ক্লাবের সহায়তায় নতুন জীবন

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের জয়ন্তীবাড়ী গ্রামের দিশারী ক্লাব। অসহায় অনেকেই নতুন জীবনের স্বাদ পেয়েছেন এই ক্লাবের সহায়তায়। করোনার সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা, দরিদ্র পরিবারের অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, শিক্ষা উপকরণ, দরিদ্র শিশুদের মধ্যে পোশাক বিতরণসহ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে ক্লাবটি।

২০১৪ সালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিষয়ক শিক্ষক মো. আবু সাঈদ এবং স্থানীয় যুবক শফিকুল ইসলাম মোট ৭৮ সদস্য নিয়ে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মনিরা আকতার। ‘স্বাস্থ্য ও শান্তি’ বিষয়টিকে সামনে রেখে ক্লাবটির পথচলা শুরু হয়।

গ্রামবাসীর মধ্যে কুসংস্কার, গুজব, বাল্যবিবাহ, মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্লাবটি প্রতিবছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটিকা, গানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর বাইরেও বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছাশ্রমে ড্রেন পরিষ্কারসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করে আসছে।

ওই বছরই চোপিনগর ইউনিয়নের জয়ন্তীবাড়ী গ্রামের দিনমজুর হামেদ আলীর স্ত্রীর প্রথমে বসন্ত দেখা দিলেও পরে জটিল রোগে আক্রান্ত হন। সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব তুলে নেন গ্রামের কিছু যুবক। ওই নারীকে বগুড়া শহরের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলেন তাঁরা। মূলত এই রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই দিশারী ক্লাবের জন্ম হয়।

উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত মিনারা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে মিজানুর রহমান (৬)। ভ্যান দুর্ঘটনায় পুরুষাঙ্গ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অভাবে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। এই ঘটনায় প্রথমে আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিষয়ক শিক্ষক মো. আবু সাঈদ এবং শিক্ষক মনিরা আকতার ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা করেন। তাতেও চিকিৎসা সম্পূর্ণ না হলে দিশারী ক্লাব আমার ছেলের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়। টানা দেড় বছর ঢাকা-বগুড়া চিকিৎসা শেষে আমার ছেলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করছে।’

ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রভাষক মো. আবু সাঈদ আজকের পত্রিকাকে জানান, মিজানুরের মতো অন্তত সাতজনের দায়িত্ব নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে দিশারী ক্লাব। প্রতিবছর কমপক্ষে ৬০ জনকে ক্লাবের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা করা হয়।

দিশারী ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিশারী ক্লাবের মাধ্যমে এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখতে পেরেছি। একই সঙ্গে আমরা অসুস্থদের সাধ্যমতো চিকিৎসা ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। ক্লাবের ৭৮ সদস্যের বেশির ভাগই এখনো শিক্ষার্থী। আমরা হাত খরচের সামান্য টাকা জমিয়ে ক্লাবের মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।’

উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফফর রহমান বলেন, ‘ক্লাবের চ্যাংরারা ভালুই। মধ্যে মধ্যে গরিব মানষক কাপড় দেয়। করোনার মদ্দে ম্যালা জনক খাদ্যও দিচে বারে। লিজেরাই রাস্তাঘাট বান্দে। এক ওক চিকিৎসা করায়। দিশারী ক্লাব ভালুই বারে।’