Ajker Patrika

ওএমআর ফরমেও ছিল অমিল

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ৪১
ওএমআর ফরমেও ছিল অমিল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডি-১ উপইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার হলে ওএমআর ফরমে দুটি ঘর ভরাট করতে হয় একজন পরীক্ষার্থীকে। এর মধ্যে একটি রোল নম্বর অন্যটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি নম্বর। পরীক্ষার হলের পরিদর্শককে পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ও উপস্থিতির তালিকার সঙ্গে এই দুটি নম্বর যাচাই করে পরিদর্শকের ঘরে সই করতে হয়। পাশাপাশি তাঁকে সই করার আগে ওএমআর ফরমে রোল নম্বরও লিখতে হয়।

পরবর্তীতে এই দুটি নম্বর কম্পিউটার রিড করে ফলাফল তৈরি করে। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও আফসারা তাসনিয়া নামের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনায় ওএমআর ফরমে রোল নম্বর ও অ্যাপ্লিকেশন নম্বর মিল ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলেন, এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোল নম্বর ও অ্যাপ্লিকেশন আইডি নম্বর যদি না মিলে, তাহলে কম্পিউটারে সেই ফরম রিজেক্ট হওয়ার কথা। অথবা দুইটি যে দুজনের তাও কম্পিউটার ধরে ফেলার কথা। কিন্তু এটা কীভাবে কম্পিউটার রিড করল, তা তো বোধগম্য হচ্ছে না।

এদিকে দুই নম্বর দুই রকম হওয়ার পরও ফলাফল কীভাবে এল, তার দায় নিচ্ছেন না কেউ। একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ডি-১ উপইউনিটের কো-অর্ডিনেটর ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘যে মেয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়েও উত্তীর্ণ হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে, এটি তাঁর পরের রোল নম্বরধারী ছেলের ভুলের কারণে হয়েছে। আরিফুল ইসলাম নামের ওই ছেলে রোল নম্বরের ঘরে ৪৯২৫৬২ এর পরিবর্তে ৪৯২৫৬১ পূরণ করেন। কোনো কারণে যিনি পরিদর্শক ছিলেন—তিনি সেটা লক্ষ করেননি।’ তবে অ্যাপ্লিকেশন নম্বর দুই রকম হওয়া সত্ত্বেও কম্পিউটার কীভাবে রিড করল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সেন্ট্রাল প্রোগ্রামিংয়ের ভুল হতে পারে।’

তবে সেন্ট্রাল প্রোগ্রামিংয়ের ভুলের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট ইউনিটের দায়িত্বশীলদের পরীক্ষার্থীদের রোল ও অ্যাপ্লিকেশন আইডি নম্বর দিয়ে দিয়েছি। তাঁরা এটার ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠান। তাঁরা কিসের ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করেছেন, সেটা তাঁরা জানেন।’

এ দিকে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা তদন্তে এখনো পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উল্টো ভুলের পক্ষে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটা ডিজকোয়ালিফাইড ছেলের জন্য এত কথা বলার কী দরকার, বল? একটা শিক্ষার্থী তাঁর রোল নম্বরটা ঠিকমতো লিখতে পারে না, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে টিকবে?’

এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে সহউপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা এটার জন্য মিটিং ডাকব। ওই পরিদর্শককে শোকজ করব।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডি-১ উপ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও উত্তীর্ণের তালিকায় আসে আফসারা তাসনিয়া নামের এক প্রার্থীর ক্রমিক নম্বর। গত বুধবার ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে একটি খুদে বার্তা পাঠানো হলে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর বিকেলে ডি-১ উপইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ৬ নভেম্বর রাতে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেখানে ৪৯২৫৬১ ক্রমিকটি উত্তীর্ণদের তালিকায় আছে। তবে এই ক্রমিক নম্বরধারী প্রার্থী আফসারা তাসনিয়া ওই পরীক্ষায় অংশই নেননি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ, ডি ও ডি-১ ইউনিটের পরীক্ষার জন্য আবেদন করি। তবে এ ও ডি ইউনিটের পরীক্ষা দিলেও একদিন পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় ডি-১ উপইউনিটের পরীক্ষা দিইনি। কিন্তু গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক খুদেবার্তায় জানানো হয় আমি ২০ ও ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ডি-১ উপইউনিটের ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য। পরবর্তীতে আমি মেধা তালিকা চেক করে দেখি আমার রোল সেখানে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত