Ajker Patrika

বছর যায় সেতু আর হয় না

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৮: ২৭
বছর যায় সেতু আর হয় না

‘নির্বাচন আসলে সউগ প্রার্থী এবং তাঁর সমর্থকেরা কয় সামনে সেতু হবে। মাপজোক করি হামাক দেখায়। আশা দেয়। পরে আর দেখা পাওয়া যায় না। ফির নির্বাচন আসলে দেখা হয়। ওই আগের কথায় কয়। বাপো কথা দিলোং, এবার হইবে। দিন যায় বছর যায় সেতু আর হয় না। ২৫ বছর ধরি দেইখলং।’ কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পশ্চিম ফুলমতি খাড়াপাড়া গ্ৰামের বাউল শিল্পী ওমর আলী (৭৬)।

উপজেলার বারোমাসিয়া নদীর পূর্ব ফুলমতি-পশ্চিম ফুলমতি সংযোগ সড়কের খাড়াপাড়া ইনতুর ঘাটে সেতুর অভাবে ২০ গ্রামের ৬০ হাজার মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। নদীর দুই তীরের কয়েক হাজার লোকের বাস। কৃষিনির্ভর এসব গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ বারোমাসিয়া নদীর খাড়াপাড়া এলাকায় ইনতুর ঘাটের বাঁশের সাঁকো। ভাঙাচোরা এই সাঁকো দিয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও সুনজর পড়েনি কর্তৃপক্ষের। এ নদীর পূর্বপাশে রয়েছে বোয়ালমারী, উত্তর শিমুলবাড়ী, কিশামত শিমুলবাড়ীসহ প্রভৃতি গ্রাম।

ওইসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চলাচল বাঁশের সাঁকোয়। বিকল্প পথে ১২ কিলোমিটার ঘুরে বালারহাট বাজারসহ উপজেলা সদরে আসতে হয়। নদীর পশ্চিম তীরে রয়েছে ঝাউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগোরক মণ্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পূর্ব তীরে কিশামত শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডাঙ্গা স্কুল ও কলেজ, বাংলার হাট বিদ্যালয় ও কলেজ। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া ওইসব গ্রামের মানুষের কৃষিপণ্য বিপণন, চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত, মুমূর্ষু রোগী আনা-নেওয়াসহ সবকিছুর ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। এ বছর ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঁশের সাঁকোটি ডুবে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে স্থানীয়রা গ্ৰামের মানুষের বাড়ি বাড়ি থেকে বাঁশ জোগাড় করে নিজেদের প্রচেষ্টায় মেরামত করে কোনো রকমে পারাপার হচ্ছে।

পশ্চিম ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনু মিয়া জানান, গ্রামবাসীর চাঁদার টাকা দিয়ে দুই বছর আগে ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। সেটি এখন নড়বড়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব ফুলমতি ওয়ার্ডের সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ইনতুর ঘাটে একটি সেতু করার জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে অনেকবার আবেদন করেছি। এখনো আবেদন জানাচ্ছি। এখানে একটি সেতু নির্মাণে স্থানীয় লোকজন ২০ বছর ধরে দাবি জানাচ্ছেন।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী ওই এলাকায় সেতুর প্রয়োজনীয়তার দাবিকে সমর্থন করে বলেন, ‘আমি এখনো সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সেতু বাস্তবায়ন হলে একটা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজীব বলেন, প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে সেতু বাস্তবায়ন হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত