Ajker Patrika

তালিকা সংশোধনে অনীহা

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১৫: ৩৫
তালিকা সংশোধনে অনীহা

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকার চালের কার্ড) তালিকা সংশোধনে গত বছর জোর নির্দেশনা জারি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিতরণের আগে সংশোধিত তালিকা জমা দেওয়ার কথা থাকলে, তা কার্যকর হয়নি মনিরামপুরে।

অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ চেয়ারম্যান নতুন তালিকা জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পুরোপুরি কার্যকর হয়নি এ উদ্যোগ।

দুস্থ ও অস্বচ্ছ পরিবারের সদস্যদের মাঝে এ চাল বিতরণের কথা থাকলেও মনিরামপুরে শুরু থেকে তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম ধরা পড়ে। তখন উপজেলা কমিটির উদ্যোগে অযোগ্য কিছু নাম কাটা গেলেও বহু সচ্ছল ব্যক্তির নাম থেকে যায় তালিকায়।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘২০১৬ সালে এ সুবিধা চালু হওয়ার পর অনেক উপকারভোগী মারা গেছেন। ওই সময় গরিব থাকলেও এ পাঁচ বছরে আবার অনেকের সচ্ছলতা ফিরেছে। তালিকায় ভুয়া বা ধনীদের নামও থাকতে পারে। এসব নাম বাদ দিয়ে সঠিক তালিকা প্রস্তুতের জন্য গত বছরের মাঝামাঝি আমাদের কাছে নির্দেশনা আসে। সে অনুযায়ী, জুনের ২ তারিখ আমি ইউপি চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়েছি। এরপর আবার ১৪ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানদের দ্বিতীয়বার চিঠি দিই। তারপর ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭ জন চেয়ারম্যান কিছু কার্ড সংশোধনের তালিকা করেছেন। তখন ইউপি নির্বাচন থাকার কারণে অন্য চেয়ারম্যানেরা তখন সময় চেয়েছিলেন।’

ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘গত বছর কাশিমনগর ইউনিয়নের ১ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে ৪৮ টি, ঢাকুরিয়ায় ১ হাজার ৪৯৫ কার্ডের মধ্যে ৫৩ টি, হরিদাসকাটির ১ হাজার ৩৩৬ কার্ডের মধ্যে ৫৮ টি, মনিরামপুর সদরের ১ হাজার কার্ডের মধ্যে ৭৬ টি, ঝাঁপার ১ হাজার ৬০৪ জনের মধ্যে ৫১০ টি, খানপুরের ১ হাজার ৫৭২ কার্ডের মধ্যে ১৭৪টি ও মনোহরপুরের ১ হাজার জনের মধ্যে ৩৮টি কার্ডের সংশোধনের তালিকা জমা দিয়েছেন চেয়ারম্যানেরা। আমরা সেগুলো সংশোধন করে নতুন নাম অন্তর্ভূত করেছি।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও বলেন, ‘বাকি ইউনিয়নগুলোর তালিকা সংশোধনের জন্য গত মাসের মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ারম্যানদের ১৫ দিনের সময় দিয়েছিলেন। এরপর শুধু নেহালপুর ইউনিয়নের ১ হাজার কার্ডের মধ্যে ১৭৪টি সংশোধনীর তালিকা আমরা পেয়েছি। আর কেউ এখনো তালিকা জমা দেননি।’

ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘অনেকে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা কিছু তালিকা সংশোধনী দিতে চেয়েছেন। কাশিমনগরের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ৪৮ জনের নাম সংশোধনী দিলেও নতুন চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান আবারও সংশোধনী দিতে চান। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তিনি ঢালাওভাবে কার্ড বাতিলের তালিকা করছেন। গত মঙ্গলবার সরেজমিন ওই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সবার সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ দিয়েছি।’

জানতে চাইলে কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘এ কথা সঠিক না। কয়েকজন ইউপি সদস্য তালিকা সংশোধন করতে চাননি। উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এসে সবার সঙ্গে কথা বলায় তাঁরা নমনীয় হয়েছেন। আমার ইউনিয়নে ১ হাজার কার্ডের মধ্যে ২০০টি বাদ যেতে পারে। দুই-এক দিনের মধ্যে তালিকা করে উপজেলায় জমা দেব।’

এদিকে সব ইউনিয়নে তালিকা সংশোধন না হলেও মার্চে বিতরণের জন্য খাদ্য গুদাম থেকে চাল তুলছেন পরিবেশকেরা। চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে কেউ কেউ পুরোনো তালিকায় চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

খেদাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম জিন্নাহ বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে বাছাই করে নতুন তালিকা জমা দেব। পুরোনো তালিকায় এ মাসের চাল বিতরণ করতে চাচ্ছি।’

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘সংশোধনী তালিকায় যোগ্য কেউ বাদ পড়লে, তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত