী। ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সে। 

নিজের ইচ্ছের কথা জানতে চাইলে মানিক আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ পাক যেন আমাকে সুস্থ রাখেন। আমি লেখাপড়া শেষ করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।’

মানিকের বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘জন্ম থেকেই দুটো হাত না থাকায় আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। এ জন্য আমার স্ত্রী মরিয়ম বেগমের অবদান অনেক বেশি। আশা করি সে এসএসসিতেও ভালো রেজাল্ট করবে।’

ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিব মো. মশিউর রহমান জানান, মানিক রহমান অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় তাকে বাড়তি ২০ মিনিট দেওয়াসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও সে নিতে নারাজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত