Ajker Patrika

গাভি পালনে সচ্ছল আম্বিয়া

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫৪
গাভি পালনে সচ্ছল আম্বিয়া

ছয় বছর ধরে গাভি পালন করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন আম্বিয়া বেগম। তাঁর খামারে এখন ৮টি ফ্রিজিয়ান গাভি ও ৩টি বাছুর। দুধ বিক্রির টাকায় দুই ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। প্রতি মাসের লাভের টাকা বিভিন্ন ব্যবসায়ও খাটাচ্ছেন তিনি।

আম্বিয়ার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কামালপুর গ্রামে। এর আগে অভাবের সংসারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ কষ্টে দিন পার করেন তিনি। স্বামীর সামান্য আয়ে তাঁদের সংসার চলতো না।

জানা যায়, সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চোখে ঘুম ছিল না আম্বিয়ার। পণ করেন যেভাবেই হোক তিনি আয় রোজগারের চেষ্টা করবেন। নিজের সঞ্চয়ের ৪০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় বেসরকারি এনজিও আশা থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৮০ হাজার টাকায় বিদেশি জাতের একটি গরুর বাছুর কেনেন। কিন্তু সেই বাছুর লালন-পালন করতে গিয়ে রোগ ব্যাধিসহ নানা সমস্যায় পড়ে। বাধ্য হয়ে অল্প দামে বিক্রি করে দেন। বাছুর বিক্রির টাকা এবং অন্য আর একটি এনজিও ঠেঙ্গামারা সমবায় সমিতি থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে একটি ফ্রিজিয়ান গাভি কেনেন। এরপর থেকে আম্বিয়া বেগমের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

গাভি পালন করার পাশাপাশি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ফলে গরুর কোনো সমস্যা হলে ছুটে যেতে হয় না চিকিৎসকের কাছে। তিনি নিজেই সবকিছু দেখভাল করেন। গরুকে সকাল-বিকেল গোসল করানো, দুধ দোয়ানো, খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে গরুর যত্ন সবকিছুই নিজেই করেন।

আম্বিয়া জানান, একটি গরু থেকে তাঁর খামারে এখন ৮টি গরু ও ৩টি বাছুর। নিজের বাড়ির ২০ শতাংশ জমির পাশাপাশি আরও ৩০ শতাংশ জমি কিনেছেন। যেখানে চাষ করেছেন বিদেশি ঘাস ও শাকসবজি। ঘাস গরুকে খাওয়ানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করছেন। এখন তাঁর খামারে দুজন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন ৫টি গাভি থেকে দুধ পান ৮০ কেজি। ৪০ টাকা দরে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি কয়েকজন চায়ের দোকানদার এবং পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। প্রতি মাসে দুধ বিক্রি করে তার আয় হয় এক লাখ ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

গরুর ওষুধ, ভুসি, খৈল শ্রমিক ব্যয় সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। প্রতি মাসে টাকা জমিয়ে তিনি জমি কিনেছেন। এ ছাড়া ধান চালের ব্যবসায়ে দুই লাখ টাকা খাটাচ্ছেন। গাভি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ায় ফুলবাড়ীতে আদর্শ খামারি হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আম্বিয়া।

দিনবদলের গল্প এখন উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গেছে। এখন স্থানীয় গ্ৰামসহ আশপাশের গ্ৰামের অনেকেই গাভি পালনের দিকে ঝুঁকছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে তার কাছে পরামর্শ নিতে। আম্বিয়া তাঁদের নানা পরামর্শ ও সাহায্য করছেন। কোনো কাজকে উপেক্ষা না করে কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবে বলে জানান আম্বিয়া।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষ্ণমোহন হালদার বলেন, ‘আম্বিয়া একজন সফল খামারি ও উদ্যোক্তা। নারীদের মধ্যে তিনি সবার জন্য উদাহরণ। আমরা তাঁকে পরামর্শ এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত