Ajker Patrika

শটির পালোতে নারীর হাসি

মো. খায়রুল ইসলাম, গৌরনদী
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২২, ১২: ৪৬
শটির পালোতে নারীর হাসি

গৌরনদীর সরিকল ইউনিয়নের দক্ষিণ সাকোকাঠি গ্রামের জেলেপল্লির নারীরা শটি দিয়ে পালো তৈরি করে আয় করছেন। এতে হাসি ফুটেছে জেলেপল্লির অর্ধশত পরিবারের মুখে। জেলেপল্লির নারীদের দেখে উৎসাহিত হয়ে এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আশপাশের গ্রামগুলোর নারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এককালে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহার হতো ভেষজ উদ্ভিদ শটি। এ গাছের কাণ্ড থেকে তৈরি হয় পালো। এলাকাভেদে শটি, হডি, সাদা হলুদ, বনফুলসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। মূল্যবান এই ভেষজ সমতল জমি কিংবা রাস্তার পাশে পরিচর্যা ছাড়াই জন্মে থাকে। এর থেকে কাণ্ড সংগ্রহ করে তা থেকে পালো তৈরি করা হয়। পালো ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরের রোগীদের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কালের বিবর্তনে আর তেমন চোখে পড়ে না এই শটিগাছ। তবে বরিশালের দক্ষিণ সাকোকাঠি গ্রামের জেলেপল্লির মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস শটির পালো। এখানকার নারীরা এই শটি থেকে পালো তৈরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নতুন করে শটির পালো ব্যবহারে উৎসাহিত করছেন। পল্লির নারীরা বছরে ৭০০-৮০০ কেজি পালো তৈরি ও বিক্রি করছেন।

দক্ষিণ সাকোকাঠি গ্রামের জেলেপল্লির বাসিন্দারা জানান, শটি দিয়ে পালো তৈরির প্রথম পথ দেখান জেলেপল্লির বাসিন্দা মিনতি রানী দাস (৮০)। তিনি প্রথম শটি দিয়ে পালো তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। পরে তাঁর হাত ধরেই একে একে ৫৫ জন নারী বাড়িতে বসেই সংসারের কাজের ফাঁকে শটি দিয়ে পালো তৈরি করে বাড়তি আয় করেছেন।

মিনতি রানী দাস বলেন, ‘ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে শটি দিয়ে পালো বানানো শিখেছি। পালো সব বয়সের মানুষের জন্য একটি ভালো খাবার। গ্রামের ঝি-বউদের পালো বানানো শিখিয়েছি।’

দক্ষিণ সাকোকাঠি গ্রামের মিনতি রানী দাস (৩৫), মিতু রানী দাস (২৫) জানান, অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাসে গ্রামের আনাচে-কানাচে জমির পাশে ঘুরে শটির কাণ্ড সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ছোট টিনের টুকরায় ছিদ্র করে তার ওপরে কন্দগুলো ঘষে কুচি করে তা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় ১২ ঘণ্টা। এরপর ধুয়ে ওপর থেকে ময়লাসহ পানি ফেলে দিলে পালো নিচে ময়দার মতো জমা হয়। একইভাবে পাঁচ-ছয়বার ধুয়ে তা রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। ১৫-২০ কেজি কাঁচা শটির কাণ্ড থেকে এক কেজি খাওয়ার উপযোগী পালো তৈরি হয়ে থাকে। এই পালো চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পিঠা বানাতে ব্যবহার করা যায়। আবার বাচ্চাদের সুজির সঙ্গেও মিশিয়ে দেওয়া যায়।

পালো সরবরাহকারী নিতাই দাস (৬২) বলেন, ‘আমাদের জেলেপল্লিকে এখন পালোপল্লি নামেও অনেকে চেনেন। আমরা প্রতি কেজি পালো ৬০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করি। তিন মাস আমাদের এ পল্লিতে প্রতি ঘরে পালো তৈরি করে রাখি। বছরে পাঁচ-ছয় মাস বসে বিক্রি করি। শীত মৌসুমে শটির পালো তৈরি করে একেকজন নারী মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করেন।’

পল্লির বাসিন্দা গোপাল চন্দ্র বলেন, ‘মুই যা আয়-রোজগার করি, হেইয়া দিয়া পরিবার-পরিজন লইয়া চলতে কষ্ট অইত। কিন্তু স্ত্রী দিপালী রানী শটির পালো বানাইয়া বেইচ্ছা অ্যাহন ভালোই আয় অয়। অ্যাহন আর মোর কোনো কষ্ট নাই।’

স্থানীয় ভেষজ চিকিৎসক সোলায়মান তুহিন বলেন, শটির পালো মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। শরীরের নানা ধরনের ব্যথা ও ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন চর্মরোগের প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। পালো সেবনে পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ও হজমশক্তি বাড়ে।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়্যেদ মুহাম্মাদ আমরুল্লাহ বলেন, ‘মানবদেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে শটির পালোর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত