Ajker Patrika

জরাজীর্ণ আশ্রয়ণের ঘর

মেহেরপুর সংবাদদাতা
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৪৪
জরাজীর্ণ আশ্রয়ণের ঘর

নির্মাণের ২১ বছর পার হলেও সংস্কার হয়নি মেহেরপুরের রঘুনাথপুর গ্রামের আশ্রয়ণের ঘরগুলো। ফুটো হয়েছে ঘরের টিন, ধরেছে মরিকা। বসবাসের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঘরগুলো। চিকিৎসার জন্য নির্মিত একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারটিও বেহাল। যা এখন বন্ধ। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ঘরগুলো সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি দেওয়ার কথা।

জানা গেছে, ভূমিহীনদের স্থায়ী ঠিকানা করে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০০ সালে রঘুনাথপুর গ্রামে সরকার গড়ে তোলে আশ্রয়ণ প্রকল্প। যেখানে ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল ১৬০ টি। বাসিন্দাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য তৈরি করা হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা হয় একটি কমিউনিটি সেন্টার। ১৬০টি পরিবারের বসবাসের কথা থাকলেও আছে চার শতাধিক পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে ঘরগুলো সংস্কার না করায় ঘরের টিন ফুটো হয়ে গেছে। কখনো প্রখর তাপ আবার কখনো বৃষ্টির পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকাতে হয় বাসিন্দাদের। এক কথায়, তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া নেই পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা। একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনো সরকারিকরণ হয়নি। আর কমিউনিটি সেন্টারটি নির্মাণ হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য চালু হলেও তা এখন বন্ধ। ভবনটিও বেহাল।

আশ্রয়ণ বাসিন্দা আব্দুল হামিদ (৬৬) বলেন, ‘থাকার কোনো জায়গা ছিল না। সরকার জায়গা দিয়ে ঘর তৈরি করে দিয়েছিল। ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। তখন ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে এসেছিলাম। ৫ সন্তানের বিয়ে দিয়েছি। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনকে অন্য গ্রামে বিয়ে দিলেও আমার সঙ্গে রয়ে গেছেন এক মেয়ে ও তাঁর স্বামী। আর ছেলে দুটোর বিয়ে দেওয়ার পর থেকে সঙ্গে আছে। এখন আমি কোনো কাজ করতে পারিনি। ঘরগুলো সংস্কার করার মতো অর্থ আমার কাছে নেই। ঘরের টিন ফুটো হয়ে গেছে। রোদের সময় রোদ আর বর্ষার সময় পানি পড়ে। এরপরও কোনো রকমেই পরিবার নিয়ে থাকছি।’

ময়না খাতুন (৫২) বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি এখানেই বসবাস করছি। তিন মেয়ের অন্য গ্রামে বিয়ে দিয়েছি। এখন তিন ছেলে, তাদের বউ ও নাতিপুতি নিয়ে এখানেই বসবাস করছি। এখানে একটি স্কুল আছে, তা এখন পর্যন্ত সরকারি হয়নি। ফলে শিক্ষকেরাও এখানে বেশি দিন থাকতে চান না। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার জন্য পাঠাতে হয় দূরের স্কুলে। এখানে নেই পর্যাপ্ত শৌচাগার।’

স্কুলছাত্রী সুস্মিতা বলে, ‘আমরা দুই ভাইবোন পড়ালেখা করি। আমি ৭ম শ্রেণিতে আর ভাইটা পড়ে ৩য় শ্রেণিতে। স্কুলে শিক্ষক না থাকার কারণে ভাইটাকে মাদ্রাসায় দিয়েছেন মা-বাবা। বাসায় একটু ভালো পরিবেশে পড়ালেখা করব, তার সুযোগও নেই। বৃষ্টির হলে অনেক সময় বই খাতা ভিজে যায়। বাবা-মার স্বল্প আয়ের ওপর ভর করে পড়ালেখা করতে হয়। এভাবে কত দিন পড়ালেখা করতে পারব জানা না।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়রে শিক্ষক মেরি খাতুন বলেন, ‘স্কুলের শুরু থেকেই আমি এখানে শিক্ষকতা করি। এখন পর্যন্ত স্কুলটি সরকারি হয়নি। ফলে বিনা বেতনেই আমাদের পড়াতে হয়। অনেক শিক্ষক আসলেও কিছুদিন পর আবার চলে যান। শুরুতে দেড় শ থেকে দুই শ ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও এখন আছে ৫০ থেকে ৬০ জন। এভাবে বিনা বেতনে আর কত দিন এখানকার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাব। এ ছাড়া চিকিৎসার জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার থাকলেও কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা হাতুড়ি ডাক্তার অথবা ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের সরকারি হাসপাতাল।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান ডাবলু বলেন, ‘আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের দুরবস্থার কথা বারবার জেলা প্রশাসকের কাছে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। স্কুলটিও আজ পর্যন্ত সরকারি করতে পারলাম না। ফলে অনেক প্রতিভাবান ছেলে-মেয়ে এখানে থাকলেও প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঝরে পড়ে। ঘরগুলোও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’

জেলা প্রশাসক ড. মুনছুর আলম খান বলেন, সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দিয়েছিল তাঁদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। তাঁদের উচিত নিজেদের উদ্যোগে ঘরগুলো সংস্কার করে নেওয়ার। এরপরও হয়তো অর্থের অভাবে তাঁরা সংস্কার করতে পারেননি। তবে তাঁদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থার তৈরির চেষ্টা চলছে। তাঁদের এ দুরবস্থা আমি নিজে গিয়েও দেখেছি। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে ঘরগুলো সংস্কারের জন্য চিঠি এবং স্কুলটি সরকারিকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত