Ajker Patrika

সহিংসতা পরিহার করতে হবে

সম্পাদকীয়
সহিংসতা পরিহার করতে হবে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যখন রাজনৈতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা জরুরি, তখন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, হামলার ঘটনায় পরিবেশ সংঘাতময় হয়ে উঠছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কে বলতে পারে!

আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ কাউকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে গায়ের জোরে মোকাবিলা করতে চায়। দুই দলই নিজেকে জনপ্রিয় বলে দাবি করে, কিন্তু জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করে না দলীয় কর্মসূচি গ্রহণের বেলায়। ছোট দলগুলোর মধ্যেও বড় দলের বদঅভ্যাস সংক্রমিত হচ্ছে। যুক্তির জোর নয়, জোরের যুক্তি হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি। আর জোরজবরদস্তির রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা।  

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কিছুতেই তাদের পূর্বনির্ধারিত জনসভা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে রাজি হয়নি। অনেক পানি ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত তারা গোলাপবাগে সমাবেশ করেছিল। কিন্তু সোহরাওয়ার্দীতে যেতে তারা কেন রাজি হয় না, তা কারোরই বোধগম্য নয়।

নয়াপল্টনের মতো রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে সভা-সমাবেশ করলে বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। আওয়ামী 
লীগও যখন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে পাল্টা কর্মসূচির আয়োজন করে, তখন এর আশপাশ দিয়ে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে ওঠে।

ঢাকা মহানগরী এখন দ্রুত বর্ধনশীল একটি শহরে পরিণত হচ্ছে। তিন-চার দশক আগের ঢাকা শহরের সঙ্গে এখনকার ঢাকা শহরের কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখনকার ঢাকার নাগরিক জীবনও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ কেবলই ছুটছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি আমাদের গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থাও ঢাকা শহরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। ঢাকার সঙ্গে সংযোগ এতটাই বেড়েছে যে সারা দেশ থেকে মানুষকে হয় ঢাকায় আসতে হয়, নতুবা ঢাকা থেকে সারা দেশে যেতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে হলে তাদের এই চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা চলবে না।

অথচ বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো।মানুষের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য এখন অনেক সহজ উপযোগী মাধ্যম থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো এখনো আটকে আছে পুরোনো ধারার মিছিল-মিটিং-স্লোগানে। এই রাজনীতি মানুষকে কাছে টানে না, উল্টো তাদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে।

রাজনীতির প্রতি মানুষের বীতশ্রদ্ধ ভাব নানাভাবেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোনো দলের কর্মসূচিতেই এখন আর সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় না। একেবারে দলীয় কর্মী-সমর্থক-ক্যাডার ছাড়া কেউ সভা-সমাবেশে যোগ দেয় না। নির্বাচনের প্রতি মানুষের উৎসাহ থাকলেও এখন সেখানেও ভাটার টান। ঢাকা-১৭ আসনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভোটারদের যে খরা দেখা গেল, তা রীতিমতো উদ্বেগের। এর মধ্যে রাজনৈতিক পরিবেশ যদি সংঘাতময় হয়ে ওঠে, তাহলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। জনদুর্ভোগ তৈরি হয়– এমন কর্মসূচি রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন এড়িয়ে চলতে হবে, তেমনি সহিংসতাও পরিহার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত