Ajker Patrika

এজাহারে ভুলের দায় ওসিদের, হবে শাস্তি

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
এজাহারে ভুলের দায় ওসিদের, হবে শাস্তি

ফৌজদারি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বা এজাহারে ভুলত্রুটির দায় বর্তাবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি)। ভুল থাকা এজাহারে সই করলে পড়তে হবে শাস্তির মুখে। সম্প্রতি এমন নির্দেশনা ও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ওসিদের। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ত্রুটিপূর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ এজাহার, দুর্বল তদন্ত এবং সাক্ষী গরহাজিরের কারণে মামলায় সাজার হার কম। ভুল এজাহারের কারণে শুরুতে তদন্তও ভুল পথে যাচ্ছে। এর সুবিধা পাচ্ছে আসামিরা। 

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, এই নির্দেশনা নতুন নয়। আগেও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন হয়তো ভুলভ্রান্তি বেশি হচ্ছে। তাই আবার এ বিষয়ে আলোচনা উঠেছে। 

বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও সাজা বিশ্লেষণ করে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আসামিদের কম সাজা হওয়ার পেছনে দুর্বল তদন্তের মতো অপূর্ণাঙ্গ এজাহারও দায়ী। তাই অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করতে ওসিদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ এজাহার দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রেঞ্জ ডিআইজি ও মহানগর পুলিশ কমিশনারদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। 

সূত্র বলেছে, চলতি বছরের প্রথম মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মহানগরের ৫০ থানার ওসিকে এজাহারে ভুলত্রুটি না হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেন। নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো থানার এজাহারে ভুল দেখা গেলে ওসির ব্যাখ্যা তলব করে শাস্তির আওতায় আনা হবে, যা তাঁর চাকরির খতিয়ান বইয়ে প্রতিফলিত হবে। 

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এজাহার হলো একটি অপরাধের প্রাথমিক ধারণা। সেটা প্রাথমিক যাচাই করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ওসি সই করে থাকেন। এটা অসম্পূর্ণ থাকার সুযোগ নেই। তদন্ত ও বিচারের জন্য সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ এজাহার জরুরি। 

বগুড়ার শাজাহানপুরের ম্যাক্স ক্লিনিকে সম্প্রতি অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়া নবজাতকের মৃত্যু এবং পরদিন অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পর গৃহবধূ রাজিয়া সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার এজাহারে আটক ক্লিনিকমালিক কামাল খান (৫২) সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। 

এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিক মামলায় বিস্তারিত আনা যায়নি। তদন্তে সব বের হবে।’ 

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সবই মামলার ফাঁকফোঁকর। এ সব দিয়ে আসামিরা পার পেয়ে যায়। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত বছর নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোতে সাজার হার ২৩.৪০ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা হয় জয়পুরহাটে, ৬৭.৬৮, বরিশাল মহানগর পুলিশ এলাকায় ৫৬.৯৭, খুলনায় ৫১.৬১, রাঙামাটিতে ৫০ শতাংশ। সর্বনিম্ন সাজা হয় গাজীপুরে ৫.৪৯, পিরোজপুরে ৮.৮২, কক্সবাজারে ৯.৫৭, রংপুরে ৯.৬৫ শতাংশ। কম সাজার জন্য দায়ী দুর্বল তদন্ত, সাক্ষী গরহাজির এবং অসম্পূর্ণ এজাহার। 

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মামলার অভিযোগ প্রমাণ করাটা এজাহার ছাড়াও সাক্ষী, প্রসিকিউশন ও আলামতের ওপরও নির্ভর করে। এই তিনের সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে সাজার মাত্রা বাড়বে। ন্যায়বিচারও নিশ্চিত হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির একাধিক থানার ওসি বলেন, থানায় দিনে ২০-২৫টি মামলা হয়। সব মামলার গুরুত্ব এক নয়। কোনো কোনো বাদী অনেক কিছু গোপন করেন। কারও কাছে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এর দায় কেন ওসির ওপর বর্তাবে? আবার মামলা নেওয়ার স্বার্থে অনেক সময় অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়া হয়। এত ভুলত্রুটি ধরলে মামলা নেওয়ার সংখ্যা কমবে। এর ভুক্তভোগী হবে বিচারপ্রার্থীরা।

তবে নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও গুলশান মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক, এজাহারে ভুলত্রুটির দায় ওসিরা এড়াতে পারেন না।

এজাহারের ভুলের কারণে সাজার ক্ষেত্রে খুব সমস্যা না হলেও প্রাথমিকভাবে তদন্তে ঝামেলা হয়। ভুল করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। 
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির বলেন, এজাহারের ভুলত্রুটি মামলার পুরো ক্ষতি করতে পারে না। আংশিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যদি তদন্তে সঠিক বিষয় উঠে আসে, তাহলে এজাহারের ভুলত্রুটি মামলায় সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে এজাহার সঠিক হওয়াটাও জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত